উপ-রাষ্ট্রপতির আসন শূন্য: কে হবেন পরবর্তী মুখ? রাজনৈতিক অঙ্কে বাড়ছে জল্পনা

উপ-রাষ্ট্রপতির আসন শূন্য: কে হবেন পরবর্তী মুখ? রাজনৈতিক অঙ্কে বাড়ছে জল্পনা

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram



দেশ – দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদ, উপ-রাষ্ট্রপতির আসন এখন শূন্য। মাত্র ক’দিন আগেই জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে জগদীপ ধনখড় জানিয়েছিলেন, তিনি ২০২৭ সালের অগস্ট মাসেই অবসর নেবেন, যদি না ঈশ্বর অন্য কিছু চান। কিন্তু সেই মন্তব্যের মাত্র ১২ দিনের মাথায় হঠাৎ করেই পদত্যাগ করলেন তিনি। যদিও তাঁর তরফে স্বাস্থ্যগত কারণকে সামনে রাখা হয়েছে, তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশ এই ব্যাখ্যায় পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়। ফলে শুরু হয়েছে নতুন করে চর্চা—এই গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পদে এবার কার আগমন ঘটবে?

সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী, উপ-রাষ্ট্রপতির নির্বাচন যত দ্রুত সম্ভব আয়োজন করতে হবে। যদিও এখনো পর্যন্ত নির্বাচন ঘোষণা হয়নি, তবে দিল্লির রাজনৈতিক করিডরে গুঞ্জন তুঙ্গে। একাধিক নাম ঘুরে বেড়াচ্ছে সম্ভাব্য উত্তরসূরির তালিকায়। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নামটি বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। অনেকের কাছে এটি আশ্চর্যের বিষয় হলেও রাজনৈতিক মহলে জোর গুঞ্জন চলছে যে নীতীশ এবার জাতীয় স্তরের কোনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় চলে যেতে পারেন। এনডিএ-র শরিক উপেন্দ্র কুশওয়াহা ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, নীতীশের এখন অবসর গ্রহণ করা উচিত এবং পরবর্তী প্রজন্মকে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া উচিত। এমন আবহে উপ-রাষ্ট্রপতির পদ নীতীশ কুমারের জন্য হয়ে উঠতে পারে এক ‘সম্মানজনক অবসরের’ পথ। অন্যদিকে, চিরাগ পাসোয়ান ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন তিনি বিহারের নির্বাচনে লড়বেন। ফলে রাজ্যের রাজনীতিতে ভারসাম্য রক্ষার দিক থেকেও এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় দ্বিতীয় নামটি হল ভিকে সাক্সেনা, যিনি গত তিন বছর ধরে দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নরের পদে রয়েছেন। যদিও এই সময়কালে তিনি হয়ে উঠেছেন এক বিতর্কিত প্রশাসনিক মুখ। ‘সংবিধানগত বাধা’ সৃষ্টি করে আম আদমি পার্টির একাধিক নীতির পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরির অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। দিল্লি জল বোর্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন নীতিগত ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন কড়া সমালোচক ও কঠিন প্রতিপক্ষ। অনেকদিন ধরেই আলোচনা চলছিল যে তাঁকে কোনও ‘বড় দায়িত্ব’ দেওয়া হতে পারে, এবং উপ-রাষ্ট্রপতির পদ সেই সম্ভাবনাকে বাস্তব রূপ দিতে পারে।

তালিকার তৃতীয় সম্ভাব্য নাম মনোজ সিন্‌হা। বর্তমানে জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নরের দায়িত্বে থাকা সিন্‌হার মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৬ অগস্ট। একদা রেল প্রতিমন্ত্রী ছিলেন তিনি এবং উত্তরপ্রদেশের প্রবীণ বিজেপি নেতা হিসেবেও দীর্ঘ সময় ধরে সক্রিয় ছিলেন রাজনীতিতে। ৩৭০ ধারা রদের পর কাশ্মীরের রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন বলে মনে করা হয়। তবে শেষের দিকে পাহেলগামে পর্যটকদের উপর সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনায় কিছুটা চাপের মুখে পড়েছেন এই প্রশাসক।

উপ-রাষ্ট্রপতির পদ শুধুমাত্র সংসদের উচ্চকক্ষের চেয়ারম্যানের দায়িত্বই বহন করে না, বরং ভারতের সাংবিধানিক কাঠামোয় এটি একটি কৌশলগত এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যে ব্যক্তি এই আসনে বসবেন, তিনি হয়ে উঠবেন সরকারের কৌশলগত ভারসাম্য, প্রশাসনিক মনোভাব ও রাজনৈতিক বার্তা রূপায়ণের মুখ।

মোদি সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসের দ্বিতীয়ার্ধে এই পদে কাকে বসানো হবে, তা নিয়ে এখন থেকেই চর্চা শুরু হয়ে গেছে। কবে নির্বাচন ঘোষণা হবে এবং বিজেপি শেষ পর্যন্ত কোন নামের উপর ভরসা রাখবে, তা জানার জন্যই এখন নজর রাজনৈতিক মহলের।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top