কলকাতা পুরভোটে বেশিরভাগ ওয়ার্ডে তৃতীয় স্থানে চলে গেলো বিজেপি। কলকাতা পুরভোটের ফলাফলে জয় জয়াকার ঘটলো পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের। পশ্চিমবঙ্গে গত বিধানসভা নির্বাচনে শক্তি বাড়িয়েছিলো তৃণমূল। কলকাতা পুরভোটেও সেই ধারা বজায় রাখলো রাজ্যটির শাসক দল। গত বার কলকাতা পুরসভার ১১৪ ওয়ার্ডে জয়ী তৃণমূল এবার ১৩০ টপকানোর পথেচলেছে। কলকাতা পুরসভার ১৪৪ টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে ১৩৪ টি আসনে।
বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ৩ টি আসনে। বামেরা এগিয়ে রয়েছে ২ টি আসনে। জাতীয় কংগ্রেস এগিয়ে ২ টি আসনে ও অন্ন্যক্সান্যরা এগিয়ে ৩ টি আসনে। তৃণমূলের এই বিপুল জয়ের পরেই তৃণমূল নেত্রী তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপয়াধ্যায় বলেন, কলকাতা পুরভোটে মানুষ যে রায় দিয়েছে তার পরে আমাদের আরও মাথা নত করে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, উতসবের মেজাজে ভোট হয়েছে। এই জয় গণতন্ত্রের জয়। গণতন্ত্রের উতসবের জয়।
যে রায় কলকাতার মানুষ দিয়েছে তার পরে আমাদের আরও বেশি করে কাজ করতে হবে। এদিন মমতা বিজেপিকে আক্রমণ করে বলেন, জনতার রায়ে বিজেপি ভোকাট্টা। বামেরা নোপাত্তা আর কংগ্রেস স্যান্ডুইচ হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে অসম যান মমতা। বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে মমতা বলেন, কলকাতায় বড় শক্তি নিয়ে তৃণমূলের জয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। সেই জয়কে সাধারণ মানুষের জন্য উতসর্গ করেন মমতা।
তৃণমূলের তরফে উল্লেখযোগ্য প্রার্থীদের মধ্যে জয়ের পথে এগিয়ে রয়েছেন, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, পরেশ, পাল, রত্না চট্টোপাধ্যায়রা। পুরভোটে জয়ী হয়েছেন ফিরহাদ হাকিম। তাঁর জয় নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি কলকাতার মেয়র হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে গেলেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। কলকাতা পুরসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখিয়ে দিয়েছে তৃণমূল বেড়েছে, কমেছে বিজেপি। এক ধাক্কায় বিজেপি নেমে গিয়েছে ১০-এর নিচে ২০১৯-এ যে আশা দেখিয়েছি বিজেপি, ২০২১ সেই ফল ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি। সেই একইভাবে বিজেপি ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে যে ফল করেছে ২০২১-এরই পুরসভা নির্বাচনে সেই ফল ধরে রাখতে পারেনি। প্রাপ্ত ভোট শতাংশে বিরাট পতন দেখা গিয়েছে।
গেরুয়া ভোটে ধস নেমেছে কলকাতায়। বামেরা উঠে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে, প্রায় দ্বিগুণ ভোটবৃদ্ধি কলকাতা ভোটের ফলে দেখা যাচ্ছে বিজেপি নেমে গিয়েছে তৃতীয় স্থানে। সেখানে বামেরা উঠে এসেছে দ্বিতীয় স্থানে। যদিও প্রথম স্থানে থাকা তৃণমূলের থেকে দ্বিতীয় স্থানে থাকে সিপিএম তথা বামেদের ভোটের ব্যবধান বিস্তর। তৃণমূল যেখানে ৭০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছে, সিপিএম বা বামেরা সেখানে পেয়েছে ১১ শতাংশ ভোট। সিপিএমের ভোট প্রাপ্তি তাদের নতুন করে অক্সিজেন দিচ্ছে আর বামেরা তাদের ভোট শতাংশ প্রায় দ্বিগুন বাড়িয়েছে। বামেরা যখন বেড়ে ১১ শতাংশ হয়েছে, বিজেপি তখন কমে ৯ শতাংশ।
আর ও পড়ুন দেশজুড়ে চলছে শৈত্যপ্রবাহ, শ্রীনগরে শিশিরবিন্দু হয়ে যাচ্ছে বরফ
বিজেপির এই পতন গেরুয়া শিবিরকে ভাবিয়ে তুলেছে। এই পতন কি কলকাতা মানুষের প্রত্যাখ্যান করায়, নাকি ভোটযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়ার কারণে তা বিশ্লেষণ করছে দল। সিপিএমের ভোট প্রাপ্তি তাদের নতুন করে অক্সিজেন দিচ্ছে। বিজেপির মতো শক্তি পিছু হটায় খুশি তৃণমূল কংগ্রেসও। একুশের নির্বাচনে মাত্র একটি আসনে এগিয়েছিল কংগ্রেস। এবার দুটি আসনে জয়যুক্ত হয়েছে তারা। অনেক আসনে তারা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। সিপিএম ও কংগ্রেসের এই উত্থান বাংলা তথা কলকাতার পক্ষে শুভ লক্ষণ বলে দাবি করেছে তৃণমূল। কারণ বিজেপির মতো শক্তি পিছু হটায় বাংলা বিভাজনের করাল ছায়া থেকে মুক্তি পাবে বলে মনে করছে তৃণমূল। কলকাতা পুরসভার একাধিক ওয়ার্ডে ৭৫ থেকে ৮২ শতাংশ ভোট পেয়েছে তৃণমূল।
কলকাতা পুরসভা নির্বাচনের ফলাফলের পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিজেপি তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছে। বিধানসভা ভোটে যেখানে বিজেপির প্রাধ্যান্য ছিল অধিকাংশ ওয়ার্ডে, সেখানে বামেরা দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। অনেক ক্ষেত্রে কংগ্রেসও।