অসুস্থ ছেলেকে গোয়াল ঘরে বেঁধে রেখেছেন বৃদ্ধ মা ও বাবা, কারন জানলে চমকে যাবেন। ছেলের অত্যাচারে নাজেহাল প্রতিবেশী। শেষে উপায় না পেয়ে গোয়াল ঘরেই ছেলেকে বেঁধে রেখেছেন বৃদ্ধ মা ও বাবা। করোনা সংক্রমণের জেরে লকডাউন সবকিছু উলটপালট করে দিল ওঁদের জীবনে। দীর্ঘদিন ধরে ট্রেন বন্ধ থাকার কারণে ছেলেকে মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি সুভাষ।
ফলে চিকিৎসার অভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে রবিরাম। মাঝে মধ্যেই একে তাঁকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়, মানুষের বাড়িঘর লুটপাট, ভাঙচুর শুরু করে। এই পরিস্থিতিতে গ্রামের মানুষই তাঁকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার পরামর্শ দেন।
সেই থেকেই বাড়ির গোয়াল ঘরের পাশে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মাঝে সারাক্ষণ শিকল বাঁধা অবস্থায় পড়ে রয়েছে রবিরাম। ঐ অবস্থাতেই স্নান, খাওয়া সহ বাকি সবকিছুই করে সে।করোনা অতিমারির কারণে দীর্ঘদিন মানসিক রোগগ্রস্থ নিজের সন্তানকে চিকিৎসা করাতে পারেন নি বৃদ্ধ বাবা মা।
দিনের পর দিন চিকিৎসা না হওয়ায় অসুখ আরও জাঁকিয়ে বসেছে বছর আঠাশের রবিরামের শরীরে। মাঝে মধ্যেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক চলে যায় সে। হাতের সামনে যাকে পায় তাঁকেই মারধোর করে। প্রতিবেশীদের ঘরে ঢুকে জিনিষপত্র ভাঙচুর করে।
বৃদ্ধ বাবা মায়ের পক্ষে ছেলেকে সামলানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। আর সেই কারণেই প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে গোয়াল ঘর লাগোয়া একটি স্যাঁতসেঁতে মাটির ঘরের মধ্যে তালা শিকল দিয়ে ছেলেকে বেঁধে রেখেছেন সুভাষ নাইয়া ও লক্ষ্মীবালা নাইয়া।
আর ও পড়ুন গাড়িতে যৌন সম্পর্ক করতে গিয়ে বিপাকে যুগল, পরের কাণ্ড আরও মারাত্মক
দক্ষিন ২৪ পরগনা জেলার বাসন্তীর বাসিন্দা রবিরাম ছোটবেলায় অবশ্য আর পাঁচটা সাধারণ ছেলে মেয়ের মতোই ছিল। চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করে সংসারের হাল ধরতে কাজে ঢুকে পড়ে। ক্যানিংয়ে ফার্নিচার তৈরির কাজে যোগ দেয় রবিরাম। ২০০৯ সালে আয়লা হলে এলাকার মানুষের রুটি রুজির আকাল দেখা দেয়, সেই সময় গ্রামের যুবকরা ভিন রাজ্যে কাজের জন্য পাড়ি দেয়। রবিরামও তাঁদের সাথেই সেই পনেরো বছর বয়সে বম্বে যায় কাজের জন্য।
কিন্তু এক বছর পর ফিরে আসে অসুস্থ অবস্থায়। সেই থেকেই অসুস্থ। প্রথমে রোগ এতটা প্রকট না হলেও সময়ের সাথে সাথে তাঁর অসুখ ও বাড়তে শুরু করে। বৃদ্ধ বাবার এক চোখ দৃষ্টিহীন, আর বয়স্ক মা হৃদরোগে আক্রান্ত।
তবুও ছেলের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরেছেন। বালিগঞ্জ মানসিক হাসপাতালে দীর্ঘদিন দেখিয়েছেন ছেলেকে। কিন্তু সেভাবে সুস্থ না হওয়ায়, পার্ক সার্কাসে আরেকটি মানসিক হাসপাতালে ছেলের চিকিৎসা শুরু করেন সুভাষ। সেখানেই বিগত সাত আট বছর ধরে চিকিৎসাধীন রবিরাম।