আদিবাসিদের স্বনির্ভরতার দিশা দেখাল গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েত। রাজ্য সরকারের ‘উষর মুক্তি’ প্রকল্পে ‘করলা’ চাষ করে আদিবাসী কৃষকরা চলতি বছরে প্রায় ২ লক্ষ টাকার লাভ পেয়েছে। গোপালপুর পঞ্চায়েতের অধিন ফরাকিডাঙ্গা আদিবাসী গ্রাম। ফরাকিডাঙ্গার প্রায় ১৫ বিঘে জমিতে আগেই ১০০ দিনের প্রকল্পে আদিবাসী শ্রমিকরা আম ও লিচু বাগান তৈরি করেছিল।
সেই আম ও লিচু বাগানের খালি অংশে উড়িষ্যা থেকে ১১ হাজার বিশেষ করলা বীজ আনিয়ে পঞ্চায়েতের তরফ থেকে আদিবাসী চাষিদের দিয়ে রোপণ করানো হয়। বীজ আনাতে পঞ্চায়েতের খরচ হয় প্রায় ৪০ হাজার টাকা। সেই বীজ রোপণ করে ‘করলা’ ফলিয়ে আদিবাসী ১০টি পরিবার প্রায় ২ লক্ষ টাকা লাভের মুখ দেখল চলতি বছরে বলে জানান পঞ্চায়েত প্রধান জয়জিৎ মন্ডল। এরপর সেই জমিতে বড়বটি ও বিন্স চাষের পরিকল্পনা নিয়েছে পঞ্চায়েত। যার, বীজ রোপণের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
গোপালপুর পঞ্চায়েত প্রধান জয়জিৎ মন্ডল বলেন, পঞ্চায়েতের তরফ থেকে বিভিন্ন সময় প্রয়োজনীয় নাগরিক পরিষেবা দেওয়ার পাশাপাশি মানুষের চাহিদামত অন্যান্য পরিষেবার দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়। তিনি বলেন, পশ্চিম বর্ধমান জেলায় প্রথম গোপালপুর পঞ্চায়েত ‘মাতৃ ও শিশু বান্ধব’ কক্ষ তৈরি করে পঞ্চায়েত অফিসে। যার ফলে দূর দুরান্ত থেকে পঞ্চায়তের বিভিন্ন কাজে আসা এবং স্থানীয় গোপালপুর বাজারে নিত্যদিন আসা মায়েরা তাদের শিশুকে মাতৃ দুগ্ধ পান করাতে পারেন। খোলা বাজারে যা মায়েদের কাছে অসুবিধে বোধ হয়।
তিনি বলেন, গতবছর ‘মাতৃ ও শিশু বান্ধব’ কক্ষের উদ্বোধন করেন দুর্গাপুর পূর্ব বিধানসভার বিধায়ক তথা বর্তমান রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার। এছাড়াও পঞ্চায়েতের তরফ থেকে স্থানীয় পড়ুয়া সহ আম জনগণের জন্য ‘স্ট্রিট লাইব্রেরী’ তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ৬০ হাজারের অধিক টাকা ব্যায় করে এই লাইব্রেরী-তে বিভিন্ন জরুরি বইপত্র এনে তা শুরু করা হয়। এখন সেই ‘স্টিট লাইব্রেরীর’ বই সংখ্যা আরও বাড়ানোর পাশাপাশি মানুষের চাহিদামত বইপত্র রাখার ব্যাবস্থা নিত্য করা হচ্ছে। ফলে উপকৃত হচ্ছেন অনেকেই। তিনি বলেন, পঞ্চায়েত এলাকার বহু সংখ্যক মানুষের চাহিদা ছিল একটি কমিউনিটি হলের।
মানুষের চাহিদা মত পঞ্চায়েতের তরফ থেকে একটি কমিউনিটি হল তৈরি করা হয়। এরফলে উপকৃত হচ্ছে পঞ্চায়েত এলাকার মানুষেরা। তারা বিভিন্ন সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে একদম স্বল্প মুল্যে এই কমিউনিটি হলটি ব্যাবহার করতে পারছেন। জয়জিৎ মন্ডল বলেন, এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের চাহিদা পরিশুদ্ধ পানীয় জলের। সেইমত পঞ্চায়েতের তরফ থেকে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা ব্যায় করে একটি ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ বাসানো হচ্ছে। যার ৮০ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে। বাকি কাজ দ্রুত শেষ করা হবে।
আরও পড়ুন – জেলার দাবিতে বিডিওর মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি প্রদান
এরফলে ২০ লিটার জলের জার ভর্তি করতে সাধারণের খরচ পড়বে ৮ থেকে ৯ টাকা। এতে মানুষের পরিশুদ্ধ পানীয় জলের সমস্যা মিটবে বলে তিনি আসা করেন। এছাড়াও তিনি বলেন, পঞ্চায়েতের ২৫টি সংসদ এলাকার অধিকাংশতেই সৌর বাতি লাগানোর কাজ হয়েছে। বাকি পুজোর পর থেকে ফের সৌর বাতি লাগানোর কাজ শুরু করা হবে। তবে, সড়ক ও নিকাশি নালার কাজ অনেকটাই হয়ে গিয়েছে।
পুজোর পর আবারও বেশকিছু সড়ক ও নিকাশি নালা নির্মাণ এবং মেরামতির কাজ শুরু করা হবে বলে তিনি জানান। শেষে গোপালপুর পঞ্চায়েত প্রধান জয়জিৎ মন্ডল জানান, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ এবং তাঁর পরিকল্পনাগুলি বাস্তবে রূপ দেওয়ার কারণে, গ্রাম বাংলা আজ অনেক উন্নয়ন করেছে। তাই আজ এগিয়ে বাংলা।