অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে প্রেস বিবৃতি প্রকাশ কেন করল ইডি?

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে প্রেস বিবৃতি প্রকাশ কেন করল ইডি?

ভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে প্রেস বিবৃতি প্রকাশ কেন করল ইডি? এ নিয়ে শনিবার কলকাতা হাই কোর্টে প্রশ্নের মুখে পড়ল কেন্দ্রীয় ওই তদন্তকারী সংস্থা। শনিবার আদালতে অভিষেকের আবেদনের শুনানিতে এ প্রসঙ্গ ওঠে। সেই সূত্রে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ বলেন, ”অভিষেকের নাম করে কেন প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করা হল?তদন্ত বেআইনি ভাবে হলে আইন মেনে আদালত ইডির মামলা খারিজ করে দেবে।” ইডির তরফে বলা হয়, ”অনেক তদন্তে প্রেস বিবৃতি জারি করা হয়। দেশের নানা মামলার তদন্তের কথা প্রায়ই দিন জানানো হয়।” অন্য দিকে, অভিষেকের সংস্থা লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসের কম্পিউটারের ১৬টি ফাইল ডাউনলোড করা নিয়েও আদালতের অসন্তোষের মুখে পড়েছে ইডি।

গত ২১ অগস্ট অভিষেকের সংস্থা লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসে তল্লাশি চালায় ইডি। ওই সংস্থায় অতীতে কাজ করতেন নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় ধৃত ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। ২৩ অগস্ট ওই তল্লাশির কথা এক্স (টুইটার) হ্যান্ডেলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানায় ইডি। তাতে নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ধৃত সুজয়কৃষ্ণের নাম উল্লেখ করা হয়। একই সঙ্গে সেখানে নাম ছিল অভিষেকের। ইডির ওই বিবৃতিতে দাবি করা হয়, লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডসে চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) হিসাবে এক সময়ে চাকরি করেছেন সুজয়কৃষ্ণ। লিপ্‌স অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেডের চিফ এগজ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও) তৃণমূলের সাংসদ অভিষেক। সঙ্গে লেখা হয়েছে, ২০১২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ওই সংস্থার ডিরেক্টর পদে ছিলেন অভিষেক। যা ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি।

আরও পড়ুন:লকআপের দিকে শোভন এগিয়ে গেলেন পার্থের সঙ্গে দেখা হলো কি শোভনের?

এ নিয়ে হইচইয়ের মধ্যেই অভিযোগ ওঠে, অভিষেকের সংস্থার একটি কম্পিউটারে ১৬টি ফাইল ডাউনলোড করেছেন ইডির আধিকারিকেরা। যা নিয়ে অভিযোগ জানান ওই সংস্থারই এক কর্মী। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে লালবাজার। নিয়োগ মামলা থেকে নিষ্কৃতি চেয়ে হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন অভিষেক। সেই মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা হওয়ার কথা। তার আগেই নতুন করে কেন ইডি এই মামলায় আবার সক্রিয় হল, তা জানতে চেয়ে আদালতে আবেদন করেছেন অভিষেক। সেই শুনানিতে শুক্রবার বিচারপতি ঘোষ ফাইলগুলি দেখতে চান। শনিবার আদালত জানিয়েছে, ওই ফাইলগুলির ফরেন্সিক পরীক্ষা করা হবে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই অভিষেকের মামলার রায়দান নির্ভর করবে।

শনিবার মামলার শুনানিতে প্রেস বিবৃতি এবং ফাইলের প্রসঙ্গ তোলেন অভিষেকের আইনজীবী কিশোর দত্ত। তিনি বলেন, ”অভিষেক ইডির মামলা খারিজ চেয়ে হাই কোর্টে আবেদন করেন। গত ১৭ অগস্ট সেই মামলার শুনানি শেষ হয়। ওই মামলায় ২১ অগস্ট লিখিত বক্তব্য জানায় সব পক্ষ। আর সেই দিনই বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ লিপ্‌‍স অ্যান্ড বাউন্ডস কোম্পানির আলিপুর অফিসে যায় ইডি। তারা (ইডির দল) পরের দিন সকালে সেখান থেকে বার হয়।

ওই সময় সংস্থার অফিসে এক কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ”ইডি একটি কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে গিয়েছে। একটি কম্পিউটারে ১৬টি এক্সেল ফাইল ডাউনলোড করা হয়েছে। পঞ্চনামা তৈরির পরেও ইডি সেখানে ছিল।” গত ২৪ অগস্ট ফাইল ডাউনলোড নিয়ে লালবাজার সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ওই অফিসের এক কর্মী। সংবাদমাধ্যমে খবর হওয়ার পরে ২৬ অগস্ট ফাইল ডাউনলোডের বিষয়টি স্বীকার করে নেয় ইডি। এ কথা আদালতে জানান অভিষেকের আইনজীবী। ভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে প্রেস বিবৃতি প্রকাশ কেন করল ইডি?

দু’পক্ষের সওয়াল জবাব শুনে বিচারপতি ঘোষ বলেন, ”এই ১৬টি ফাইলের জন্য মামলায় মোড় তৈরি হয়েছে। আবার অভিষেকের আবেদনটি গ্ৰহণযোগ্য হবে কি না তা-ও দেখা প্রয়োজন। তাই ফাইলগুলি আগে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ দিয়ে যাচাই করা হবে। এই আবেদনের ফলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিষেকের মামলার রায় ঘোষণাও পিছিয়ে যেতে পারে।” তিনি আরও বলেন, ”জানি এই মামলা এখানেই থামবে না। এই কোর্টই শেষ না। কিন্তু ওই ফাইলগুলিতে কী রয়েছে যে এত চিন্তা করছেন!”

 

 

en.wikipedia .org