উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে হানা সিবিআইয়ের; জিজ্ঞাসাবাদ উপাচার্যকে। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তে এবারে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে হানা দিল সিবিআই আধিকারিক। বুধবার সকাল দশটা নাগাদ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে হানা দেয় সিবিআইয়ের দশ থেকে বারো জন সদস্যের একটি বিশেষ দল। এরপর প্রায় ১০ ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্যকে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেশ কিছু নথি নিয়ে যান সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা।
জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্য এসএসসির চেয়ারম্যান থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে । অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগের রিপোর্টে সুবীরেশ ভট্টাচার্যর নাম ছিল ৷ সেই অভিযোগের তদন্তেই এদিন হানা দেয় সিবিআই । সিবিআইয়ের দলটি দু’টি ভাগে ভাগ হয়ে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে ও আরেকটি উপাচার্যের আবাসনে হানা দেয় । “আমাদের জন্য আজ আত্মহত্যার দিন৷ উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় নয়, গোটা উত্তরবঙ্গের জন্য আজ লজ্জাজনক দিন। উপাচার্যের জন্য আজ এদিন দেখতে হল।”
এদিকে, এসএসসি নিয়োগ দূর্নীতি নিয়ে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান সিবিআইয়ের। আর ঠিক সেই সময়েই উপাচার্য সুবীরেশ ভট্টাচার্যর ভূমিকা নিয়ে চরম সরব হলেন খোদ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি সমর কুমার বিশ্বাস। সুবীরেশ ভট্টাচার্যর বিরুদ্ধে একাধিক বিস্ফোরক মন্তব্য করেন তিনি। এসএসসি তো বটেই, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মী নিয়োগেও দূর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সিবিআই হানা একপ্রকার কালো দিন বলে জানান তিনি। শিক্ষক নিয়োগে দূর্নীতি করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনোয় গুনগতমান নষ্ট হয়েছে। ইন্টারভিউয়ে দূর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের খাতের টাকা নয়ছয় হয়েছে বলেও সরব হন তিনি।
প্রসঙ্গত, সুবীরেশ ভট্টাচার্য দেড় মাসের জন্য ছুটি নিয়েছিলেন ৷ তার পর তিনি কলকাতায় ক্যাম্প অফিসে কাজে যোগ দেন ৷ সম্প্রতি তিনি শিলিগুড়ি ফিরে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজে যোগ দেন ৷
সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, এসএসসিতে ৩৮১ জনকে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পর নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। তার মধ্যে ২২২ জনের পার্সোনালিটি টেস্ট দেয়নি। কারণ, তাঁরা লেখা পরীক্ষায় পাস করেননি। বাকি ১৬০ জন লেখা পরীক্ষায় পাস করলেও র্যাঙ্ক অনেক পিছনে ছিল। গোটা ঘটনায় সুবীরেশ ভট্টাচার্যের যোগ রয়েছে বলে মনে করছেন সিবিআই৷
বুধবার তাঁর অফিসে যান সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা ৷ সেখানে তাঁর থেকে ফোন নিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর ৷ সেখানেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে ৷ সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে যে শিলিগুড়িতে উপাচার্যের আবাসনেও তল্লাশি চলছে ৷ তল্লাশি হয়েছে কলকাতায় উপাচার্যের বাঁশদ্রোণীর বাড়িতেও ৷ সেই বাড়িটি ইতিমধ্যেই সিল করেছে সিবিআই ৷ অন্যদিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পিএইচডি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে ৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইকনমিক্সে পিএইচডি করেন ।
আরও পড়ুন – গণেশ চতুর্থীতে চাঁদের দিকে তাকাতে নেই কেন? জানুন এর পৌরাণিক কাহিনি
তখন তাঁর গাইড ছিলেন অধ্যাপক অনিল ভুঁইমালি । অভিযোগ, পিএইচডি কোর্স করতে ন্যুনতম দু’বছরের সময় প্রয়োজন হয় । থিসিস নিয়ে ওই সময়ের প্রয়োজন হয় । কিন্তু গোটা কোর্সটাই মাত্র এক বছরে শেষ করেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায় । আর তা নিয়েই এখন জলঘোলা হতে শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরেই । প্রায় পঞ্চাশ জন প্রাক্তন পড়ুয়ারা একটি গণ স্বাক্ষর সম্বলিত চিঠি দিয়েছেন উপাচার্যকে । যদিও ওই বিষয়ে কোনভাবেই মুখ খুলতে রাজি নয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । যদিও অনিল ভুঁইমালির দাবি, নিয়ম মেনেই সব হয়েছে ।