কলকাতা – আলিপুর চিড়িয়াখানায় মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে মারা গেল দুই বাঘিনী। মঙ্গলবার প্রথমে মৃত্যু হয় বাঘিনী পায়েলের। আর তার ঠিক পরের দিনই মারা যায় আর এক বাঘিনী রূপা। টানা দু’দিনে দুটি মৃত্যুই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে চিড়িয়াখানায়।
অরণ্য ভবন সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, বার্ধক্যজনিত কারণেই মৃত্যু হয়েছে দুই বাঘিনীর। তবে ঘটনাটিকে ঘিরে রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। তাই সিডব্লিউএলডব্লিউ নির্দেশে ইতিমধ্যেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
চিড়িয়াখানা সূত্রে খবর, বাঘিনীদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতেই দেহ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি ভিসেরা পরীক্ষাও করা হবে। ফলাফলের পরেই নিশ্চিত হওয়া যাবে প্রকৃত কারণ।
রূপার জন্ম হয়েছিল আলিপুর চিড়িয়াখানাতেই। সে ছিল সাদা বাঘ অনির্বাণ ও হলুদ-কালো ডোরাকাটা বাঘিনী কৃষ্ণার সন্তান। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল প্রায় ২১ বছর।
রূপা দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যায় ভুগছিল। তার একটি পা প্যারালাইসিস হয়ে গিয়েছিল। হাঁটার ক্ষমতাও অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছিল সে। শেষমেশ শারীরিক দুর্বলতায় মৃত্যু হয় তার।
অন্যদিকে, পায়েলকে ২০১৬ সালে ওড়িশার নন্দনকানন থেকে আলিপুরে আনা হয়েছিল। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল প্রায় ১৭ বছর।
পায়েলও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতায় ভুগছিল। কয়েক মাস ধরেই খাওয়াদাওয়া একেবারে ছেড়ে দিয়েছিল। স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছিল প্রতিদিনই।
তিন মাস আগে পায়েলের ইউএসজি করা হয়। রিপোর্টে বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা ধরা পড়েছিল। এরপরই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
চিকিৎসায় কিছুদিনের জন্য সাড়া দিয়েছিল পায়েল। তবে শেষমেশ আর সুস্থ হয়ে উঠতে পারেনি। মঙ্গলবার সকালে মারা যায় সে।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হলেও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভিসেরা রিপোর্ট এলে রহস্যের জট খুলতে পারে।
এমন ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন আলিপুর চিড়িয়াখানার আধিকারিকরা। তাঁদের দাবি, যথাসাধ্য চিকিৎসা ও যত্ন নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বয়সজনিত সমস্যার কাছে শেষমেশ হার মানতে হয়েছে।
চিড়িয়াখানার কর্মীরাও প্রিয় বাঘিনীদের মৃত্যুতে শোকাহত। অনেকেরই সঙ্গে ছিল বছরের পর বছর ধরে গড়ে ওঠা সম্পর্ক।
টানা ২৪ ঘন্টায় দুটি বাঘিনীর মৃত্যুতে প্রাণীপ্রেমীদের মধ্যেও প্রশ্ন উঠছে। তাঁদের একাংশের দাবি, বিষয়টি নিয়ে আরও গভীর তদন্ত প্রয়োজন।
একই সঙ্গে, চিড়িয়াখানায় অন্যান্য বাঘেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ওপরও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে সূত্রে খবর। যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যায়।
এই মুহূর্তে আলিপুর চিড়িয়াখানার পরিবেশ ভারাক্রান্ত। একদিনের ব্যবধানে দুই প্রিয় বাসিন্দাকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ কর্তৃপক্ষ, কর্মী ও প্রাণীপ্রেমীরা।
