কলকাতা – এসআইআরের মূল পর্ব শুরু হতেই রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে একের পর এক মৃত্যুর খবর আসছে। তৃণমূলের দাবি, সিংহভাগ ক্ষেত্রেই এই মৃত্যুর নেপথ্যে কাজ করছে “এসআইআর আতঙ্ক”। অন্যদিকে বিজেপির অভিযোগ, এখন সাধারণ অসুস্থতা বা প্রাকৃতিক মৃত্যুকেও রাজনৈতিক স্বার্থে এসআইআরের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। রাজনৈতিক তরজার মধ্যেই এবার সরকারি সাহায্য চেয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন কালনার এক পরিবার। তাঁদের দাবি, এসআইআর আতঙ্কেই স্ট্রোক হয়েছে পরিবারের কর্তা ক্ষিতীশ শর্মার (৫৬)।
ঘটনাটি ঘটেছে কালনার মহাপ্রভু পাড়া এলাকায়। পরিবারের সদস্যদের দাবি, এসআইআর বা বিশেষ নিবিড় সংশোধনের ভয়ে অতিরিক্ত মানসিক চাপেই অসুস্থ হয়ে পড়েন ক্ষিতীশবাবু। তিনি এখন শয্যাশায়ী। তাঁর মেয়ে স্থানীয় উপপুরপ্রধানের দ্বারস্থ হয়েছেন সরকারি সাহায্যের আশায়। শুধু তাই নয়, পরে কালনা এক নম্বর ব্লকের বিডিও অফিসেও গিয়েছেন তাঁরা। পরিবারের কথায়, ক্ষিতীশবাবু ছিলেন সংসারের একমাত্র রোজগারকারী। তাঁর অসুস্থতায় বিপাকে পড়েছে গোটা পরিবার।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ক্ষিতীশবাবু দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় ভাড়া থাকেন। তবে ২০০২ সালের ভোটার তালিকা খতিয়ে দেখা হয়েছে—সেখানে তাঁর নাম নেই। বাবা-মা বহু বছর আগেই মারা গিয়েছেন, ফলে তাঁদের নামও লিঙ্ক করা যায়নি। পরিবার সূত্রে দাবি, এই তথ্যই ক্ষিতীশবাবুর মনে ভয় ঢুকিয়ে দেয়। সেই আতঙ্ক থেকেই গত ২৯ অক্টোবর তিনি স্ট্রোক করেন। তাঁকে ভর্তি করা হয় কালনা হাসপাতালে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাস দেড়েকের জন্য সম্পূর্ণ বিশ্রাম প্রয়োজন। বর্তমানে তিনি বাড়িতেই চিকিৎসাধীন।
ক্ষিতীশবাবুর পরিবার জানিয়েছে, তিনি প্রায়ই বলতেন, ভোটার তালিকায় নাম না থাকায় তিনি ভীষণ চিন্তিত। তাঁর বক্তব্য, “আমার তো মা-বাবা ছিল না। ছোটবেলাতেই মারা গিয়েছিলেন বাবা। মা-ও মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। এক ভদ্রলোক আমাকে কালনায় নিয়ে এসে মানুষ করেন। বড় হয়ে এখানে গাড়ি চালাই। এসআইআর শুরু হতেই অনেকে বলল, তোর নাম নেই, এখন কী হবে? মেয়েদের ভবিষ্যৎ কী হবে—এই চিন্তাই মাথায় ঘুরছিল।”
বর্তমানে ক্ষিতীশবাবুর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও মানসিক উদ্বেগ কাটেনি। প্রশাসনিক মহলে এই ঘটনা ঘিরে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। এসআইআর আতঙ্ক কতটা বাস্তব, আর কতটা রাজনৈতিক আতঙ্ক—তা নিয়েই চলছে তর্ক-বিতর্ক।




















