এখানে দেবী পুজিত হন পোড়া মুখ নিয়ে। দেবীর সারা শরীর ও ঝলসানো তাম্র বর্ণের। এছাড়াও এখানে দেবী দুর্গার ডানদিকের পরিবর্তে বাঁদিকে থাকেন গণেশ। পূর্ববঙ্গের ঢাকার বিক্রমপুর বাইনখাঁড়া গ্রামে ৪৩৬ বছর আগে শুরু হয়েছিল এই পুজো।
দক্ষিণ ২৪ পরগণার অন্যতম বনেদী বাড়ির পুজো হল এই ক্যানিং থানা এলাকার ভট্টাচার্য বাড়ির পুজো। সারা জেলার অন্যান্য পুজোর তুলনায় এই ভট্টাচার্য বাড়ির পুজোর বিশেষত্ব সম্পূর্ণ আলাদা। প্রায় ৪৩৬ বছর আগে বাংলাদেশে এই ভট্টাচার্যদের বংশধররা মূলত জমিদার বাড়ির শোভা ও আভিজাত্য প্রদর্শনের জন্য শুরু করেছিল দেবী দুর্গার আরাধনা।
কিন্তু পূজা শুরুর বেশ কয়েক বছরের মধ্যেই এই ভট্টাচার্য বাড়িতে ঘটে দুর্ঘটনা। ভট্টাচার্য বাড়িতে দেবী দুর্গার মন্দিরের পাশে ছিল দেবী মনসার মন্দির। পুরোহিত মহাশয় মনসা পূজো করে দুর্গা পুজো করতে এলে একটি কাক মনসা মন্দিরের ঘি এর প্রদিপের পলতে নিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় দুর্গা মন্দিরের শনের চালে সেটি পরে যায়। আর তাতেই পুড়ে যায় দুর্গা মন্দির ও প্রতিমা।
এরপর এই বাড়ির মানুষজন ভাবেন দেবী দুর্গা বোধহয় তাঁদের পুজো আর চাইছেন না। সেই মোতাবেক পুজো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন তারা। এমন অবস্থায় একদিন রাতে স্বপ্নাদেশ পান এই পরিবারের তৎকালীন গৃহকর্তা রামকান্ত ভট্টাচার্য। দেবী দুর্গা স্বপ্নাদেশ দেন যে তাঁর পুজো যেন কোন ভাবেই বন্ধ না হয়, তাঁর ঐ পোড়া রূপেই যেন তাঁকে পুজো করা হয়।
আর ও পড়ুন ভবানীপুরে প্রচারে গিয়ে বাধার মুখে সুকান্ত মজুমদার
এমন স্বপ্ন পাওয়ার পর থেকেই আজও দেবীর সেই পোড়া মুখ ও ঝলসানো শরীর এর মূর্তিতেই বছরের পর বছর পুজিত হয়ে আসছে মা দুর্গা। আগে মহিষ বলি হলেও বর্তমানে ফল বলি হয়। সেই শুরু থেকেই একচালার ঠাকুরে পুজো হয় এই ভট্টাচার্য বাড়িতে। জন্মাষ্টমী তিথিতে কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়ে এই বাড়ির দুর্গা পুজোর শুরু। আগে পুজতে জাঁকজমকের কোনও কমতি ছিল না।
তবে বর্তমান বংশধরেরা কাজের তাগিদে বিভিন্ন জায়গায় চলে যাওয়ায় ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির ফলে জাঁকজমকে কিছুটা হলেও ভাঁটা পড়েছে, কিন্তু পুজোর সমস্ত আচার ও রীতি মেনেই আজও পুজো হয় এই ভট্টাচার্য বাড়িতে। তবে বর্তমানে পুজোর জৌলুস কমলেও, এখনো তার বনেদিয়ানাতেই সে শ্রেষ্ঠত্বের দাবীদার।