রাণীর জন্য জাতীয় শোকদিবস পালন কাঙ্খিত নয়। নরেন্দ্র মোদির সরকার ঘটা করে একদিনের শোকদিবস পালন করলেন। কার মৃত্যুতে এই শোকদিবস পালন হল! সকলেই বুঝতে পারছেন এমন একজনের মৃত্যুতে এই শোক দিবস যাকে ভারতীয়রা কখনো শ্রদ্ধা করতে পারেন না। বরং ঘৃণা করেন। তিনি ভারতীয়দের কাছে এক অত্যাচারী মহারানি হিসাবে বিবেচিত। তিনি ইংলন্ডের মহারানি ভিক্টোরিয়ার। যার অধীনে ভারতের স্বাধীনতা পদদলিত হয়েছে বহু বছর। বহু মানুষের আপত্তি এখানেই। সর্বোপরি নরেন্দ্র মোদির মত রাষ্ট্রবাদী নেতার কাছে তো একদমই প্রত্যাশিত নয়। বরং অপ্রত্যাশিত।
শোক প্রকাশ করে একটি সরকারি বার্তা পাঠানো পযর্ন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু জাতীয় ছুটি ঘোষনা প্রবীণ ভারতবাসীর কাছে বেশ বেমানান ও অনভিপ্রেত মনে হয়েছে। তার সেই খেদ ফোন করে অনেকেই প্রকাশ করেছেন। বলেছেন মোদিজী এটা কি করলেন। বরং এর উল্টোটা করলেই ভালো হত। তাই এই কলম।
বিগত মিলেনিয়ামে বা সহস্রবর্ষে ইংল্যান্ড বা ইউনাইটেড স্টেট বা গ্রেট ব্রিটেনকে যারা শাসন করেছেন তাদের ৮ জন মহারানি বা সম্রাজ্ঞী মোট ১৯৫ বছর শাসন করেছেন পরাধীন ভারতবর্ষকে। এর মধ্যে ৪ জন সম্রাজ্ঞী ছিলেন অন্যতম। এরা হলেন – প্রথম মেরি: ইংল্যান্ডের প্রথম সম্রাজ্ঞী। প্রথম এলিজাবেথ। যিনি ছিলেন শ্রেষ্ট সম্রাজ্ঞী। ভিক্টোরিয়া। সবচেয়ে জনপ্রিয় ও শক্তিশালী সম্রাজ্ঞী। দ্বিতীয় এলিজাবেথ। সবচেয়ে দীর্ঘকাল শাসনকারী সম্রাজ্ঞী।
মোট ১৭টি সন্তান ছিল, বাকি ৪ জন সম্রাজ্ঞী ছিলেন সন্তানহীন এবং কোন উত্তরাধিকারী রেখে যাননি। আজকের লেখা এদের মধ্যকার বিখ্যাত ৪ জন সম্রাজ্ঞী প্রসঙ্গে।
প্রথম মেরিঃ ইংল্যান্ডের প্রথম সম্রাজ্ঞী।
শাসনকাল ১৫৫৩-১৫৫৮।
তিনি মেরি টিউডর বা ব্লাডি মেরি নামেও পরিচিত। প্রোটেস্ট্যান্টদের নিপীড়নের কারণে তিনি বেশি আলোচিত। ২৮০ জন প্রোটেস্ট্যান্ট ধর্মাবলম্বীদের তিনি পুড়িয়ে হত্যা করেছিলেন বিধায় প্রোটেস্ট্যান্ট প্রতিদ্বন্দ্বীরা নিন্দার্থে তাকে নামকরণ করেছিল ‘ব্লাডি মেরি’। মেরির মৃত্যুর পর তার বোনের মেয়ে প্রথম এলিজাবেথ সিংহাসনে অভিষিক্ত হন।
প্রথম এলিজাবেথঃ ইংল্যান্ডের শ্রেষ্ঠ সম্রাজ্ঞী।
শাসনকাল ১৫৫৮-১৬০৩।
প্রথম এলিজাবেথ ইংল্যান্ডের ইতিহাসে একজন শ্রেষ্ঠ শাসক। ১৬০৩ সালে প্রথম এলিজাবেথ যখন মারা যান তখন সবদিক বিবেচনায় ইংল্যান্ড একটি বৈশ্বিক পরাশক্তিতে পরিণত হয়েছিল তাই তাকে ইংল্যান্ডের শ্রেষ্ঠ সম্রাজ্ঞী বলা হয়।
ভিক্টোরিয়াঃ ইংল্যান্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও শক্তিশালী সম্রাজ্ঞী।
শাসনকাল ১৮৩৭-১৯০১, ৬৩ বছর।
ভিক্টোরিয়ার শাসনকালে যুক্তরাজ্যে শিল্পবিপ্লব, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং সাম্রাজ্যের আয়তন সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নিত হয়। রাণী ভিক্টোরিয়ার শাসনকালে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সাম্রাজ্যে পরিণত হয় এবং বলা হতো ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সূর্য কখনো অস্ত যায়।
আরও পড়ুন – হাই মাদ্রাসা স্কুলের পরিচালন সমিতির নির্বাচন উপলক্ষ্যে নমিনেশন দাখিল তৃণমূলের
দ্বিতীয় এলিজাবেথ। ইংল্যান্ডের সবচেয়ে দীর্ঘকাল শাসনকারী সম্রাজ্ঞী।
শাসনকাল ১৯৫২-২০২২, ৭০ বছর।
দ্বিতীয় এলিজাবেথ পৃথিবীর ইতিহাসে দীর্ঘকাল রাজত্বকারী শাসকদের মধ্যে ২য় এবং ইংল্যান্ডের ইতিহাসে ১ম। তিনি মোট ৭০ বছর ২১৪ দিন সিংহাসনে ছিলেন এবং মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তার ৪ সন্তানের মধ্যে চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ (তৃতীয় চার্লস) সিংহাসনে স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।
এই হল ইংরেজ শাসকদের শাসনকাল ও তাদের স্বরূপ। তারা ভারতকে এতটা শোষণ করে নিজেদের দেশে অর্থাৎ ইংল্যান্ডে এত সম্পদ পাচার করেছিলেন যে লন্ডনে ‘শিল্পবিপ্লব’ ঘটে যায়।
আর এদিকে অধাহারে অনাহারে মারা যেতে থাকে ভারতের মানুষ যারা এই সম্পদের কাঁচামাল উৎপাদন করেছিলেন। ভারতীয়দের স্বভূমে মাথা তোলার যো ছিলনা।ভারতীয়দের ওরা মানুষ বলে মনেই করত না। ‘ডার্টি নেটিভ’ বলে ঘৃণা করা হত। অপমান করত। এত ঘৃণ্য এই ইংরেজ জাতি। যাদের ভারতীয়দের কাছ থেকে প্রাপ্য শুধু ঘৃণা আর ঘৃণা। অত্যাচারী ও অত্যাচারিতের মধ্যে,শোষক ও শোষিতের মধ্যে কখন ও সাম্য হতে পারে না, হয়নি। কিন্তু মোদি সরকার সেটাই করলেন। এখনো সেই বৃটিশরা ভারতের ভালো চায় না। তারা বহুদিনের ভারতের বন্ধু রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি তেল নিতে নিষেধ করেছিল। যদিও ভারত সরকার তা মানেনি। সেই দেশের রাজতন্ত্রের চূড়ামণির মৃত্যু নিয়ে আমাদের শোক নেই। আবার মৃত্যুকে নিয়ে কোন খারাপ শব্দও ব্যবহার করতে রুচিহীন কাজও করতে চাইনা। যেমন চাই না শোক প্রকাশ করতে।