নদীয়া-স্বপ্ন ছিল উচ্চশিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। সে আশায় জল ঢেলে দিল আর্থিক অনটন। অর্থের কাছে হার মেনে অবশেষে বাধ্য হয়ে বিয়ে করতে হলো বিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী দেবী রায় কে। বাড়ি নদীয়ার রানাঘাট থানার অন্তর্গত হবিবপুরে। পাঁচ বছর আগে নদীয়ার শান্তিপুর থানার অন্তর্গত কৃষি পল্লী এলাকায় বিয়ে হয় তার।
স্বামী অমৃত বারুই দিনমজুরের কাজ করেন। কোন রকমে সংসার চলে তাদের। অন্যদিকে সদ্য বিবাহিতা দেবী রায়ের জেদ ছিল তিনি উচ্চশিক্ষিত হবেন। বাড়ি থেকে তাকে বিয়ে দিয়ে দিলেও সেই অদম্য ইচ্ছা তাকে হার মানাতে পারেনি। নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে তার স্বামীর কাছে।
দীর্ঘ আর্থিক অনটন সত্বেও তার স্বামী তার স্ত্রীর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সদিচ্ছা প্রকাশ করেন। স্বামীর রোজগারে কোনরকম সংসার চলতো তাদের। পড়াশুনার বাড়তি টাকা যোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছিল তারা। অবশেষে দেবী রায় নিজেই কর্ম করার আগ্রহ প্রকাশ করে। এরপরে একটি টুকটুকি কিনে নিজেই চালানো শুরু করে। সেই টুকটুকি চালিয়ে বাড়তি যা রোজগার হতো তাই দিয়ে তার পড়াশোনার খরচ চালাতো সে। অবশেষে তার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট শুধু নয় তিনি এমএ পাস করেন।
এ বিষয়ে দেবী রায় বলেন, এত শিক্ষিত হয়ে টুকটুকি চালাবো কখনো ভাবিনি। কিন্তু কাজ তো ছোট নয়, নিজের স্বার্থে আমি এই কাজটা করছি। তবে সমাজের তরফে অনেক কটুক্তি এবং হাসাহাসি শুনতে হয়েছে আমাকে। কিন্তু আমি কোন দিকে কান না দিয়ে নিজের কাজ নিজে করে যাচ্ছি। আগামী দিনের প্রতিটি মেয়েদের বলবো কোন সমাজের কথা না ভেবে লজ্জা না পেয়ে এইভাবে নিজের ক্ষমতায় নিজেকে উপস্থাপনা করার।
অন্যদিকে দেবী রায়ের স্বামী অমৃত বারুই বলেন, আমি সব সময় আমার স্ত্রীকে সমর্থন করি। আর্থিক অনটনের কারণে ও নিজেই নিজের কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। আমিও পিছপা হইনি। ও নিজের অর্থ উপার্জন করে পড়াশোনা চালিয়ে গেছে এতে আমি অনেক খুশি।
অন্যদিকে প্রতিবেশীরা বাহবা জানিয়েছে দেবী রায় কে। একজন নিজেকে উচ্চ শিক্ষিত করার তাগিদে মেয়ে হয়ে কিভাবে নিজের পায়ে নিজে দাঁড়িয়ে অর্থ উপার্জন করে পড়াশোনা চালিয়ে গেছে তার কারণে কুর্নিশ জানিয়েছে প্রতিবেশীদের তরফে।
