কুড়ি বছরের বেশি অধ্যপনার করে আজ নিংস্ব অধ্যাপিকা। ডানলপ মোড়ে ফুটপাতে দিন কাটানো প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধধেব ভট্টাচার্যের শ্যালিকা করুন পরিনতির কথা সকলেই জানেন ” যত জ্ঞানী হবে ততই দুঃখ পাবে ” বিখ্যাত এক রুশ লেখকের উক্তি উদাহরণ দিয়ে নিজের জীবনের করুন কাহিনী শোনালেন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা সংগীতা দাশগুপ্ত। কুড়ি বছরের বেশি অধ্যপনার করে আজ নিংস্ব রিক্ত। প্রাপ্য টাকা আজও পায়নি কোনো এক অজ্ঞাত কারণে। অসুস্থ অধ্যাপিকার অপরের দয়ায় আজ দিন কাটছে বারাসাত পুরসভার ৯ নং ওয়ার্ডে অশোক কলোনির বাড়িতে ।
কমিউনিস্ট পরিবারে জন্ম সংগীতাদেবীর বাবা অমিয় দাশগুপ্ত এবং মা সুজাতা দাশগুপ্ত অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী। ঠাকুর দা কমিউনিস্ট করার অপরাধে মাত্র ১৪ বছর বয়সে বাবা অমিয় দাশগুপ্ত কে ব্রিটিশ পুলিশ শিকল দিয়ে বেঁধে জেলে নিয়ে যায়। স্বাধীনতার পরে ভারতীয় কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে উচ্চপদে চাকরি তে যোগ দেয়। মা সুজাতা দেবী ছিলেন শিক্ষিকা।
একমাত্র ভাই অমিয় দাশগুপ্ত ছিল উচ্চপদাসীন ব্যাঙ্ক অফিসার। ১৯৯১ সালে রাশিয়ার অন্তর্দেশীয় অস্থিরতার কারণে ভারতে ফিরে আসে সংগীতা দেবী। ১৯৯২ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাশিয়ান ভাষার অধ্যাপিকা হিসাবে যোগ দেন। প্রায় ২৪ বছর পর ২০১৬ সালে চাকরি জীবন থেকে অবসর নেন। পিএফ, গ্রাচুইটি পেলেও পেনশন পাননি এখনো।
আর ও পড়ুন কামারহাটিতে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দের জেরে রণক্ষেত্র, জখম দুপক্ষের বেশ কয়েকজন
সরকারি আইনের জটিলতা নাকি অন্য কোনো কারণ তা নিয়ে বলতে না চাইলেও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে ইচ্ছুক সংগীতা দেবী। তার প্রাপ্য টাকা সহ বাবা- মা এবং ভাইয়ের সমস্ত টাকা রাস্তার সারমেয় সহ বিভিন্ন পথ পশুদের ভরণপোষণের পিছনে শেষ করে দিয়েছেন। বাড়িতে পশু পুনর্বাসন কেন্দ্র খুলে বিরাগ ভাজন হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দ এবং পুরসভার প্রতিনিধিদের কাছে তবু নিজের আদর্শ নীতি থেকে সরে আসেনি। গত নভেম্বরে পথ দুর্ঘটনায় আহত হল কোমরের হাড় ভেঙ্গে যায়।
তারপর থেকেই শয্যাশায়ী সংগীতা দেবীর দুবেলা খাবার সংস্থান করা অসম্ভব হয়ে গেছে। এক সময়ে তার বিরোধীতা করা প্রতিবেশীরাই এখন তার রক্ষাকর্তা। সকলের অনুরোধ রাজ্যের মানবিক মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগ নিয়ে সংগীতা দেবীর চিকিৎসা সহ যাবতীয় খরচের ভার নিক। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শালিকা কে যেভাবে পথের থেকে তুলে নিয়ে তা র প্রাপ্য সম্মান দিয়েছে ঠিক তেমনি তাকেও তার সম্মান ও পাওনর ব্যবস্থা করুক।
একসময় বিশ্বের সেরা শক্তিধর সাবেক সোভিয়েত রাশিয়া এখন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে, পৃথিবীতে কম্যুনিজম এখন প্রাসঙ্গিক কিনা তার চর্চার পাশাপাশি রাজ্যে ৩৪ বছর শাসন করা বামপন্থীরা এখন বিধানসভায় শূন্য। স্বাভাবিকভাবে আদ্যপান্ত কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্ন সংগীতা দাশগুপ্তের প্রতি এই অন্যায় অবিচার বামপন্থীদের প্রতি অবহেলা কিনা তা সময় বলবে।