রাজ্য – এক মুহূর্তের জন্যও ইনস্যাট স্যাটেলাইটের থ্রি-ডি রাডার ইমেজারি থেকে চোখ সরাতে পারছেন না মৌসম ভবনের আবহাওয়াবিদরা। কারণ, আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে অন্ধ্রপ্রদেশের কাঁকিনাড়ার কাছে ‘তীব্র ঘূর্ণিঝড়’ হিসেবে আছড়ে পড়তে চলেছে ঘূর্ণিঝড় ‘মান্থা’ (Cyclone Montha)। তবে আবহাওয়াবিদদের উদ্বেগের কেন্দ্র শুধু অন্ধ্র উপকূলে সীমাবদ্ধ নয়—ল্যান্ডফলের প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার দূরের উত্তরবঙ্গেও পড়তে পারে এর পরোক্ষ প্রভাব।
যদিও ঘূর্ণিঝড়ের মূল আঘাত উত্তরবঙ্গে পৌঁছাবে না, তবে ‘মান্থা’র ল্যান্ডফলের পরবর্তী তিন দিনে এর ‘আফটার ইফেক্ট’-এর কারণে উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি ও আবহাওয়া পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। সদ্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই নতুন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে পাহাড় ও ডুয়ার্স অঞ্চলে।
তিন দশকের রেকর্ডে ফের এক ভয়ঙ্কর অক্টোবর সাইক্লোন
অক্টোবর মাসে বঙ্গোপসাগরে গঠিত ঘূর্ণিঝড়ের ইতিহাস ভয়াবহ। ২০১৮ সালের ‘তিতলি’, ২০১৩ সালের ‘ফিলিন’ এবং ১৯৯৮ সালের সুপার সাইক্লোন—সবক’টিই ছিল প্রাণঘাতী। ‘তিতলি’তে প্রাণ হারান ৮৫ জন, ‘ফিলিন’-এ ৪৬ জন, আর ১৯৯৮ সালের সুপার সাইক্লোন কেড়ে নিয়েছিল অন্তত ১০ হাজার মানুষের জীবন। তাই এই ঘূর্ণিঝড় ‘মান্থা’-কে কোনোভাবেই হালকা ভাবে নিচ্ছেন না আবহবিদরা।
ল্যান্ডফলের আগে সতর্কতা জারি
সোমবার সকালে দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের অতি গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় এবং ঘণ্টায় প্রায় ১৭ কিলোমিটার বেগে অন্ধ্র উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। সোমবার রাত পর্যন্ত এটি কাঁকিনাড়া থেকে প্রায় ৪৩০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল। অনুমান করা হচ্ছে, আজ সন্ধ্যার পরে ‘মান্থা’ আরও শক্তি সঞ্চয় করে ‘তীব্র ঘূর্ণিঝড়’ হিসেবে অন্ধ্র উপকূলে আছড়ে পড়বে। সেই সময় বাতাসের গতি ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে মৌসম দফতর।
ল্যান্ডফলের পর দুর্বল হবে ঘূর্ণিঝড়, কিন্তু বৃষ্টি চলবে
আবহাওয়া দফতরের মতে, ল্যান্ডফলের পরে ঘূর্ণিঝড়টি দ্রুতই শক্তি হারিয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। এরপর তা অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে ওড়িশা, ছত্তীসগড় হয়ে উত্তরপ্রদেশের দিকে অগ্রসর হবে। এই প্রক্রিয়ায় প্রচুর জলীয় বাষ্প জমে যাবে, যার ফলে উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত হতে পারে।
উত্তরবঙ্গে ফের ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ৩০ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলায় ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তার পরের দিন ৩১ অক্টোবর (শুক্রবার) দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারসহ উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় অতি ভারী বৃষ্টির (৭–২০ সেমি) সম্ভাবনা রয়েছে। সেই জন্য ওই দিন কমলা সতর্কতা (Orange Alert) জারি করা হয়েছে।
অক্টোবরের শুরুতেই উত্তরবঙ্গ যে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল, তার ক্ষত এখনও শুকায়নি। সেই পরিস্থিতিতেই ফের ঘূর্ণিঝড়জনিত ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা নতুন করে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে উত্তরবঙ্গে।



















