সাইরেনের আওয়াজ কানে বাজছে, বাঁচানোর আকুতি, ইউক্রেনে আটকে বাংলার পড়ুয়ারা। দীর্ঘ ভোগান্তি পোহানোর পর প্রাণ হাতে করে কেউ বাড়ি ফিরেছেন কেউ এখনো আটকে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে- প্রত্যেকেই জানাচ্ছেন কিভাবে অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্যে তাদের দিন কাটাতে হয়েছিল বা এখনও অনেকে কাটাতে হচ্ছে প্রত্যেকের অভিযোগ যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশ থেকে যত দ্রুত ভারতীয়দের উদ্ধার করার কথা ছিল তার কিছুই করেনি বিদেশমন্ত্রক এমনকি অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে ন্যূনতম সহায়তা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি ফোন করা হলে কেউ ফোন তোলেননি বা দায়সারা উত্তর দিয়ে ফোন ছেড়ে দিয়েছেন।
প্রত্যেকেরই প্রশ্ন অন্য দেশে গিয়ে বিপদে পড়লে ভরসা বলতে থাকে দূতাবাস সেই দূতাবাস যদি যুদ্ধের সময় মুখ ফিরিয়ে নেয় সাহায্য না করে তবে কার ভরসায় তারা থাকবেন সুবিধা ও অসুবিধা কাকেই বা জানাবেন। প্রাণান্তকর কষ্ট সহ্য করে যারা বাংলায় নিজের বাড়িতে ফিরে আসতে পেরেছেন তারা বলছেন বড় বাঁচা এ যাত্রায় বেঁচে গিয়েছেন তারা কিন্তু যারা এখনো ইউক্রেনে আটকে তারা বলছেন প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারলে হয়!
সাইরেনের আওয়াজ কানে বাজছে দুর্গাপুরের নেহা, বিপাশা,জিনতের সামান্য শব্দেও বুক কাঁপছে,এখনও কানে বাজছে সাইরেনের শব্দ, বোমার আওয়াজ-যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে দুর্গাপুরের মাটিতে ফিরে আতঙ্কিত নেহা,জিনত,বিপাশারা জানালো এমন অভিজ্ঞতার কথা। রণভূমি ইউক্রেন থেকে বুধবার দুর্গাপুরের মাটিতে পা রাখলো জিনাত আলম, নেহা খান,বিপাশা সাউ।
বোমা গুলি আর মৃত্যু-মিছিল যুদ্ধক্ষেত্র ইউক্রেনের লাশের ছড়াছড়ি। আতঙ্কের মধ্যে বাংকারের নিচে আটকে হাজার হাজার ভারতীয় মেডিকেল পড়ুয়া। মুমূর্ষ ভয়াবহ পরিবেশ থেকে মাতৃভূমিতে মায়ের কোলে ফিরে এলো তিন পড়ুয়া। অন্ডালের কাজী নজরুল ইসলাম বিমান বন্দরে নামে দুর্গাপুরের তিন পড়ুয়া।
আর ও পড়ুন ট্রাভেল এজেন্সি খুলে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে লক্ষাধিক টাকার প্রতারণা
তিনজনেরই অভিযোগ প্রাণান্তকর কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে তাদের ইউক্রেনে আচমকা যুদ্ধ শুরু হবার পর কার্যত হাত গুটিয়ে নেয় ভারতীয় দূতাবাস নিয়ম-রক্ষার টুইট এবং ফেসবুক পোস্ট ছাড়া আর কোনো সহায়তা তাদের থেকে পাওয়া যায়নি নিজেদের দায়িত্ব তাদের সীমান্তবর্তী এলাকায় আসতে হয়েছে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সেখানে এসেও চরম হেনস্থার মুখে পড়তে হয়েছে শেষ পর্যন্ত বহু কষ্টে বিদেশমন্ত্রকের কর্তাব্যক্তিদের দেখা মিলেছে। তাদের প্রশ্ন যুদ্ধের আভাস পাওয়া মাত্র কেন ভারতীয় দূতাবাস বা বিদেশমন্ত্রক ইউক্রেনের সমস্ত ভারতীয় কে উদ্ধারের জন্য ঝাঁপাল না, কেন সময় নষ্ট করা হলো!
জল নেই খাবার নেই, অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্যে দিন কেটেছে সোনিয়ার ইউক্রেনের টার্ন অফ ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভারসিটির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সোনিয়া ভৌমিক আটকে পড়েছিল ইউক্রেন। ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের ভয়াবহতা আকার ধারণ করলে সোনিয়া ভৌমিক ও তার বন্ধুরা মরিয়া হয়ে উঠেন ইউক্রেন ছাড়ার জন্য এরপর তারা বাস ধরে পোল্যান্ড বর্ডারে পৌঁছায় এবং সেখানে চারদিক আটকে থাকতে হয়েছিল। তিন রাতের আতংক এখনো কাটেনি সোনিয়া ভৌমিকের।
সেকেন্ড ইয়ার সেকেন্ড সেমিস্টারের এই ছাত্রী আর ইউক্রেনে ফিরতে চান না বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তিনটে রাত কি ভাবে কেটেছে সেটা মনে পড়লেই শিউরে উঠতে হয় ।জানিয়েছে প্রান বাঁচাতে আমরা ৪০-৫০ জন পড়ুয়া এক রাত্রে ৫০ কিমি পায়ে হেঁটে বর্ডারের কাছে ছুটে গেছি।কিছু খাওয়ার নেই,জল নেই সেই অবস্থায় দিন-রাত্রি খোলা আকাশের নীচে কেটেছে।
সোনিয়া জানিয়েছে ইউক্রেনের বাসিন্দারা ভারতীয় পড়ুয়াদের মনোবল বাড়াতে পাশে দাঁড়িয়েছে।কোথাও কোথাও এই পড়ুয়াদের নিজের বাড়িতে বিশ্রামের ব্যাবস্থা করে দিয়েছে।তবে ইউক্রেনীয় সেনা বাহিনীর জওয়ানদের ব্যাবহার অত্যন্ত খারাপ ছিলো বলেও এই পড়ুয়ার অভিযোগ
মেয়ে ফেরার অপেক্ষায় দেবারতির পরিবার। মেয়ের সাথে কখনো যোগাযোগ হচ্ছে কখনোবা একটানা দীর্ঘক্ষণ কোন খবর মিলছে না। মেয়ের ফেরার অপেক্ষায় এখন দিন গুনছেন হাওড়ার ইছাপুরের শিয়ালডাঙা এলাকার বাসিন্দা দেবারতি দাসের পরিবার। দেবারতির বাবা নন্দলাল দাস জানান, এখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ডাক্তারি পড়ার খরচ প্রচুর। চিকিৎসা পরিকাঠামো অনেক আধুনিক ওখানে।
৬ বছরের কোর্স এখানে পাঁচ বছরের। ওখানে প্রতিদিন প্রতিটি ক্লাসের প্রতিটি পিরিয়ডের পরীক্ষা হয়। কেউ অমনোযোগী হতে পারেনা। কোনো ছুটি নেই। বছরে ছুটি দু’মাস। ছাত্রছাত্রীরা সেখানে গেলে পড়াশোনাতেই কেটে যায়। অন্য কোনও কিছু করতে পারে না। মেয়ের সঙ্গে ১ঘন্টা আগে কথা হয়েছে। সে এখন পোল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। তবুও চিন্তা মুক্ত হতে পারছেন না তারা কারণ দেবারতি নিজেই জানিয়েছে প্রতি পদে এখানে বিপদ।
ইউক্রেন সেনা আদৌ তাদের সীমান্ত পেরোতে দেবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। ভারতীয় দূতাবাস আদৌ কোনো সাহায্য করবে কিনা সে ব্যাপারেও তারা নিশ্চিত হতে পারছেন না। সব মিলিয়ে যতক্ষন না পোল্যান্ড থেকে ভারতের বিমানে না উঠছেন দেবারতি ততক্ষণ চিন্তা মুক্ত হতে পারছেন না তারা। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে আটকে হাওড়ার দেবারতি, বাড়িতে গিয়ে পরিবারকে আশ্বাস মন্ত্রী অরূপ রায়ের। ইউক্রেনে আটকে থাকা হাওড়ার ইছাপুরের দেবারতি দাসের বাড়িতে গিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে সাহায্য করার আশ্বাস দিলেন সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়।
বাঁচানোর আকুতি দুর্গাপুরের যমজ দুই বোনের। বিস্ফোরণ গুলির শব্দে কান পাতা দায়। ঘন্টার পর ঘন্টা কাটছে অন্ধকার বাঙ্কারে। পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কখনো কথা হচ্ছে কখনো বা গোটা দিনই কথা হচ্ছে না কারণ নেটওয়ার্ক বলতে প্রায় আর কিছু অবশিষ্ট নেই। শেষ বার ফোন করে মায়ের কাছে বাঁচানোর আকুতি করেছিল দুর্গাপুরের যমজ দুই বোন রুমকি এবং ঝুমকি গাঙ্গুলী।
তারপর থেকেই যাবতীয় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। উৎকন্ঠায় কাটছে পরিবারের।ইউক্রেনের খারকিভ শহরের একটি কলেজে ডাক্তারি পড়ার জন্য দুর্গাপুর থেকে গিয়েছিলো এই দুই যমজ বোন। দুই যমজ বোনের বাবা ধীরেন গাঙ্গুলী বলেন বুধবার রাত্রিতে শেষবারের মতো কথা হয়েছে মেয়েদের সাথে। তারপর থেকে আরহ যোগাযোগ করা যায়নি। ভারতীয়দের এ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য তৎপর শুরু করেছে সরকার। এখন দেখার কতক্ষণে তারা বাড়ি ফেরে।