মাছ চাষের আদর্শ পুকুরের বৈশিষ্ট্য

মাছ চাষের আদর্শ পুকুরের বৈশিষ্ট্য

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram
আদর্শ

মাছ চাষের আদর্শ পুকুরের বৈশিষ্ট্য। মাছ চাষের পুকুরের কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার যা চাষ প্রক্রিয়াকে লাভজনক করতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। একটি আদর্শ মাছ চাষের পুকুরের সম্পর্কে জানুন।

 

আদর্শ পুকুরের বৈশিষ্ট্য
মাছ চাষের পুকুরের কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার যা চাষ প্রক্রিয়াকে লাভজনক করতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। একটি আদর্শ মাছ চাষের পুকুরের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো থাকা প্রয়োজন-
১। পুকুরটি বন্যামুক্ত হবে। এজন্য পুকুরের পাড় যথেষ্ট উঁচু হতে হবে।
২। পুকুরের মাটি দোআঁশ, পলি- দোআঁশ বা এঁটেল- দোআঁশ হলে সবচেয়ে ভালো।
৩। সারা বছর জল থাকে এমন পুকুর চাষের জন্য অধিক উপযুক্ত।
৪। পুকুরের জলের গভীরতা ০.৭৫-২ মিটার সুবিধাজনক।
৫। পুকুরটি খোলামেলা স্থানে হলে ভালো হয় এবং পাড়ে বড় গাছপালা থাকবে না। এতে পুকুর প্রচুর আলো-বাতাস পাবে। ফলে পুকুরে সালোকসংশ্লেষণ বেশি হবে ও মাছের খাদ্য বেশি তৈরি হবে। জলে পর্যাপ্ত অক্সিজেন মিশবে। উত্তর-দক্ষিণমুখী পুকুর সুর্যালোক বেশি পাবে।
৬। পুকুরের তলায় অতিরিক্ত কাদা থাকা উচিত নয়। তলার কাদার পুরুত্ব ২০-২৫ সে.মি. এর বেশি হওয়া ঠিক নয়।
৭। চাষের পুকুরের আয়তন ২০-২৫ শতক হলে ব্যবস্থাপনা সহজ হয় । পুকুরের আকৃতি আয়তাকার হলে ভালো। এতে করে জাল টেনে মাছ আহরণ করা সহজ হয়।
৮। পুকুরের পাড়গুলো ১:২ হারে ঢালু হলে সবচেয়ে ভালো। অর্থাৎ পুকুরের তলা হতে পুকুরের পাড় যতটুকু উঁচু হবে পাড় ঢালু হয়ে পুকুরের তলার দিকে দ্বিগুণ দূরত্বে গিয়ে মিশবে।

 

মাছ চাষের পুকুরের জলের গুণাগুণ
মাছের বেঁচে থাকা, খাদ্যগ্রহণ ও আশানুরূপ বৃদ্ধির জন্য পুকুরের জলের গুণাগুণ অনুকূল মাত্রায় থাকা দরকার। পুকুরে জলের গুণাগুণকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
১) ভৌত গুণাগুণ
২) রাসায়নিক গুণাগুণ।
মাছ চাষে এদের প্রভাব সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

 

ভৌত গুণাগুণ
ক) গভীরতা : পুকুর বেশি গভীর হলে সূর্যের আলো পুকুরের অধিক গভীরতা পর্যন্ত পৌছাতে পারে না। ফলে অধিক গভীর অঞ্চলে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য প্লাংকটন তৈরি হয় না। আবার সেখানে অক্সিজেনের অভাব হতে পারে। অন্যদিকে পুকুর অগভীর হলে গ্রীষ্মকালে পুকুরের জল অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়। এসব কারণে মাছের ক্ষতি হতে পারে ও উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।

 

খ) তাপমাত্রা: তাপমাত্রার বৃদ্ধির উপর মাছের বৃদ্ধির নির্ভর করে। যেমন- মাছের বৃদ্ধি কমে যায়। একারণে শীতকালে পুকুরে সার ও খাদ্য প্রয়োগের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হয়। রুই জাতীয় মাছের বৃদ্ধি ২৫-৩০ক্ক সে. তাপমাত্রা সবচেয়ে ভালো হয়।

গ) ঘোলাত্ব : কাদা কণার কারণে পুকুরের জল ঘোলা হলে জলে সূর্যালোক প্রবেশে বাধা পায়। এতে করে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়।

ঘ) সূর্যালোক: যে পুকুরে সূর্যালোক বেশি পড়ে সেখানে সালোকসংশ্লেষণ ভালো হয়। ফলে সেখানে ফাইটোপ্লাংটন বেশি উৎপাদিত হয় ও মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।

 

রাসায়নিক গুণাগুণ
ক) দ্রবীভূত অক্সিজেন: পুকুরের জলে দ্রবীভূত অক্সিজেন মাছ চাষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানত ফাইটোপ্লাংকটন ও জলজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় যে অক্সিজেন তৈরি করে পুকুরের জলে দ্রবীভূত হয়। বায়ুমণ্ডল হতে সরাসরি জলের উপরিভাগেও কিছু অক্সিজেন মিশ্রিত হয়। পুকুরে বসবাসকারী মাছ, জলজ উদ্ভিদ ও অন্যান্য প্রাণী এ অক্সিজেন দ্বারা শ্বাসকার্য চালায়। রাতে সূর্যালোকের অভাবে সালোকসংশ্লেষণ হয় না বলে জলে কোনো অক্সিজেন তৈরি হয় না। এজন্য সকালে পুকুরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় ও বিকেলে বেশি থাকে। মাছ চাষের জন্য পুকুরের জলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমপক্ষে ৫ মিলি গ্রাম/লিটার (৫ পিপিএম বা ১ মিলিয়ন ভাগের পাঁচ ভাগ) থাকা প্রয়োজন।

 

খ) দ্রবীভূত কার্বনডাই অক্সাইড: পুকুরে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য ফাইটোপ্লাংকটনের উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত দ্রবীভূত কার্বন ডাই অক্সাইড থাকা প্রয়োজন। তবে মাত্রাতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড মাছের জন্য ক্ষতিকর। জলে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা ১২ মিলি গ্রাম/লিটারের (১২ পিপিএম) নিচে থাকলে তা মাছ ও চিংড়ির জন্য বিষাক্ত নয়। মাছের ভালো উৎপাদন পাওয়ার জন্য পুকুরের জলে ১-২ পিপিএম কার্বন ডাই অক্সাইড থাকা প্রয়োজন।

 

গ) পিএইচ : মাছ চাষের জন্য পুকুরের পানির পিএইচ ৬.৫ হতে ৮.০ এর মধ্যে হলে ভালো হয়। ৬.৫ এর নিচে পিএইচ হলে মাছের বৃদ্ধি কমে যায়। পিএইচ ৪ এর নিচে বা ১১ এর উপরে হলে মাছ মারা যায়। জলের পিএইচ কমে গেলে পুকুরে চুন (১-২ কেজি/শতক) প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরে ক্ষারীয় অবস্থা বেশি বেড়ে গেলে এমোনিয়াম সালফেট বা তেতুঁল জলে গুলে পুকুরে প্রয়োগ করা যেতে পারে।

 

ঘ) ফসফরাস: প্রাকৃতিক জলে অতি অল্প পরিমাণ ফসফরাস থাকে। এই ফসফরাস ফসফেটে রূপান্তরিত হয়। পরিমিত ফসফেটের উপস্থিতিতে প্রচুর পরিমাণ ফাইটোপ্লাংটন জন্মায়।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top