কালীগঞ্জ: উপনির্বাচনের বিজয় মিছিল থেকে ছোড়া বোমার আঘাতে মৃত্যু হল ছোট্ট তামান্না খাতুনের। সোমবার সন্ধ্যায় ঘটেছে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। অভিযোগ উঠেছে, তৃণমূল কংগ্রেসের বিজয় মিছিল থেকেই ছোড়া হয়েছিল ওই বোমা। এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। আর এই ঘটনার ঠিক পরদিনই নিহত শিশুর পরিবারকে আর্থিক সাহায্য করতে গিয়ে অপমানিত হয়ে ফিরতে হল ডেবরার বিধায়ক হুমায়ুন কবীরকে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে তামান্নার মা সাবিনা খাতুনকে একটি টাকার খাম দিতে চেয়েছিলেন বিধায়ক। তবে সাবিনা সেটি নিতে অস্বীকার করেন। তাঁর জবাব ছিল স্পষ্ট ও বেদনার্ত— “আমায় এভাবে ছোট করবেন না। আমি আর ধৈর্য রাখতে পারব না। আমার জমি আছে, আমার বাড়ি আছে। আমি টাকা চাই না। আমার মেয়েকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন?”
বিধায়ক হুমায়ুন কবীর অবশ্য দাবি করেন, তিনি কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যাননি, বরং একটি অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে সহানুভূতি জানাতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সন্তানহারা মায়ের রাগ, যন্ত্রণার কাছে হার মানে সব ব্যাখ্যা। টাকার খামটি ফিরিয়ে দেন সাবিনা।
উল্লেখ্য, সোমবার ঘোষিত উপনির্বাচনের ফলাফলে কালীগঞ্জ আসনে তৃণমূল প্রার্থী আলিফা আহমেদ বিপুল ভোটে জয়ী হন। আলিফা প্রয়াত তৃণমূল বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদের কন্যা। ভোটের ফলপ্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঘটে যায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা—তামান্নার মৃত্যু। অভিযোগ, তৃণমূলের বিজয় মিছিলে চলা উল্লাসের মধ্যেই বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় প্রাণ যায় ওই শিশুর।
এই ঘটনা ঘিরে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার দাবি করেছেন, আলিফা আহমেদের জয়ী ঘোষণার সার্টিফিকেট বাতিল করতে হবে। বিরোধী পক্ষের অভিযোগ, নির্বাচনী উৎসবের নামে শাসকদল লাগামছাড়া উল্লাসে মাতছে, যার মূল্য দিতে হচ্ছে নিরীহ সাধারণ মানুষকে।
শোকস্তব্ধ তামান্নার পরিবার এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না যে তাঁদের ফুলের মতো মেয়ে আর ফিরবে না। সেই যন্ত্রণার মাঝেই তাঁরা বুঝিয়ে দিলেন, কিছু অর্থ দিয়ে এই ক্ষতি পূরণ করা যায় না। তাঁদের একটাই প্রশ্ন—জবাব কে দেবে তামান্নার মৃত্যুর?
