আক্ষেপে নিয়েই শুরু হলো ভারত বাংলাদেশের এনজেপি থেকে ঢাকা পর্যন্ত রেল যোগাযোগ। ১৮জন যাত্রী নিয়ে প্রথম দিনে ঐতিহাসিক হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রুট ধরে ছুটলো এপার ও ওপার বাংলার মাঝে সংযোগকারী বন্ধুত্বপরায়ন মিতালি এক্সপ্রেস।
দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশী সময় অপেক্ষার পর অবশেষে বুধবার ভ্যরচুয়াল মাধ্যমে ভারতের রেল মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ও বাংলাদেশের রেল মন্ত্রী মহম্মদ নুরুল ইসলাম সুজান এই বন্ধুত্ব পরায়ণ যাত্রার শুভসূচনা করেন। রেলের লোকো ইঞ্জিন পাইলট বিবেকানন্দ চৌধুরী ও সহকারী চালক রাজেন মিস্রা এদিন ট্রেনটির নিয়ে ওপর বাংলার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন।
৫৬বছরের ইতিহাসের পাতা উলটে এই যাত্রার সাক্ষী হয়ে ওঠা যাত্রীদের গলায় আবেগের সঙ্গেই ভেসে উঠলো আক্ষেপের সুর। কারন ট্রেনটি ইতিহাসের পাতা উল্টে স্মৃতি বিজড়িত হলদিবাড়ি রুট ধরে যাত্রা করলেও সেখানে যাত্রী ওঠানামার কোনো ব্যবস্থা থাকছে না। জলাপাইগুড়িতে আন্তর্জাতিক ড়ি ট্রেনের স্টপেজ নেই। এদিন ভারত থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন হলদিবাড়ির বাসিন্দা গৌতম ভট্টাচার্য্য। তিনি বলেন বাংলাদেশে যাতায়াত রয়েছে কিন্তু ট্রেনে ঢাকা সফর এই প্রথম। আক্ষেপ ব্যক্ত করে বলেন এপার ও ওপার বাংলার মধ্যে সংযোগ ঘটছে ঠিকই। কিন্তু হলদিবাড়ি স্টেশনে স্টপেজ হলেও যাত্রী ওঠা নামার ব্যবস্থা নেই ফলত হলদিবাড়ি-জলাপাইগুড়ি থেকে পুনরায় নিউজলপাইগুড়ি আসতে হচ্ছে যাত্রীদের। মেখলিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ এ সমস্ত এলাকা থেকে সহ বহু মানুষের ব্যবসার খাতিরে বাংলাদেশে যাতায়াত রয়েছে।
এদিন সকাল ৯.২৫নাগাদ রেলের জিএম অংশুল গুপ্তার উপস্থিতিতে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে। উত্তর পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারীক সব্যসাচী দে জানান নিউজলপাইগুড়ি স্টেশনে পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে বেশ কিছুটা আগে এসেই কাউন্টারে টিকিট কাটতে হবে ভারতীয় যাত্রীদের।এনজেপি এক নম্বর প্ল্যাটফর্মের আন্তর্জাতিক রেল টার্মিনাসের অভিবাসন কেন্দ্রে পার্সপোর্ট ও ভিসা যাচাইয়ের পর বাংলাদেশ সফরের কাউন্টার টিকিট দেওয়া হয়। বাংলাদেশের যাত্রীদের ফেরার টিকিটের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য থাকছে।
অনলাইনে চারটি এসি ফাস্ট ক্লাস স্লিপার, চারটি এসি চেয়ার কার মোট আটটি যাত্রী কামরা সহ দুটি পাওয়ার ব্রেক ভ্যান সমেত মোট ১০কামরা নিয়ে যাত্রা করছে মিতালি। ট্রেনের এসি স্লিপারের আসন সংখ্যা ৩৬ এবং চেয়ার কারের আসন সংখ্যা ৭৮।আন্তঃরাষ্ট্র এই ট্রেনের প্যাট্রি কোচ থাকছে না। সেক্ষেত্রে ফলত পর্যটকদের খাবারের গুণমান নিয়ে একটা প্রশ্নচিহ্ন থেকে যাচ্ছে। ভারতীয় উত্তর পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক জানান টিকিট বুকিংয়ের সময়তেই আইআরসিটিসি তরফে খাবারের ক্রয়ের বিকল্প রয়েছে। তবে রাতে ঢাকা থেকে ভারতে আসা যাত্রীদের ক্ষেত্রে খাবারের ব্যবস্থা থাকছে না। দুই দেশের মধ্যে ৫৯৫কিমি এই যাত্রা পথের ভারতীয় সীমানার ৬১কিমি। বাংলাদেশের চিলাহাটি পর্যন্ত বিএসেএফের নিরাপত্তা বলয়ে যাত্রীদের পৌঁছে দেওয়া হবে।
সেখানেই বিএসএফ হস্তান্তর করবে বাংলাদেশের সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীকে।ইঞ্জিনের লোক পাইলট ও সহকারী চালক সহ কর্মীরা ট্রেনটিনর দায়িত্ব বাংলাদেশ রেলের হাতে তুলে দেবে। বাংলাদেশ নিবাসী সরল চৌধুরির আবেগ যেন বাঁধ মানছিল না নিউজলপাইগুড়ি স্টেশনে। ওদেশের অবসরপ্রাপ্ত কাস্টম অফিসার চিকিৎসা করাতে ভারতে এসেছিলেন চার মেয়ে ও পরিবার নিয়ে। তিনি জানান এতদিনে দুই বাংলার মধ্যে ছেড়া নাড়ির টান ফের অনুভব করছি। আমার কাছে এটা আবেগের, কথা বলার মতো ভাষা নেই। এদিকে উত্তরপূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বলেন আন্তর্জাতিক পরিষেবার নিয়ম অনুযায়ী রেলের তরফে ডলারের অংকেই টিকিট মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
ভারতীয় রেলের তরফে এসি চেয়ার কারের টিকিট মূল্য ধ্যার্য্য করা হয়েছে ২২ডলার এবং অতিরিক্ত ৫%জিএসটি। এবং এসি স্লিপারের ক্ষেত্রে তা ৩৩ডলার সঙ্গে জিএসটি ধ্যার্য্য রয়েছে। আর নির্ধারিত এই ভাড়া নিয়ে কিছুটা অখুশি পর্যটকেরা। কারন একই ট্রেনের ভারত ও বাংলাদেশের টিকিট মূল্যে রকমফের রয়েছে।বাংলাদেশ থেকে ৪৪ ডলার ব্যয় করতে হচ্ছে পর্যটকদের। এনজেপি থেকে রবিবার ও বুধবার সকাল ১১.৪৫ নাগাদ বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবে মিতালি। অন্যদিকে বাংলাদেশ ঢাকা স্টেশন থেকে সোমবার ও বৃহস্পতিবার ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবে বিএসটি সময় অনুযায়ী রাত ৯.৫০ নাগাদ।
এদিকে আয়ের লভ্যাংশ বন্টনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৯০:১০ শতাংশ চুক্তি স্থির হয়েছে বলেই রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। যাতে প্রথম পর্যায়ে লাভের অংক আসবে না ভারতে। প্রথম স্তরে ভারতের তেমন মুনাফা না হলেও ভবিষ্যতে লাভের মুখ দেখা সম্ভব হবে বলেই আশাবাদী ভারতীয় রেল।বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী আবেগঘন হয়ে জানান বঙ্গবন্ধু মজিবুরকে স্মরণ করে ৫৬বছর পর ব্রডগেজ এই রুট ধরে ট্রেন চলা শুরু হলো।
আর ও পড়ুন লরি ও ট্রাক্টরের সংঘর্ষে মৃত্যু হল ট্রাক্টর চালকের
১৯৬৫স সালে শেষবারের মতো এই পথে ট্রেন চলেছিল।ভারতীয় রেলের জেনারেল ম্যানেজার অংশুল গুপ্তা জানান প্রায় ৫৬ বছর পর এই পথে ট্রেন চলছে। এই রেলপথেই সবচেয়ে কম সময়ে ভারত থেকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় পৌঁছন যাবে। ঢাকা থেকে চিলাহাটি সীমান্ত হয়ে হলদিবাড়িতে অর্থাৎ ভারতের মাটিতে পৌঁছতে সময় নেবে প্রায় আট ঘন্টা, এনজেপি পৌঁছতে আরও অতিরিক্ত এক থেকে দেড় ঘন্টা সময় লাগবে।অর্থাৎ ৮ ঘন্টা ৪৫মিনিটের সফর। এই ট্রেনের হাত ধরে সামাজিক অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটবে। দুই দেশের অর্থনীতির ব্যাপক প্রসার ঘটবে।