রাজ্য – বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা (SIR) ঘোষণার পর থেকেই বাংলার রাজনীতিতে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে। এই সমীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বুথ লেভেল অফিসাররা (BLO)। তবে এসআইআর শুরুর পর থেকেই তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। গত ২৭ অক্টোবর মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, বিএলও-দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট রাজ্য প্রশাসনের। সেই অনুযায়ী, কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের নোডাল অফিসার আশ্বাস দিয়েছেন যে, রাজ্যই বিএলও-দের নিরাপত্তা দেখবে।
তবে নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার আগেই রাজনৈতিক তরজায় নেমেছিল রাজ্যের শাসক ও বিরোধী শিবির। তৃণমূলের বাঁকুড়ার সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী প্রকাশ্যে বলেন, এসআইআর চলাকালীন যখন বিএলও-রা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন, তখন দলের বুথ স্তরের কর্মীরাও তাঁদের সঙ্গে থাকবেন যাতে কোনও নাম বাদ না পড়ে। তাঁর এই মন্তব্যের পর থেকেই বিরোধীরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলে।
বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ সুভাষ সরকার কটাক্ষ করে বলেন, “বিএলও-দের সঙ্গে তৃণমূলের কর্মীরা কি মস্তানি করতে যাবে? কমিশনের হয়ে সরকারি কাজে গেলে কেউ বাধা দিলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর লাঠি বা গুলি মিলতেও পারে।” তাঁর কথায়, এসআইআর শুরুর আগেই এমন বক্তব্য রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলছে।
এই প্রসঙ্গে রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “বিএলও-রা এক ভয়ঙ্কর চাপের মধ্যে কাজ করছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, একজনেরও নাম বাদ দিলে তিনি ছাড়বেন না। কিন্তু বিএলও-রা সরকারি নিয়ম মেনে কাজ করেন, সেখানে অনুপ্রবেশকারীর নাম তাঁরা রাখতে পারেন না। যদি নাম বাদ দিতে হয়, তখন তৃণমূলের কর্মীরা তাঁদের ওপর হামলা চালাতে পারে, আবার পুলিশ মামলা করতেও পারে। এই অবস্থায় বিএলও-দের নিরাপত্তা কে দেবে?”
তাঁর মতে, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা এবং প্রয়োজনে বিএলও-দের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসা। যদিও কমিশনের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, রাজ্য প্রশাসন এই দায়িত্ব পালন করবে এবং আপাতত কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের প্রয়োজন নেই বলে তিনি মনে করেন।
এসআইআরের কাজ যতই এগোচ্ছে, ততই বেড়ে চলেছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। একদিকে শাসকদল যেখানে বলছে, প্রশাসনিক কাজ নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হবে, অন্যদিকে বিরোধীরা বলছে, মাঠে নামা কর্মকর্তারাই এখন চাপে রয়েছেন। সব মিলিয়ে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসার আগে রাজ্যের রাজনৈতিক আবহ যেন আরও ঘন কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে।



















