আচমকা নিজের পদ থেকে পদত্যাগ করলেন বিশ্বভারতীর কর্মসচিব আশিষ আগরওয়াল। বিশ্বভারতীতে ছাত্র আন্দোলনের মাঝেই আচমকা নিজের পদ থেকে পদত্যাগ করলেন বিশ্বভারতীর কর্মসচিব আশিষ আগরওয়াল।রাতভর বাংলাদেশ ভবনে ছাত্রছাত্রীদের কাছে ঘেরাও সকালে তিনি পদত্যাগ করেন। জনসংযোগ আধিকারিক অতীগ ঘোষ জানিয়েছেন , কর্মসচিব পদত্যাগপত্র উপাচার্যের কাছে পাঠিয়েছেন , তা গৃহীত হয়েছে , তিনি এখন নিজের পদে নেই তাই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন না।
এদিকে হাইকোর্টে বিশ্বভারতীর মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন , আদালত থেকে বিশ্বভারতীর সমস্যা পরিচালনা করা সম্ভব নয়। ছাত্র-ছাত্রীদের আইনজীবী শামীম আহমেদ জানিয়েছেন , আদালতের নির্দেশ অমান্য করছে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী সেই বিষয়ে বিচারপতি বলেছেন আগামী শুক্রবার বিষয়টি তিনি শুনবেন। তবে বিশ্বভারতী জুড়ে তৈরি হয়েছে তার নেপথ্যে রয়েছে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর ইন্ধন। তিনি তার অহংকার প্রতিষ্ঠিত করতে এমন এমন কার্যকলাপ ঘটাচ্ছেন যাতে বিশ্বভারতীর স্বাভাবিক অবস্থার বিঘ্ন ঘটে। ইচ্ছে করে পড়ুয়াদের হেনস্থা করছেন।
প্রসঙ্গত সোমবার থেকে বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভবন প্রাঙ্গণে দুজন আন্দোলনরত পড়ুয়া অনশন শুরু করে, দর্শন বিভাগের গবেষণারত ছাত্রী মীনাক্ষী ভট্টাচার্য এবং অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র সোমনাথ সৌ, অনশন শুরু করে। দুজনেই স্পষ্ট জানিয়ে দেয় , উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী যে কোন উপায় পড়ুয়াদের আন্দোলনকে ভাঙতে চাইছেন , যদি কোনো উপায়ে আন্দোলনকে ভেঙে ফেলতে পারে তাহলে উপাচার্যের সামনে আর কোন এমন শক্তি থাকবে না যারা তাঁর অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারবে।
সোমবার বিশ্বভারতী তরফে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় , সেই বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যেসব পড়ুয়ারা পরীক্ষা বয়কট করেছে তাদের ফেল করিয়ে দেওয়া হবে।এই ধরনের বিজ্ঞপ্তি জারি করে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চাইছে উপাচার্য , বিগত কয়েক দিন ধরে আমরা পড়ুয়ারা শান্তিপূর্ণভাবে গণঅবস্থান করে যাচ্ছি নিজেদের দাবি আদায়ের জন্য , কর্তৃপক্ষ আমাদের দাবিগুলো কে গুরুত্ব দিচ্ছেন না , উল্টে আমাদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে এমন এমন মামলা উপাচার্য করেছেন যা দেখে আমরা হতবাক।
যদিও আন্দোলনরত পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে বিশ্বভারতীর করা মামলায় বিচারপতি সন্তুষ্ট হয়নি সেটা বিচারপতির নির্দেশে দেখেই বোঝা যাচ্ছে , মামলার শুনানিতে বিচারপতি স্পষ্ট করে বিশ্বভারতী কে নির্দেশ দেয় , যেহেতু গত এগারো তারিখ থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল বিশ্বভারতী তাই অবিলম্বে ছাত্র ছাত্রীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ছাত্রাবাসগুলো খুলে দিতে হবে জরুরী ভিত্তিতে , কিন্তু বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ অমান্য করে, ছাত্রাবাসগুলো খোলেনি উল্টে এমন পরিস্থিতি তৈরি করছে যা দেখে মনে হবে পড়ুয়াদের গণঅবস্থানের জন্য ছাত্রাবাসগুলো খুলতে পারছে না বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ , এত কিছুর পরেও যখন টনক নড়ছে না তখন বাধ্য হয়ে আমরণ অনশনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছি।
এরপর আন্দোলনরত পড়ুয়ারা বাংলাদেশ ভবনের সামনে গিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে , অবশেষে গভীর রাতে কর্তৃপক্ষ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ফেল করানোর যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল সেই বিজ্ঞপ্তি ফিরিয়ে নেয়। উপাচার্যের ভূমিকার কড়া নিন্দা করে প্রবীণ আশ্রমিক সুবোধ মিত্র জানিয়েছেন , উপাচার্যকে বিশ্বভারতী থেকে তাড়াতে হবে , নইলে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী হিটলারকে ছাপিয়ে যাবেন , সময় থাকতে ওনার মত মস্তিষ্ক বিকৃত মানুষকে যদি বিশ্বভারতী থেকে বিতাড়িত না করা যায় তাহলে বিশ্বভারতী ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রে সাংসদ অসিত মাল জানিয়েছেন , পড়ুয়ারা নিজেদের অধিকার আদায় করতে গিয়ে আমরণ অনশনে বসতে হয় তবে আমাদের সকলের লজ্জা।
আর ও পড়ুন ঘরের মধ্যেই গৃহবধূকে হত্যা করে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ
ছাত্র-ছাত্রীরা দেশের ভবিষ্যৎ , তারাই তো দেশ গড়ার ডাক দিয়ে আন্দোলন করবে , উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী কে বুঝতে হবে ঈদের মামলা দিয়ে কখনও থামানো যায় না। আমার বিশ্বাস পড়ুয়াদের আত্মবিশ্বাসের কাছে হার মানতে হবে। এখনো সময় রয়েছে সন্তান সম আন্দোলনরত পড়ুয়াদের ডেকে সস্নেহে তাদের কথা শুনুন, তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিন , সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কিন্তু অহংকার কে অস্ত্র করে গোয়ার্তুমি মনোভাব বজায় রাখেন তাহলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। যদিও সূত্র মারফত জানা যাচ্ছে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী সাথে কর্মসচিব আশিস আগরওয়ালের একাধিক বিষয়ে মতানৈক্য তৈরি হয়েছে , তার জেরেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তিনি।