এবারে দেশের গৌরব মুকুট বেচতে উদ্যোগী নমঃ সরকার। ১০বছরের ধরে মোদি সরকারের দীর্ঘ পরিকল্পনার পর এবারে দার্জিলিংয়ের ( Northbengal ) ওয়াল্ড হেরিটেজ তকমাবাহি পাহাড় তথা উত্তবঙ্গের ঐতিহ্য টয়ট্রেন উঠছে দাড়িপাল্লায়। রেলের স্বদিচ্ছার অভাবে ঐতিহ্যবাহী খেলনা গাড়ির অস্তিত্ব বিপন্নতার মুখে!
রেলের গড়িমসি মনোভাবে বিশ্বের দরবারে প্রসিদ্ধ খেলনা গাড়ির ইউনেস্কোর ওয়াল্ড হেরিটেজ তকমা নিয়ে অনিশ্চয়তা দানা বাঁধছে! ইতিমধ্যেই বেসরকারিকরন নিয়ে পাহাড়ের প্রতিটি স্টেশনে জোড় বিক্ষোভে নেমেছে পাহাড়বাসী। পর্যটন সার্কিটের তরফে বেসরকারিকরনের বিরোধীতায় চিঠি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। অভিযোগ ব্রিটিশ আমলের ট্র্যাক সংশোধনে কোনো নজর নেই রেলের। পঙ্গু করে রাখা হয়েছে তিনধরিয়া হেরিটেজ ওয়ার্কশপকেও।
ফি বছর বারংবার পাহাড় ( Northbengal ) ধসের মুখে পড়ে দীর্ঘ সময় ন্যারোগেজ লাইন বন্ধ থাকে। অনির্দিষ্ট সময়ের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে থাকে টয়ট্রেন পরিষেবা। তা সত্ত্বেও দ্রুত ট্র্যাক থেকে ধস সরানোর কাজের জন্য রেলের তরফে নিযুক্ত কর্মী নেই ওয়ার্কশপে। ওয়ার্কশপের কর্মীরা জানান ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগকে অস্থায়ী ঠিকা কর্মীদের নিয়ে ধস সরানোর কাজে নামতে হয়। এতে কাজে সময় বিলম্বিত হয়।
ওয়ার্কশপের অভিজ্ঞ বাস্তুকারেরা জানান টয়ট্রেন পরিষেবা নিয়মিত চালু রাখতে হলে পাহাড় ও রেল ট্র্যাকের মাঝে সাইড গার্ড ওয়াল করা প্রয়োজন। বড় মাপের সিদ্ধান্তের অভাব তো রয়েই গিয়েছে এমনকি সয়েল বাইন্ডিং, ন্যারোগেজ ট্র্যাকে আগাছা সাফাইয়ের মতো রক্ষণাবেক্ষণের নূন্যতম কাজও নিয়মিত করা হয়না।
আর ও পড়ুন কলকাতায় ( Kolkata ) ধেয়ে আসছে ভারী বৃষ্টি
যদিও এক রেল অধিকর্তার বক্তব্য তিনধরিয়ায় ৫০০ফিট গার্ড ওয়ালের কাজ শুরু হয়েছে। vপাগলাঝোড়া থেকে তিনধরিয়া পর্যন্ত আয়রন নেট দিয়ে সয়েল বাইন্ডিংয়ের কাজ চলছে। তবে প্রশ্ন দীর্ঘ দেড় বছর টয় ট্রেন ( Northbengal ) পরিষেবা বন্ধ ছিল। কেন সে সময়কে কাজে লাগিয়ে এই রক্ষণাবেক্ষনের কাজ গুলিতে জোড় দেওয়া হলোনা রেলের তরফে?
এতটা সময়তেও ধস প্রতিরোধে আয়রন নেট দিয়ে সয়েল বাইন্ডিংয়ের কাজ কেন শেষ করা গেলোনা? তাহলে অনন্ত ১৭মাস পর সমতল-পাহাড়ের মাঝে পরিষেবা চালুর পরই থামতে হতো না টয়ট্রেনকে। এবিষয়ে উত্তর পূর্ব রেলের কাটিহার ডিভিশনের ডিআরএম শুভেন্দু কুমার চৌধুরী জানান সে সময়তে হয়তো রেলের ফান্ডের সমস্যা ছিল তাই করা যায়নি।
এদিকে সূত্রের খবর ইতিমধ্যেই রেলের সঙ্গে একটি প্রতিনিধি দল তিনধরিয়া ওয়ার্কশপে ঘুরে বেসরকারিকরনের বিষয়ে একটি মৌখিক আলোচনা সেরে ফেলেছে।গত শনিবার ডিআরএম পর্যবেক্ষনে ডিএইচআর কর্মীদের জানিয়েছে ইতিহাসের সাক্ষীবহন করে চলা ন্যারোগেজ ট্যাক অথবা খেলনা গাড়ি, টিকিট বুকিং সংক্রান্ত বিভাগ বেসরকারিকরনের দিকে শিল্পগোষ্ঠী হাতে যেতে পারে।
তবে ডিএইচআরের পুরো দায়িত্ব বেসরকারি হাতে ছাড়বে না রেল। তবে এতেই সিঁদুরে মেঘ নজরে আসছে বিবেচক মহলের। আশঙ্কা এই পন্থায় হাঁটলে ঐতিহাসিক তকমা খোয়াতে পারে দার্জিলিং ন্যারোগেজ রেল। এদিকে শনিবার তিনধরিয়া ওয়ার্কশপ স্টেশনের মাঝামাঝি স্থানে ধস নামার জেরে পর্যটক নিয়ে রংটং থেকে ফিরতে হয় ভিস্তা ডোমকোচ যুক্ত হেরিটেজ টয়ট্রেনকে।
রবিবার দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ন্যারোগেজ লাইনের ওপর থেকে পাথরের চাঁই সরানো যায়নি। একটি পরিত্যক্ত রেল কোয়াটার এদিন ধসে ট্র্যাকের ওপর এসে ভেঙে পড়ে। ভগ্নপ্রায় ওই ভবনের এক তৃতীয়াংশ এখনও ঝুলন্ত অবস্তায় রয়েছে বলে জানান ডিএইচআর ডিরেক্টর এম নারজেনাড়ি। যা ঘিরেই সংশয়ের পরও বিকেল পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি রেল কর্তারা। ফিটনেস টেস্টের পরই পরিষেবা সচল করা সম্ভব বলে জানানো হয়েছে ডিএইচ আরের তরফে।
অন্যদিকে ২০১২ সালের ভূমিকম্পে তিনধরিয়া হেরিটেজ ওয়ার্কশপে বিরাট অংশের ক্ষতির পর নামমাত্র সংস্কার হলেও এখনও বড় অংশে খামতি রয়েছে। এমনকি এই মুহূর্তের যা পরিস্থিতি তাতে রেলগাড়ীর কামরা আধুনিকরনের কাজও এই ওয়ার্কশপে হওয়া সম্ভব নয়। অথচ এই কাজ ভিন রাজ্যকে দিয়ে রেল করালেও দার্জিলিংয় হিমালয়ান হেরিটেজ ওয়ার্কশপের পরিকাঠামোর উন্নয়নের নজর নেই।
পর্যটন সার্কিটের মতে বিশ্বের দরবারে দেশের গর্বের ২ফিট গেজ লাইন। সিমলার যেখানে পরিষেবার অক্ষুন্ন রেখে ছুটে চলছে টয়ট্রেন সেখানে শুধুমাত্র রেলের স্বদিচ্ছার অভাবে ধুঁকছে ব্রিটিশ আমলের ঐতিহাসিক দার্জিলিং খেলনা ট্রেনের পরিষেবা। কিন্তু এই টয়ট্রেনকে ভর করেই পর্যটক হাব হয়ে উঠতে পারে। কারন শিলিগুড়ি ঐতিহাসিক টাউন স্টেশন থেকে জংশন পেড়িয়ে হিলকার্ট ভেদ করে সুকনা স্টেশন, রংটং, গয়াবাড়ি, তিনধারিয়া ওয়ার্কশপ, হয়ে ছুটে চলা টয়ট্রেনের সফর পুরোটাই হেরিটেজ সাইট।
রেল খানিক মান উন্নয়নের কাজে নজর দিলেই দেশ বিদেশের পর্যটকদের চোখে নিজ গড়িমা নিয়ে ধরা দিতে পারতো ডিএইচআর। ডিএইচআর সাপোর্ট গ্রূপের সম্পাদক রাজ বসু জানান
শুধুমাত্র টয়ট্রেনের রুট ধরেই পর্যটন হাব হওয়া সম্ভব। তা করতে প্রথমে রেলকে বিস্তৃত ট্র্যাক, কোচ ইঞ্জিনের আধুনিকরন করে সঠিক রক্ষনাবেক্ষন করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্ৰথমেই সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দিয়ে নিয়মিত টয়ট্রেন পরিষেবা জারি রাখা প্রয়োজন। পর্যটন ব্যাবসায়ী এইচএইচটিডিএনের সম্পাদক সম্রাট সন্যাল জানান বেসরকারিকরনের হাতে কোনোভাবেই দেওয়া যাবে না টয়ট্রেন। আমরা ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে সেকথা জানিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার আবেদন জানাবো।
তিনি আরো বলেন পর্যটক সার্কিটের তরফে এই হেরিটেজ সম্পদকে কার্যত করে তোলার চেষ্টা চলছে। কোন ভাবেই দার্জিলিং তথা উত্তরবঙ্গ সহ গোটা দেশের গর্ব ঐতিহাসিক ট্রয় ট্রেন বেসরকারিকরন করা না হয় তারজন্য সর্বসাধ্য চেষ্টা করবে পর্যটন সার্কিট। এটি শুধুমাত্র কয়েকটি কামরা নিয়ে চলা রেলেগাড়ি নয় কয়েক শতাব্দীর আবেগ জড়িয়ে রয়েছে।
অপরদিকে কার্টিহার ডিভিশনের ডিআরএম জানান রেল ট্র্যাক ও অধিক অশ্ব ক্ষমতা সম্পন্ন ইঞ্জিন লোকোমোটিভ এনে উন্নয়নের ভাবনা চিন্তা রয়েছে। ধস প্রতিরোধে যেখানে-যেখানে বাস্তুকারেরা গার্ড ওয়ালের পরামর্শ দিচ্ছেন সেমত কাজ করা হচ্ছে।ট্র্যাকের কংক্রিট ও লোহার স্লিপার বসানো কাজ প্রায় শেষের দিকে। হেরিটেজ সাইট হওয়ায় গাইডলাইন মেনে সংস্কার কাজ করতে হয়।
তবে এই সংস্কার কাজ সবটাই বেসরকারীকরনের ক্ষেত্রে দর বৃদ্ধির প্রস্তুতি কিনা তা নিয়েই জলঘোলা হতে শুরু করেছে। যদিও টয়ট্রেনে বাণিজ্যিকরনের বিষয়টিতে ডিআরএম জানান এই বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। সয়েল বাইন্ডিংয়ের বিষয়টি নিয়েও বলেন খোঁজ নেবো।