ব্রিটিশরা যখন পয়সা গুনছে, তখন ইউক্রেনীয়রা লাশ গুনছে, ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমি জেলেনস্কির স্ত্রী দেশটির ফার্স্ট লেডি ওলেনা জেলেনস্কা বলেছেন, ব্রিটিশরা যখন পয়সা গুনছে, তখন ইউক্রেনীয়রা লাশ গুনছে। রাজধানী কিয়েভে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের উত্তরে ওলেনা এ কথা বলেন। সাক্ষাৎকারে বিবিসির সাংবাদিক লরা কুয়েনসবার্গকে ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের কঠিন অর্থনৈতিক প্রভাব মিত্রদেশগুলোর ওপর পড়েছে। তবে যুদ্ধে মানবিক ক্ষতির বিষয়টিকেই বেশি প্রকাশ করা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
আরও পড়ুন – বেহাল রাস্তা সারাইয়ের দাবিতে এশিয়ান হাইওয়ে অবরোধ স্থানীয়দের
তিনি বলেন, ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থন শক্তিশালী হলে সংকট আরও কম হবে। রোববার সম্প্রচারিত ওই সাক্ষাৎকারে ওলেনাকে বলা হয়, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে বিশ্বব্যাপী গ্যাস ও তেলের দাম বেড়েছে। ব্রিটিশদের জ্বালানির জন্য বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। তাদের উদ্দেশে তিনি কিছু বলতে চান কি না? এর উত্তরে ওলেনা বলেন, আমি বুঝতে পারছি, পরিস্থিতি খুবই কঠিন। তবে করোনাভাইরাসের মহামারির সময়টা মনে করুন। এখনো মহামারি কাটেনি। মহামারির সময় সব জায়গায় দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। ইউক্রেনেও বেড়েছে। ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি আরও বলেন, ইউক্রেনে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে। সেই সঙ্গে যুদ্ধে আমাদের দেশের মানুষের প্রাণ যাচ্ছে।
তিনি ব্রিটিশদের উদ্দেশে আরও বলেন, যখন তোমরা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অথবা তোমাদের পকেটে থাকা পয়সা গুনছ, তখন আমরাও একই কাজ করছি। সেই সঙ্গে আবার হতাহত মানুষের সংখ্যাও গুনছি। গত মাসে কিয়েভ সফরে এসে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, ইউরোপে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে। তবে রাশিয়ার হামলা প্রতিহত করতে ইউক্রেনের সঙ্গে থাকতে হবে। যুক্তরাজ্যে মুদ্রাস্ফীতির হার এ বছর ৪২ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছানোর পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। অর্থনীতি এক বছরেরও বেশি সময় ধরে সংকুচিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্যাংক অব ইংল্যান্ড বলেছে, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও নিম্ন প্রবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হলো জ্বালানির দাম বেড়ে যাওয়া।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে দাম বেড়েছে। এ পরিস্থিতির জন্য জ্বালানির অন্যতম সরবরাহকারী দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে ইউরোপের দেশগুলো। তাদের অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়া হিসেবে রাশিয়া গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। ওলেনা জেলেনস্কা বিবিসিকে বলেন, ইউক্রেনের বাইরের লোকদের পক্ষে যুদ্ধের প্রভাব বোঝা কঠিন। তবে যুদ্ধের কারণে মানবিক সংকটের বিষয়টি বিশ্বের কাছে তুলে ধরা গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে, গত মার্চে ইউক্রেনীয় একটি ছেলের কাঁদতে কাঁদতে পোল্যান্ড সীমান্ত পার হওয়ার ঘটনার কথা উল্লেখ করেন জেলেনস্কা। তিনি বলেন, আমি মনে করি, যে মা-বাবা এই ভিডিও দেখেছেন, তারা কেউ চোখের জল সামলাতে পারবেন না।
আমি সব সময় নিজেকে ওই জায়গায় কল্পনা করি। আমি মনে করি, বিশ্বের সব মানুষেরই আমার মতো করে ভাবা উচিত। ওলেনা জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘আমাদের এসব গল্প বলে যেতে হবে। এসব গল্প দেখাতে হবে। কারণ, এগুলোও যুদ্ধ। কতগুলো বোমা পড়েছে, সেটা বিষয় নয়, কত অর্থ খরচ হয়েছে, সেটা বিষয় নয়, বিষয় হলো মানবিক গল্প। আমাদের চারপাশে এ রকম হাজারো মানবিক গল্প রয়েছে। এছাড়াও ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি কিছু ব্যক্তিগত কথাও বলেছেন ওই সাক্ষাৎকারে। তিনি জানান,যুদ্ধে ব্যস্ততার কারনে স্বামীর সঙ্গে তার খুবই কম দেখা হয়; তবে তারা প্রতিদিন কথা বলেন।