সেঞ্চুরি করেও দলকে বাঁচাতে পারলেন না লিটন, ইনিংস ব্যবধানে হেরে গেল বাংলাদেশ। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যাটে-বলে দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে বাংলাদেশের। ব্যাটিং ব্যর্থতায় পড়তে হয় ফলোঅনে। কিন্তু ফলোঅনে ব্যাট করতে নেমে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন লিটন দাস। তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। তবে সেঞ্চুরি করেও দলকে বাঁচাতে পারেননি। বাকিদের ব্যর্থতার দিনে লিটনের একার পক্ষে নিউজিল্যান্ডের রানের পাহাড় টপকানো সম্ভব হয়নি। ডানহাতি ব্যাটারের সেঞ্চুরি ম্লান করে তিন দিনেই বাংলাদেশকে ইনিংস ব্যবধানে হারিয়ে দিল নিউজিল্যান্ড।
আজ মঙ্গলবার সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশকে ইনিংস ও ১১৭ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। এর আগে লে ওভালে সিরিজের প্রথম টেস্ট জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার দ্বিতীয় টেস্টে নিউজিল্যান্ড জেতায় দুই ম্যাচের সিরিজ ১-১ ব্যবধানে ড্র হলো। ফলোঅনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ২৭৮ রানে থেমেছে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১০২ রান করেছেন সেঞ্চুরিয়ান লিটন দাস। ১৮৯ মিনিট ব্যাট করে ১১৪ বল মোকাবিলা করেছেন তিনি। মেরেছেন ১২টি বাউন্ডারি ও একটি ছক্কা।
তবে সেঞ্চুরি করেও ইনিংস ব্যবধানে হার এড়াতে পারেননি লিটন। দিনের শেষ সেশনের কিছু সময় বাকি থাকতেই বাংলাদেশের সবগুলো উইকেট তুলে নিয়ে জয়ের হাসি হাসে টম ল্যাথামের দল। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের শুরুটা বেশ সাবধানীই ছিল। হ্যাগলি ওভালে আজ প্রথম সেশনে বাংলাদেশ ২৮ ওভারে ২ উইকেটে ৭৪ রান সংগ্রহ করে। কিন্তু নিল ওয়াগনার ও কাইল জেমিসন মিলে পরের দুই সেশনে বাংলাদেশের ব্যাটিং ছন্দ এলোমেলো করে দেন। স্কোরবোর্ডে ১২৮ রান তুলতে বাংলাদেশের ৫ টপ অর্ডারকে তুলে নেন তাঁরা। তবে ৫ উইকেট হারানোর চাপ সামলে বাংলাদেশকে দারুণ ইনিংস উপহার দেন লিটন।
দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিংয়ে তুলে নেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ও দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি। তাঁর সেঞ্চুরিতেই ইনিংস ব্যবধান হার এড়ানোর কিছুটা স্বপ্ন দেখে বাংলাদেশ। কিন্তু লিটন ফিরলে সেই স্বপ্ন দ্রুতই শেষ হয়ে যায়। তিনি ফেরার কিছুক্ষণ পরই বাংলাদেশের সবগুলো উইকেট তুলে নিয়ে জয়ের উচ্ছ্বাসে ভাসে নিউজিল্যান্ড। নিউজিল্যান্ডের হয়ে বল হাতে ৮২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন জেমিসন। ৭৭ রান খরচায় তিন উইকেট নেন ওয়াগনার।
আর ও পড়ুন আজ বিকেল ৪টে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক
এর আগে গতকাল সোমবার প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১২৬ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। ৩৯৫ রানে এগিয়ে থেকে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় ইনিংসে ফলোঅনে ব্যাট করতে পাঠায় কিউইরা। প্রথম ইনিংসে ইয়াসির আলী রাব্বি ও নুরুল হাসান সোহান ছাড়া ব্যাটিংয়ে কেউই থিতু হতে পারেননি। বেশি হতাশ করেছেন টপ অর্ডাররা। ব্যাটিংয়ে নেমেই তাঁরা উইকেটে আসা-যাওয়ার মিছিলে ছিলেন। স্কোরবোর্ডে ১১ রান তুলতেই চার উইকেট হারিয়ে ফেলে মুমিনুল হকের দল।
ব্যাটিংয়ের শুরুতেই সাদমান ইসলামকে (৭) হারায় বাংলাদেশ। তৃতীয় ওভারেই ফিরে যান অভিষিক্ত মোহাম্মদ নাঈম। রানের খাতাও খুলতে পারেননি প্রথম টেস্ট খেলতে নামা নাঈম। জোড়া উইকেট হারানোর পর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। ফের হারায় আরও দুটি উইকেটে। সাজঘরে ফিরে যান নাজমুল হোসেন শান্ত (৪) ও মুমিনুল হক (০)। এরপর হারায় লিটন দাসের উইকেটও। দ্রুত ৫ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ।
এরপর কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন নুরুল ও ইয়াসির। কিন্তু, দুজনের প্রতিরোধেও কিউইদের বোলিং চাপ সামলাতে পারেনি বাংলাদেশ। ৯৫ বলে ৫৫ রান করে আউট হয়ে যান ইয়াসির। তাঁর আগে ৬৬ বলে ৪১ রান করে সাজঘরে ফেরেন নুরুল হাসান। বাকিরা কেউ ১০-এর ঘরও অতিক্রম করতে পারেননি। তার আগে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৫২১ রান তুলেছে নিউজিল্যান্ড। ডাবল সেঞ্চুরি করা ল্যাথাম খেলেছেন দলের হয়ে সর্বোচ্চ ২৫২ রানের ইনিংস। আরেক সেঞ্চুরিয়ান কনওয়ে খেলেছেন ১০৯ রানের ইনিংস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস : (প্রথম দিন শেষে ৩৪৯/১) ১২৮.৫ ওভারে ৫২১/৬ ডিক্লে. (ল্যাথাম ২৫২, কনওয়ে ১০৯, টেইলর ২৮, নিকোলস ০, মিচেল ৩, ব্লান্ডেল ৫৭*, জেমিসন ৪*; তাসকিন ৩২.৫-৫-১১৭-০, শরিফুল ২৮-৯-৭৯-২, ইবাদত ৩০-৩-১৪৩-২, মিরাজ ৩১-২-১২৫-০, শান্ত ৪-০-১৫-০, মুমিনুল ৩-০-৩৪-১)।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস : ৪১.২ ওভারে ১২৬/১০ (সাদমান ৭, নাঈম ০, শান্ত ৪, মুমিনুল ০, লিটন ৮, নুরুল ৪১, ইয়াসির ৫৫, শরিফুল ২, মিরাজ ৫, তাসকিন ২, ইবাদত ০* ; টিম সাউদি ১২-৪-২৮-৩, বোল্ট ১৩.২-৩-৪৩-৫, জেমিসন ৯-৩-৩২-২, নিল ওয়াগনার ৭-১-২৩-০)।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: (ফলো-অনের পর): ৭৯.৩ ওভারে ২৭৮/১০ (সাদমান ২১, নাঈম ২৪, শান্ত ২৯, মুমিনুল ৩৭, লিটন ১০২, ইয়াসির ২, সোহান ৩৬, মিরাজ ৩, তাসকিন ০, শরিফুল ০, ইবাদত ৪; সাউদি ১৭-৬-৫৪-১, বোল্ট ১৬-৬-৪২-০, জেমিসন ১৮-৪-৮২-৪, ওয়্যাগনার ২২-৭-৭৭-৩)।
ফল : ইনিংস ও ১১৭ রানে জয়ী নিউজিল্যান্ড।
সিরিজ : ১-১ ব্যবধানে ড্র।