অধিকারী পরিবার নিয়ে হতাশা বাড়ছে বিজেপির অন্দরে! সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বড়সড় ধাক্কা সৌমেন্দুর। অখণ্ড মেদিনীপুর অর্থাৎ পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলায় তৃণমূলের দাপটই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে একুশের বিধানসভা নির্বাচনেই। গেরুয়া শিবিরের অধিকারী পরিবার নিয়ে যে ধারণা জন্মেছিল তা খর্ব হতে খুব বেশি সময় লাগেনি। তারপর সময় যতই গড়িয়েছে, মেদিনীপুরের মাটিতে অধিকারীদের অধিকার ততই খর্ব হয়েছে। হারিয়েছে তাঁদের দাপট, গুরুত্ব ও গ্রহণযোগ্যতাও। দলের পাশাপাশি এবার সুপ্রিম কোর্টের রায়েও বড়সড় ধাক্কা খেল অধিকারী পরিবার। আর সেই ধাক্কায় কার্যত এখন দিশাহারা দশা অধিকারী পরিবারের ছোট ছেলে সৌমেন্দু অধিকারীর।
আর ও পড়ুন আন্তর্জাতিক মোবাইল পাচার চক্রের মূল পাণ্ডা গ্রেফতার
একই সঙ্গে চিন্তা বেড়েছে বিজেপি শিবিরেও। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কাঁথি পুরসভাতে ভোট হয়েছিল। যেখানে তৃণমূলের কাছে গোহারান হেরেছে বিজেপি। শহরের ২১টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩টি আসন গিয়েছিল গেরুয়া ঝুলিতে। ১৭টি আসনে জয়ী হয় তৃণমূল। ১টি আসন যায় নির্দলের দখলে। সেই নির্বাচন নিয়েই প্রথমে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা নিয়ে যান সৌমেন্দু। তাঁর দাবি ছিল, ভোটলুঠ করে কাঁথি দখল করেছে তৃণমূল।
আর হাত-পা গুটিয়ে চোখ বুজে বসে থেকে সেই ভোটলুঠে তাঁদের সাহায্য করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তাই সেই নির্বাচন বাতিল করা হোক ও ওই নির্বাচনে সব বুথের ভিতরে থাকা সিসিটিভির ফুটেজ ফরেন্সিক পরীক্ষা করে দেখা হোক। প্রাথমিক ভাবে কলকাতা হাইকোর্ট এই ফুটেজ সংরক্ষণের নির্দেশও দেয়। পরে তার ফরেন্সিক পরীক্ষার নির্দেশও দেয় যার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার। আর সেই সুপ্রিম কোর্টই দিল কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ।
সোমবার এই মামলা শুনানি ছিল। এদিন কাঁথি পুরসভার মামলায় বেঞ্চ জানায়, ‘’শুধুমাত্র নির্বাচন পিটিশনের মাধ্যমেই কোনও নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ করা যায়। কলকাতা হাইকোর্ট জনস্বার্থ মামলায় এ ভাবে নির্দেশ জারি করতে পারে না। হাইকোর্ট কোনওভাবেই নির্বাচন নিয়ে জনস্বার্থ মামলায় তথ্যপ্রমাণ জড়ো করতে পারে না। একবার নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরে তাকে নির্বাচনী পিটিশনের মাধ্যমেই চ্যালেঞ্জ জানানো যায়। বুথ দখলের অভিযোগে থাকলে তা নির্বাচনী পিটিশন অনুযায়ী করতে হবে।
জনস্বার্থ মামলায় নির্বাচন বাতিলের দাবি তোলা যায় না। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে সংবিধানের ২২৬ অনুচ্ছেদের আওতায় জনস্বার্থ মামলায় হাইকোর্টে মামলা করা বিপজ্জনক নজির। আমরা শুধু কাঁথি নিয়ে নই এর বৃহত্তর প্রভাব নিয়ে উদ্বিগ্ন। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ সিসি ক্যামেরার ফুটেজের ফরেন্সিক তদন্ত করে কেন্দ্রীয় ল্যাবরেটরিকে বন্ধ খামে রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিল। এই মুখ বন্ধ খামের ব্যাপারটাই সন্দেহজনক। এটা কোনও ফৌজদারি অপরাধের মামলা নয় যে ফরেন্সিক পরীক্ষার নির্দেশ দেওয়া হবে।
এর পর গোটা দেশেই এর পুনরাবৃত্তি হতে পারে। পুরভোটের ফল প্রকাশের পর কেন জনস্বার্থ মামলা করা হল? কেন নিয়মমাফিক রাজ্য নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানানো হয়নি? হাইকোর্ট ভোট পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে এই রায় দিয়েছে, যা আগামিদিনে এক ভয়ঙ্কর নজির সৃষ্টি করতে পারে। কোনও জনস্বার্থ মামলায় এই ধরনের রায় সত্যিই বিপজ্জনক। হাইকোর্ট এক্তিয়ারবহির্ভূত কাজ করেছে।”