কলকাতা – এন্টালিতে ২.৬৬ কোটি টাকা লুটের ঘটনায় ধৃত এসটিএফ কনস্টেবল মিন্টু সরকারের জীবনের গোপন অধ্যায় প্রকাশ্যে আসতেই চমকে উঠেছেন তদন্তকারীরা। একাধিক গার্লফ্রেন্ড, বিলাসবহুল পার্টি, দামি উপহার এবং ঘনিষ্ঠ অফিসারদের ‘ম্যানেজ’ করার ঘটনা সব মিলিয়ে মিন্টুর রঙিন জীবন ও দুর্নীতির জাল তদন্তে উঠে এসেছে।
তদন্তে জানা গিয়েছে, মিন্টু সরকারের কাজ ছিল জঙ্গি কার্যকলাপ ও টেরর ফান্ডিংয়ের ওপর নজরদারি। এই দায়িত্বে থাকাকালীনই হাওলা টাকার রুট ও লেনদেন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করেন তিনি। তদন্তকারীদের দাবি, এই সুযোগেরই অপব্যবহার করে হাওলা টাকার উপর নজরদারি নয়, বরং তা লুটের পরিকল্পনা শুরু করেন মিন্টু।
তিনি জানতেন, হাওলা ব্যবসায়ীরা সাধারণত পুলিসে অভিযোগ করেন না, কারণ টাকা কোথা থেকে এসেছে, তা প্রকাশ হলে তাঁরা আইনি ঝামেলায় পড়েন। এই ফাঁকটাই কাজে লাগিয়ে গত কয়েক বছরে একাধিক বার টাকা লুট করেছেন মিন্টু।
তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, তিনি নিজে সরাসরি অপারেশনে থাকতেন না। টিম তৈরি করে পুলিস পরিচয়ে ভয় দেখিয়ে টাকা লুট করাতেন। এমনকি, সোর্সদের মাধ্যমেও মোবাইল ট্র্যাক করে টাকার লেনদেনের খবর পেতেন। তারপর পরিকল্পনামাফিক ডাকাতি চালানো হত।
মিন্টুর এই বেআইনি উপার্জনের বড় অংশ খরচ হত গার্লফ্রেন্ডদের উপরে। তাঁদের পরিবারের খরচ চালানো, দামি উপহার দেওয়া এবং বিলাসবহুল জীবনযাপনের নেশায় বুঁদ ছিলেন তিনি। জানা গিয়েছে, কলকাতায় তাঁর তিনটি ফ্ল্যাট রয়েছে। তাঁর মাসিক বেতনের সঙ্গে এই সম্পত্তির হিসাব মেলেনি।
তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন, অফিসারদের একাংশকে নিয়মিত উপহার ও ক্লাব পার্টির মাধ্যমে সন্তুষ্ট রাখতেন মিন্টু। তাই প্রশ্ন উঠছে তাঁর এই অপকর্মে কোনও উচ্চপদস্থ অফিসারও যুক্ত ছিলেন কি না।এদিকে, এন্টালি কাণ্ডে পাথরপ্রতিমা থেকে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস শাহনওয়াজ শেখ ওরফে রাজু, নাজমুল হোসেন এবং শেখ রহমত ওরফে রাজেশ। তাদের কাছ থেকে মোট সাড়ে ৩১ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে। রাজুই নাকি মিন্টুকে টাকা বহনের ‘টিপস’ দিয়েছিল।এসটিএফ কনস্টেবলের এই লুট ও দুর্নীতির চক্রের পর্দাফাঁসে নড়েচড়ে বসেছে পুলিস মহল। এখন তদন্তকারীদের মূল লক্ষ্য এই জাল কতদূর বিস্তৃত, এবং কারা কারা এর সঙ্গে যুক্ত।
