মিয়ানমারে সামরিকপন্থী ভয়ঙ্কর ডেথ স্কোয়াড। এক মাস আগে মিয়ানমারের মধ্যঞ্চলীয় শহর মান্দালেতে রাস্তার পাশে এক ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়। ভুক্তভোগীকে একাধিকবার ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল এবং তার হাত পিঠের দিকে বাঁধা ছিল। ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) সদস্য জাও গি-এর গলায় খুনিরা একটি কার্ড রেখেছিল, যেখানে লাল বৃত্তে দুই তলোয়ারধারী এক যোদ্ধাকে চিত্রিত করা হয়েছে। বৃত্তটি থওয়ে থাউক আপওয়ে নামক মিয়ানমারে আতঙ্কিত একটি নতুন সামরিক-পন্থী ডেথ স্কোয়াডের প্রতীক, যা মোটামুটিভাবে রক্ত-পানকারী গ্রুপ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
আরও পড়ুন – পান চাষিদের পাশে দাঁড়াতে এবার উদ্যোগ নিল হাওড়া জেলা পরিষদ
এনএলডির বিবৃতি অনুসারে, ২১ এপ্রিল থেকে ৫ মে এর মধ্যে থাওয়ে থাউক বা অনুরূপ গোষ্ঠীর হাতে নিহত হওয়ার আগে জাও গি ১৪ জন দলীয় সদস্য বা সমর্থকদের মধ্যে ছিলেন। এরপর থেকেই সহিংসতা অব্যাহত আছে। নিরাপত্তার কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মান্দালেভিত্তিক এক কর্মী বলেন, ‘যারা প্রকাশ্যে গত সাধারণ নির্বাচনের আগে এনএলডির পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছিলেন, তারা সবাই এখন উদ্বেগ ও ভয়ের সাথে বসবাস করছেন। কারণ, তারা যে কোনো সময় সহিংসতার শিকার হতে পারেন।’
২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে এনএলডি ব্যাপক বিজয় লাভ করে। কিন্তু সামরিক বাহিনী ফলাফলকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে এবং পরে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে। যখন দেশটি ব্যাপক বিক্ষোভে ফেটে পড়ে, তখন নতুন শাসকরা শত শত মানুষকে হত্যা করে। নিজেদেরকে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল দাবি করা সামরিক নেতৃত্ব দেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ জাহির করতে লড়াই করছে। তারা দেশটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের ওপর দমনপীড়ন অব্যহত রেখেছে। চলমান এ পরিস্থিতিতে সৃষ্ট বিশৃঙ্খলার মধ্যে সামরিক বাহিনীর ছায়া-সমর্থক বেশ কয়েকটি গোষ্ঠীর উত্থান হতে শুরু করেছে; যেমন- থওয়ে থাউক এবং আধাসামরিক মিলিশিয়ারা, যা পিউসাউটি নামে পরিচিত।
মান্দালয়ের কর্মী বলেছিলেন যে, থওয়ে থাউককে এনএলডির অধীনে নিষিদ্ধ করা অতি-জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ কট্টরপন্থী গোষ্ঠী মা বা থা এবং কুখ্যাত মুসলিম বিরোধী সন্ন্যাসী উইরাথুর সাথে যুক্ত বলে মনে করা হয়। তিনি বলেন, এটি ‘অন্যান্য ধর্মেও, বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ।’ মা বা থা-এর একজন সদস্য উইরাথু ছিলেন মুসলিম রোহিঙ্গাদের উপর সেনাবাহিনীর সহিংস দমন-পীড়নের অন্যতম সোচ্চার সমর্থক, যেটিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং কিছু মানবাধিকার গোষ্ঠীর দ্বারা গণহত্যা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। উইরাথুকে ২০২০ সালের নির্বাচনের কিছুদিন আগে রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, কিন্তু সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।