প্রতিষ্ঠানিক প্রসবের ওপর জোর দিচ্ছে রাজ্য সরকার। ঠিক সেই সময় উল্টো ছবি মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। প্রসব যন্ত্রনা নিয়ে ভর্তি হতে আসা রোগীকে হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে। মালদা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ফিরিয়ে দেওয়ার কয়েক ঘন্টা পরেই কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় মহিলা। এই ঘটনায় মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের উদাসীনতাকে দায়ী করেছে পরিবারের লোক ও আশাকর্মীরা। এদিকে ঘটনার সত্যত্বাও স্বীকার করে নিয়েছে মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ।
মালদা ইংরেজবাজার শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দুরে নরহাট্টা গ্রামপঞ্চায়েতের বুধিয়া গ্রামটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত। সেখানেই পরিবার নিয়ে বসবাস করেন আজা মিয়াঁ পেশায় ভিনরাজ্যে কাজ করেন। তার স্ত্রী সকিনাকে রবিবার বিকেলবেলা মালদা মেডিকেল কলেজ নিয়ে যান তাঁর ননদ ফিরোজা বিবি। সে জানায়, তীব্র প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে সকিনাকে মালদা মেডিক্যালে নিয়ে যান। সঙ্গে ছিলেন এলাকার আশাকর্মী সাবিরা মেহেবুবা l ঘণ্টাখানেক পর চিকিৎসকরা তাঁকে পরীক্ষা করে বলেন, প্রসব হতে দেরি রয়েছে। তাই সকিনাকে ছুটি দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকরদের তিনি বার বার জানান, সকিনার বাচ্চা হয়ে যাবে। তাঁকে যেন এখনই হাসপাতাল থেকে ছুটি না দেওয়া হয়। চিকিৎসকরা তাঁর কোনও কথাই শুনেনি। শুধু তাই নয়, এক নার্স এনিয়ে তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেন।রাত্রিবেলা সকিনার প্রসব যন্ত্রণা আরও বেড়ে যায়। অবশেষে সন্ধে নাগাদ এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন সকিনা। যেখানে সরকার হাসপাতালে প্রসব করানোর জন্য প্রচার চালাচ্ছে, সেখানে হাসপাতাল থেকেই প্রসব না করিয়ে সকিনাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনা তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না।শুধু সকিনাই নয়, চিকিৎসকদের এমন ভূমিকায় তাঁদের এলাকায় আরও অনেক মহিলা বাড়িতেই প্রসব করেছেন।
এই ঘটনায় সরাসরি চিকিৎসকদের দায়ী করেছেন এলাকার আশাকর্মী সাবিরা মেহবুবা। তিনি বলেন, এই ঘটনার সম্পূর্ণ দায় মেডিকেলের চিকিৎসকদের। এই সব চিকিৎসকদের জন্যই জেলায় ১০০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব হচ্ছে না।
গোটা ঘটনাকে দুর্ভাগ্যজনক আখ্যা দিয়েছেন মালদা মেডিকেলের এমএসভিপি অমিত দাঁ। তিনি বলেন, এমন ঘটনা কখনই মেনে নেওয়া যায় না। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে বলে তাঁর কাছে খবর এসেছে। এদিনই তিনি একটি নির্দেশিকা জারি করে প্রসূতি বিভাগের সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও প্রসূতি হাসপাতলে এসে তাঁর প্রসব না হলেও ৭২ ঘণ্টা তাঁকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। তার পর প্রয়োজনে তাঁকে বাড়িতে ফেরানো যেতে পারে। মেডিকেলের হাতে গোনা কয়েকজন চিকিৎসকের জন্য এমন ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন। গোটা বিষয় নিয়ে তিনি প্রসূতি বিভাগের চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। কেন ওই প্রসূতিকে ছুটি দেওয়া হয়েছিল, সেটাও জানতে চাইবেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে হাসপাতালের বৈঠকেও। এমন ঘটনা,যাতে আর না ঘটে, তার জন্য তিনি প্রসূতি বিভাগের প্রধানকে মাথায় রেখে একটি কমিটি গঠন করতে বলেছেন । অমিতবাবু আরও জানান, এই হাসপাতালে প্রতি মাসে ১৫০০-১৬০০ প্রসুতির প্রসব হয়। তার মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ প্রসূতির অস্ত্রোপচার হয়। তবে এমন ঘটনার কথা এর আগেও তাঁর কানে এসেছে। তিনি সকিনা বিবির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন।