এঠো হাতেই কালী মাতাকে নৈবেদ্য তথা পুস্পাঞ্জলী অর্পনের রীতি খাপুরের জমিদার বাড়ীতে। এঠো হাতেই কালী মাতাকে নৈবেদ্য তথা পুস্পাঞ্জলী অর্পন করেন পুরোহিত, সাধক বামাক্ষ্যাপার প্রধান শিষ্য তারাক্ষ্যাপা-র হাতে তৈরী পঞ্চমুন্ডির আসনে পূজিত হয়ে আসছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার খাপুর-এর জমিদার বাড়ীর জয় কালী মাতা।
আনুমানিক প্রায় ৪০০ বছরেরও বেশী সময় ধরে খাপুর-এর জমিদার বাড়ী হিসাবে খ্যাত এই চ্যাটার্জী বাড়ীতে পূজিত হয়ে আসছে জয় কালী মাতা। স্থানীয় বাসিন্দা অজিত কুমার মাহাতো-র বক্তব্য বর্তমানের কালী মন্দির সংলগ্ন এই স্থানে পূর্বে অনেকগুলি শিব মন্দির ছিল যেগুলি এখন নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তিনি জানান প্রথমদিকে ফাকা মাঠের মধ্যে অবস্থিত পঞ্চমুন্ডির আসনে পূজা হলেও পরবর্তীতে পঞ্চমুন্ডির বেদীকে ঘিরে টিনের চালা মন্দির গড়েছেন চ্যাটার্জী বাড়ীর সদস্য সদস্যারা।
জানা গেছে বহু প্রাচীন এই পূজা হয়ে আসছে বিরাচার মতে অর্থ্যাৎ দীপাবলির দিন পূজার সময় তান্ত্রিক পুরোহিত মন্ত্র উচ্চারণ করার সময় মুড়ি, চানাচুর, পাঠার মাংস, কারণ খেতে খেতে ঐ এঠো হাতেই কালী মাতাকে নৈবেদ্য তথা পুস্পাঞ্জলী অর্পন করেন। তবে পূজা আয়োজনের সেকেলের জমিদারির জৌলুসতা খানিকটা ফিকে হলেও বংশের ঐতিহ্যের গরিমাকে বজায় রাখতে এলাকায় আজও জমিদার বাড়ী হিসাবে পরিচিত চাট্যার্জী বাড়ীর সদস্যরা নিষ্ঠা সহযোগে সাধ্যমত পূজার আয়োজন করে চলেছেন সমস্ত রীতি মেনেই।
চাট্যার্জী বাড়ীর বংশের কুলদেবী তারা মা, তাই শুধুমাত্র দীপাবলির দিন যে বাড়ীর কালী মাকে ভোগ নিবেদন করেন পরিবারের সদস্যরা তা নয়, বছরের প্রতিদিনই পরিবারের সদস্যদের জন্য রান্নার পদগুলি যেমন মাছ, মাংস, সব্জি দিয়ে অন্নভোগ দেওয়া হয় চ্যাটার্জী বাড়ীর কালী মাতাকে বলে জানান পরিবারের সদস্যা শাখিলা চ্যাটার্জী। দীপাবলির দিন বলি দেওয়ার প্রথা বর্তমান থাকার পাশাপাশি দীপাবলির দিন এই জয় কালী মাতার পূজায় পোলাও, ডাল, মাংস, এবং পঞ্চব্যাঞ্জন দিয়ে ভোগ নিবেদনের রীতি আজও বজায় রয়েছে।
কিছুটা আর্থিক কারন সহ বিশেষত লোকবলের অভাবে এই চুন সুড়কি ও সরু ইটের গাথায় তৈরী চ্যাটার্জী বাড়ীর চণ্ডীমণ্ডপের দালানে বিগত ১৯৯৯ সাল থেকে দুর্গা পূজা বন্ধ হয়ে গেলেও দীপাবলির দিন বংশের কুলদেবীর এই পূজায় পরিবারের সকল সদস্যরা একত্রিত হয়ে মাতৃ আরাধনায় মেতে উঠেন। চ্যাটার্জী পরিবারের সদস্য সমীর চ্যাটার্জী বলেন এই মন্দিরের বয়স তারাপীঠের মন্দিরের বয়সের সমান। তিনি এও বলেন আমরা পরিবারের সদস্যরা আর্থিক সাধ্যমতো বংশের ঐত্যিহ্যকে বজায় রাখার চেষ্টা করছি।