আবারও মহারাজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জল্পনা শুরু

আবারও মহারাজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জল্পনা শুরু

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

আবারও মহারাজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জল্পনা শুরু । কবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় রাজনীতিতে যোগ দেবেন? যোগ দিলে কোন দলকে বাছবেন? দীর্ঘ দিন ধরে এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। বাংলার প্রায় সব প্রধান দলই নানা সময়ে সৌরভকে নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করেছে। ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন অধিনায়ক প্রত্যেকবারই সযত্নে এবং বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তা এড়িয়ে গেছেন।

 

সবাইকে এড়িয়ে গেলেও পাশাপাশি এ-ও সত্যি, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের এখনকার সভাপতির সঙ্গে সব রাজনৈতিক দলেরই সুসম্পর্ক। শুক্রবার সৌরভের বাড়িতে  অমিত শাহ-এর নৈশভোজে যাওয়া এবং শনিবার একটি অনুষ্ঠানে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের পাশে বসে সেই সৌরভেরই ‘মুখ্যমন্ত্রী আমার কাছের মানুষ’ বলার মধ্য দিয়ে তা আবার প্রমাণিত।

 

বাম আমলে সৌরভ তৎকালীন পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। উত্তরবঙ্গের এই নেতার আমন্ত্রণে তখন শিলিগুড়িতে স্টেডিয়াম উদ্বোধনেও গিয়েছিলেন সৌরভ। ২০২১ সালের শুরুতে সৌরভ যখন হৃদরোগে আক্রান্ত হন, তখন অশোক তাকে বাড়িতে গিয়ে দেখে আসেন। পর দিনই তিনি জানান, সৌরভকে রাজনীতিতে আসার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে। যে ‘চাপ’ সৌরভের অসুস্থতার কারণ। তিনি সৌরভকে রাজনীতিতে না আসারই পরামর্শ দিয়েছেন। রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল না বিরোধী দল বিজেপি ওই ‘চাপ’ দিচ্ছে, তা অবশ্য খোলসা করেননি অশোক।

 

প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টচার্যেরও ঘনিষ্ঠ সৌরভ। দু’জনের সম্পর্ক এতটাই ভাল ছিল যে, একটা সময় জগমোহন ডালমিয়ার বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিলেন সৌরভ। অথচ, মনে করা হয় এক অর্থে ডালমিয়াকেই ‘মেন্টর’ হিসেবে মানতেন সৌরভ। সেটা ২০০৬ সাল। বাংলার ক্রিকেট নিয়ামক সংস্থা সিএবি-র নির্বাচনে সভাপতি পদে ডালমিয়ার বিরুদ্ধে প্রার্থী হন কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার প্রসূন মুখোপাধ্যায়। তাকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেছিলেন বুদ্ধদেব। সৌরভও সমর্থন করেছিলেন প্রসূনকে। ভোটে শেষ পর্যন্ত ডালমিয়াই জয়ী হয়ে সিএবি সভাপতি হন। বুদ্ধদেব তখন বলেছিলেন, ‘অশুভ শক্তির কাছে শুভ শক্তির পরাজয়।’

 

৯ বছর পর ২০১৫ সালে ডালমিয়ার প্রয়াণের পর সৌরভই সিএবি-তে তার চেয়ারে বসেন। ক্রিকেট প্রশাসনে সৌরভের সেই অভিষেকও রাজনীতিমুক্ত ছিল না। কারণ, নবান্নে সৌরভকে পাশে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, সৌরভই সিএবি-র পরবর্তী সভাপতি। সেখানেই তিনি ঘোষণা করেন, ডালমিয়া-পুত্র অভিষেক হবেন সিএবি সচিব। সে বার কোনও নির্বাচন হয়নি সিএবি-তে। বিজেপি এবং বামপন্থী নেতারা তার কড়া সমালোচনাও করেছিলেন। ২০১৯ সালে ভারতীয় ক্রিকেট প্রশাসনে নাটকীয় পরিবর্তন হয়।

 

আরও এক বার সৌরভের সঙ্গে রাজনীতি জড়িয়ে পড়ে। লোঢা কমিশনের সুপারিশে ২০১৯ সালে বোর্ড সভাপতির পদ থেকে সরে যেতে হয় নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনকে। শ্রীনিবাসনের জায়গায় তারই ঘনিষ্ঠ ব্রিজেশ পটেলের নাম বোর্ড সভাপতি হিসেবে উঠে আসে। ব্রিজেশের ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান হওয়া প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। অনেকে তাকে অভিনন্দনও জানিয়ে দেন। কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে খবরও প্রকাশিত হয়ে সেই মর্মে। কিন্তু একেবারে শেষ মুহূর্তে পুরো ছবিটিই বদলে যায়। বোর্ড সভাপতি পদে সৌরভও মনোনয়ন জমা দেন। নির্বাচন হয়। সেখানে নাটকীয়ভাবে ব্রিজেশকে হারিয়ে সৌরভই বোর্ড সভাপতি হন।

আর ও পড়ুন     বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের সন্দেহে স্ত্রীকে কুপিয়ে খুন করলো স্বামী

জনশ্রুতি, প্রাক্তন ক্রিকেটার, প্রাক্তন বোর্ড সভাপতি এবং বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুরের উদ্যোগেই সৌরভ মনোনয়ন জমা দেন। আরও গভীরে ঢুকে অনেকে প্রশ্ন তোলেন, হঠাৎ অনুরাগ কেন সৌরভকে বোর্ড সভাপতি করতে উদ্যোগী হলেন? এর পেছনে কি শক্তিশালী কারও মস্তিষ্ক রয়েছে? জবাবও খুঁজে বার করা হয়। অমিত শাহ প্রথমে সৌরভের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারপর আসামের মুখ্যমন্ত্রী এবং আসাম ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন সভাপতি হিমন্ত বিশ্বশর্মা বোর্ড সদস্যদের নির্বাচনে অংশ না নেয়ার জন্য বলেন।

 

ঘটনাপ্রবাহে শেষমুহূর্তের নাটকীয় মোচড়ে সৌরভ বোর্ড সভাপতি হয়ে যান! অমিত-পুত্র জয় শাহ ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সচিব পদে বসেন। এরপর জোর জল্পনা শুরু হয় ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে ‘দাদা বনাম দিদি’ লড়াই নিয়ে। সৌরভই না কি বাংলার নির্বাচনে ‘বিজেপি-র মুখ’ হিসেবে থাকবেন। সৌরভ বোর্ড সভাপতি হওয়ার সময় না কি তেমনই ‘কথা’ হয়েছিল। যদিও সৌরভ বা বিজেপি- কোনও পক্ষই এ ব্যাপারে কখনও কিছু বলেনি।

 

বাংলার রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল অনেকে এখনও মনে করেন, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে সৌরভ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে না পড়লে ‘দাদা বনাম দিদি’ হয়ে যেতেই পারত। তবে সৌরভ তখনই বলে দিয়েছিলেন, তিনি তখন রাজনীতিতে আসতে আগ্রহী নন। তবে কোনওদিন যে আসবেন না, তেমন কিছুও তিনি বলেননি। শুক্রবার সৌরভের বাড়িতে শাহের নৈশভোজ এবং শনিবার একটি অনুষ্ঠানে দাদার মুখে ‘দিদি আমার কাছের মানুষ’ বলার মধ্য দিয়ে আবার মহারাজের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top