দিল্লি – দেশের কলকারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি ক্রমেই আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসছে। কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিগত এক দশকে কলকারখানায় সরকারি নজরদারির হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। লোকসভায় এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় শ্রম প্রতিমন্ত্রী শোভা করন্দলাজে এই তথ্য তুলে ধরেছেন।
প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালে সারা দেশে যেখানে সরকারি পরিদর্শনের সংখ্যা ছিল ১,১৮,৯৫২, সেখানে ২০১৮ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৮০,৬৫০-এ। পরবর্তী সময়ে, ২০১৯ সালে পরিদর্শনের সংখ্যা ছিল ৮৭,৭৭১; যা আরও কমে দাঁড়ায় ২০২০-তে ৬৬,০৬৩ এবং ২০২১ সালে মাত্র ৪৭,১২৫-এ। ১৯৪৮ সালের ফ্যাক্টরি আইন অনুযায়ী এই ধরনের পরিদর্শন বাধ্যতামূলক হলেও বাস্তবে তার ধারাবাহিকভাবে ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী এই কমতির জন্য কোভিড-১৯ মহামারিকে দায়ী করলেও, বিশেষজ্ঞ মহলের প্রশ্ন, মহামারির আগে অর্থাৎ ২০১৪–১৮ সময়কালেও কেন এই পরিদর্শন হ্রাস পেয়েছে, তার কোনও পরিষ্কার ব্যাখ্যা নেই। বিশেষত যখন এই সময়ে শিল্পায়নের প্রসার ঘটেছে, তখন নজরদারির সংখ্যা কমার বিষয়টি আরও উদ্বেগজনক।
এছাড়াও, শ্রমিক উন্নয়ন কর্মসূচির অগ্রগতিতেও প্রশ্ন উঠছে। তৃণমূল সাংসদ মালা রায়সহ ১৩ জন সাংসদের প্রশ্নের উত্তরে শ্রম প্রতিমন্ত্রী জানান, ২০২৪–২৫ আর্থিক বছরে আবাসন সংক্রান্ত শ্রমিক উন্নয়ন প্রকল্পে একজনও সুবিধাভোগী নেই। গত দশ বছর ধরে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সংক্রান্ত প্রকল্পগুলোর সুফলও উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।
এই পরিসংখ্যান প্রকাশ্যে আসতেই শ্রমিক সংগঠন, মানবাধিকার সংগঠন এবং বিভিন্ন অর্থনীতিবিদদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। তাঁদের মতে, সরকার যখন শ্রমিক কল্যাণ ও শিল্প সুরক্ষার কথা বলছে, তখন বাস্তব পরিস্থিতি তার ঠিক উল্টো। সরকারি নজরদারি ও কার্যকর প্রকল্প ছাড়া কলকারখানার শ্রমিকদের সুরক্ষা শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
