পুর্ব মেদিনীপুর – সোমবার দুপুরে দীঘায় নেমে সরাসরি জগন্নাথ মন্দিরে পৌঁছে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরীর জগন্নাথ সেবক ও ইস্কনের সাধুদের সঙ্গে নিয়ে মন্দির চত্বর ঘুরে দেখেন। সেই সময় মন্ত্রোচ্চারণের সঙ্গে হোমযজ্ঞ চলছিল। মুখ্যমন্ত্রী সেই যজ্ঞবেদির চারপাশ ঘুরে দেখেন। তিনি মন্দিরের স্থাপত্যের প্রশংসা করেন।তিনি বলেন, দীঘায় সমুদ্র রয়েছে। এখানে প্রচুর মানুষ বেড়াতে আসেন। এখানকার জগন্নাথ মন্দির এবার থেকে পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে। এই মন্দিরে আধ্যাত্মবাদ ও সম্প্রীতির মিলন হয়েছে।
বাস্তবেই দীঘা শুধু আর পর্যটন কেন্দ্র নয়, ভারতের মানচিত্রে এক নতুন তীর্থস্থান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। এই মন্দিরের মধ্য দিয়ে উৎকল(ওড়িশা) এবং বঙ্গের সামাজিক, সংস্কৃতির সমন্বয়রের প্রসার ঘটবে। অনেকেই বলছেন, স্বাধীনতার পর এমন স্থাপত্যের নজির এরাজ্যে বিরল। জগন্নাথ মন্দিরের মূল প্রবেশদ্বারে তিনটি অংশ রয়েছে। প্রত্যেকটির মাথা পিরামিডের মতো। মাঝের প্রবেশদ্বারের উচ্চতা ১০মিটার। বাকি দু’টিরকে উচ্চতা সাড়ে আট মিটার। মন্দিরে মোট ১২টি স্তম্ভ রয়েছে। প্রত্যেকটিতে ৫৬টি করে প্রদীপ জ্বালানো হবে। এভাবে জগন্নাথ মন্দিরে মোট ৬৭২টি প্রদীপ জ্বলবে। সমগ্র মন্দিরের মোট ন’টি অংশ। গোপুরকম(সিংহ দুয়ার), পদ্মকুণ্ড, ভোগমণ্ডপ, নাটমন্দির, জগমোহন, ভীমানা ও গোপুরম(ব্যাঘ্রদুয়ার) প্রভৃতি রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই ঘোষণা করেছিলেন, পুরীর মতোই দীঘার জগন্নাথ মন্দিরে রোজ পতাকা পরিবর্তন করা হবে। পুরীর মন্দিরে যাঁরা রোজ পতাকা খোলা ও লাগানোর কাজ করেন সেইসব পরিবার থেকেই একটি দল এসেছে। মূল মন্দিরের চূড়ায় উঠতে গেলে তিনটি স্তরে মোট ২৩৬টি সিঁড়ির ধাপ পেরতে হবে। প্রথম স্তরে রয়েছে ১০২টি সিঁড়ি। দ্বিতীয়তে ৬৫টি এবং তৃতীয় স্তরে রয়েছে আরও ৬৯টি সিঁড়ির ধাপ। ভীমানার ভিতরেই রয়েছে প্রভু জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। এই গর্ভগৃহের উচ্চতা ৬৫মিটার। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের সমান উচ্চতায় তৈরি হয়েছে। এর ভিতরেই রয়েছে রত্নবেদি। মন্দিরের সামনে মহাযজ্ঞের আয়োজন করা হয়েছে। আজ, মঙ্গলবার সকাল থেকে এখানে মহাযজ্ঞ শুরু হবে। বুধবার জগন্নাথ প্রভুর প্রাণপ্রতিষ্ঠা হবে। সেই মুহূর্তের অপেক্ষায় রাজ্যবাসী।
উদ্বোধন উপলক্ষ্যে গোটা মন্দির প্রাঙ্গণ সহ দীঘা আলোয় সাজানো হয়েছে। সন্ধ্যার পর আলোর রোশনাইয়ে ভাসছে গোটা দীঘা। মাঙ্গলিক সানাইয়ের সুর ভেসে যাচ্ছে অনেক দূর পর্যন্ত। নিউ দীঘা এবং ওল্ড দীঘা পর্যন্ত বাঁধা হয়েছে মাইক। দীঘা বাইপাস থেকেই ১১৬বি জাতীয় সড়কের উপর ট্রাফিক ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। উদয়পুরে আন্তঃরাজ্য সীমানায় ২৪ঘণ্টা নাকা পয়েন্ট করে তিনটি শিফটে পুলিস মোতায়েন থাকছে।
