কলকাতা – বৃহস্পতিবার থেকে আর হচ্ছে না বাস ধর্মঘট। বুধবার কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা, পরিবহণ সচিব সৌমিত্র মোহন এবং অন্যান্য প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে প্রায় দেড় ঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠকে বসেন বেসরকারি বাস মালিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হয়, আপাতত বাস ধর্মঘট স্থগিত রাখা হবে। বাস মালিকদের তরফে জানানো হয়েছে, আগামী ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তাঁরা ধর্মঘটের পথে হাঁটবেন না। তবে এই সময়ের মধ্যে তাঁদের একগুচ্ছ দাবি পূরণ না হলে ফের ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা।
গত সোমবার ও মঙ্গলবার একাধিক দফায় বাস মালিক সংগঠন এবং পরিবহণ দপ্তরের মধ্যে বৈঠক হলেও কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি। মঙ্গলবার পরিবহণ সচিব ও বিভিন্ন জেলার ডিসিদের নিয়ে একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠকও ব্যর্থ হয়। এরপরই ২২ মে থেকে ২৪ মে পর্যন্ত তিনদিনের বাস ধর্মঘটের ঘোষণা দেয় পাঁচটি বাস মালিক সংগঠন— জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেট, বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট, ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস-মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন, মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি ও ইন্টার অ্যান্ড ইন্টার রিজিয়ন বাস অ্যাসোসিয়েশন।
মূলত বাস ভাড়া বৃদ্ধি, পুরনো বাসগুলিকে অতিরিক্ত দুই বছর চালানোর অনুমতি এবং পুলিশের তরফে জুলুম বন্ধ করার মতো একাধিক দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এই সংগঠনগুলি। সংগঠনগুলির দাবি, ২০১৮ সালের পর থেকে বাস ভাড়া বাড়েনি। অথচ নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিসের দাম ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী। এই পরিস্থিতিতে পুরনো ভাড়ায় বাস চালানো আর সম্ভব নয়।
বাস ধর্মঘট তুলে নিতে পরিবহণ দপ্তরের তরফে অনুরোধ করা হলেও প্রাথমিকভাবে তাতে কোনও সাড়া মেলেনি। পরপর দু’টি বৈঠক নিষ্ফলা হওয়ার পর মঙ্গলবার রাতে পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী ফোনে যোগাযোগ করেন বাস সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে। তিনি সংগঠনের সমস্যাগুলি জানার চেষ্টা করেন এবং আলোচনার জন্য বুধবার সকালে লালবাজারে আসতে অনুরোধ করেন।
এরপর বুধবার সকাল সাড়ে এগারোটায় বাস মালিক সংগঠন লালবাজারে হাজির হয়। দীর্ঘ বৈঠকের শেষে পরিবহণ সচিব ও কলকাতা পুলিশ কমিশনার বাস মালিকদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দেন। পুলিশের তরফে জানানো হয়, বাস সংগঠন যে অভিযোগগুলি জমা দিয়েছে— বিশেষ করে পুলিশের নির্যাতনের বিষয়গুলি— তা খতিয়ে দেখা হবে। সেইসঙ্গে পরিষেবা চালু রাখার অনুরোধও জানানো হয় সংগঠনের কাছে।এই আশ্বাসের ভিত্তিতেই বাস মালিক সংগঠন ঘোষণা করে, আপাতত ধর্মঘট স্থগিত রাখা হয়েছে। আগামী ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকার তাঁদের দাবিদাওয়া পূরণের প্রক্রিয়া না নিলে তারা ফের বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবেন বলেও স্পষ্ট বার্তা দেন সংগঠনের নেতারা।
