পৃথিবীর দুর্গম ও ভয়ংকর বেশ কিছু পর্যটনস্থল সম্পর্কে জেনে নিন । ঘুরতে আমরা কে না ভালোবাসি। সুযোগ পেলেই ছুটে বেড়াতে বেড়িয়ে পড়ি বিশ্বের নানা প্রান্তে। এই পৃথিবীতে এমনও দুর্গম ও ভয়ংকর কিছু পর্যটন স্থান রয়েছে, যা ভ্রমণপিপাসুদের মনে রোমাঞ্চের সৃষ্টি করে। ভয়ংকর সুন্দর বৈশিষ্ট্যের কারণে এসব স্থান গুলোতে মিশে আছে মৃত্যুর আশংকা। তবে ভ্রমন পিপাসুদের আটকাতে পারে না মৃত্যুর ভয়ও। মরণের ভয়কে উপেক্ষা করেই অনেক পর্যটক নিছক রোমাঞ্চের নেশায় ছুটে যায় সেসব স্থানে। কেউ কেউ আবার মৃত্যুর আগে হলেও একবার ঘুরে আসতে চান সেসবক স্থান।
ভ্যালি অফ ডেথ: রাশিয়ার কামচাটকা উপদ্বীপের পূর্বাংশে রয়েছে কেহিন্নাইক আগ্নেয়গিরি। এর ঠিক পাদদেশেই রয়েছে মৃত্যুর উপত্যকা। কোলাহল যাদের কাছে বিরক্তের তাদের জন্য রাশিয়ার কামচাটকায় অবস্থিত এই ভ্যালি অব ডেথ তাদের জন্য উপযুক্ত একটি স্থান। তবে এখানকার আগ্নেয়গিরির বিষাক্ত গ্যাসের বাতাস আপনাকে দ্রুতই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে। ক্ষাণিক সময় পরই আপনার মাথা ঘোরানো শুরু হবে,অসুস্থ হয়ে পড়বেন আপনি। গবেষণায় দেখা যায়, বিষাক্ত গ্যাসের উচ্চ ঘনত্বের কারণেই মূলত এখানকার প্রাণী ও পাখিরা মারা যায়। প্রধানত হাইড্রোজেন সালফাইড, কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো গ্যাসই এখানকার বাতাসকে বিষাক্ত করে তুলেছে। এতোটা বিপদজনক হলেও এটির স্থির চিত্র আপনাকে দারুণ ভাবে আকর্ষিত করবে।
ডেথ ভ্যালি: আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত ডেথ ভ্যালি খুবই পরিচিত একটি পর্যটন স্থান। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তপ্ত স্থান। এর তাপমাত্রা মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমিকেও হার মানিয়ে দেয়। ১৯১৩ সালের জুলাই মাসে ১৩৪ ডিগ্রি ফারেনহাই বা ৫৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নথিভুক্ত করা হয়েছিলো। তারপর ১৯৭২ সালে এখানকার ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় প্রায় ২০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। পৃথিবীর অন্যতম রহস্যময় এই স্থানটি সৌন্দর্যে ভরপুর। এত কিছুর পরও প্রতিবছর প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ ডেথ ভ্যালিকে দেখতে যান। ডেথ ভ্যালির নামকরণেও রয়েছে এক ইতিহাস। কথিত আছে, ১৮৪৯ সালে একদল স্বর্ণ সন্ধানী ডেথ ভ্যালির মরুভূমি পার হয়ে ক্যালিফোর্নিয়ায় স্বর্ণের সন্ধানে যেতে চেয়েছিল। পথিমধ্যে প্রচন্ড গরমে এক পথিকের মৃত্যু ঘটে আর বাকিরা মৃত্যুর খুব কাছে গিয়েও জীবিত ফিরে আসতে সক্ষম হয়। তাদের মধ্যে একজন মৃত্যুর দোরগোড়া হতে ফিরে আসার সময় পিছে তাকিয়ে বলেছিলেন, ‘বিদায়, মৃত্যু উপত্যকা (ডেথ ভ্যালি)।’
আর ও পড়ুন করোনায় আক্রান্ত টলিউড অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
দ্য দানাকালি ডেজার্ট: বিপদজনক এই পর্যটন স্থানটি ইথিওপিয়ার সীমান্ত ঘেষে অবস্থিত। এটি ভয়ংকর পর্যকটন স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম। পৃথিবীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রার স্থানগুলোর মধ্যেও এটি একটি । মরুভূমির মাঝে রয়েছে লাভার হ্রদ। সেই সাথে বেরিয়ে আসে বিষাক্ত গ্যাস। এখানকার তাপমাত্রা প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। বিশাল মরুভূমির মাঝে অনেক জায়গা থেকে ক্রমাগত লাভা নির্গত হয়। এই বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে ছড়িয়ে পুরো এলাকার বাতাস ভারী করে তুলে। ভূতাত্ত্বিক এমন প্রতিকূল পরিবেশের এটিকে অনেকেই ‘এলিয়েনদের স্থান’ বলে থাকেন। এতো সব বিপদের হাতছানি থাকলেও দানাকালি মরুভূমির সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবেই। আর তাতেই পর্যটকের অভাব নেই এখানে। আর ফটোগ্রাফির নেশা থাকলে এখানে আসতে বাধ্য হবেন। তবে এমন স্থানে আপনি একা নয় সাথে অভিজ্ঞ গাইড নিয়ে যেতেই হবে, কেননা যদি আপনি ভয়ংকর সুন্দর এই মরুভূমিকে উপভোগ করতে চান অভিজ্ঞ গাইড ছাড়া সেখানে আপনাকে পা রাখতে দেবে না ইথিওপিয়ার সরকার।
বলিভিয়ার মাদিদি জাতীয় উদ্যান: ভ্রমণপিপাসু মানুষগুলোকে মুহুর্তেই আকৃষ্টি করতে সক্ষম বলিভিয়ায় অবস্থিত এ উদ্যান । এটি দেখার পর মনে হবে, সারাজীবন এখানেই কাটিয়ে দিতে। সত্যিকার অর্থে পৃথিবীতে ভয়ংকরস্থান গুলোর মধ্যে এটি একটি স্থান। কারণ পৃথিবীর ভয়ংকর এবং বিষাক্ত সব উদ্ভিদের দেখা মিলবে এখানে। যাদের সামান্য স্পর্শেই মানবদেহে চুলকানি থেকে শ্বাসকষ্ট পর্যন্ত শুরু হয়ে যায়। এমনকি কিছু উদ্ভিদের সংস্পর্শে এলে মৃত্যুও ঘটতে পারে।
ব্রাজিলের স্নেক আইল্যান্ড: এটি পৃথিবীর অন্যতম বিপজ্জনক একটি স্থান। ব্রাজিলের এই দ্বীপকে সাপেদের স্বর্গরাজ্য বললেও কোন অংশে ভুল হবে না। এক গবেষণায় দেখা জানা যায়, এখানকার প্রতি বর্গ মিটারে গড়ে ৫টি করে সাপ বাস করে। পৃথিবীর সব বিষধর সাপের বসবাস এখানে। রহস্যজনক এ স্থানটিকে নিয়ে রয়েছে নানান গল্পও। বলা হয়ে থাকে এখানে এমন কিছু সাপ রয়েছে যা এর আগে পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায়নি। স্থানীয় লোকজনের কাছে এ স্থান কেবলই এক মৃত্যুপুরী। স্থানীয় অনেকেই এখানে পা রাখবার চেষ্টা করেছিলো, কিন্তু তার শেষ পরিণতি হয়েছিল মৃত্যু।