দিল্লি – মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়ারায় ভয়াবহ এক ঘটনার পর সারা দেশে চাঞ্চল্য। কাশির ওষুধ খেয়ে একের পর এক শিশুর মৃত্যুতে নড়েচড়ে বসেছে কেন্দ্রীয় সরকার। ‘কল্ডরিফ কফ সিরাপ’-এর মধ্যেই পাওয়া গেছে ভয়ঙ্কর রাসায়নিক ডাই-ইথিলিন গ্লাইকোল (DEG), যা অনুমোদিত সীমার প্রায় ৫০০ গুণ বেশি। ইতিমধ্যে এই বিষাক্ত সিরাপ খেয়ে ২০ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে, আরও ৬ শিশু আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চারটি নতুন মৃত্যু রিপোর্ট করা হয়েছে, ফলে পরিস্থিতি ক্রমশই ভয়াবহ আকার নিচ্ছে।
প্রাথমিক তদন্তে প্রকাশ, সিরাপ তৈরির সময় কাঁচামালের ব্যাচ টেস্টই করা হয়নি। এমনকি প্রস্তুত ওষুধ বাজারে ছাড়ার আগে সঠিক পরীক্ষার কোনও নথি পাওয়া যায়নি। চার বছরের কম বয়সি শিশুদের জন্য নিষিদ্ধ এই ওষুধ সহজেই দোকানে বিক্রি হচ্ছিল। তামিলনাড়ুর ওই ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই মামলা রুজু হয়েছে, এবং একটি বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) গঠন করা হয়েছে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য।
এই ঘটনার পর স্বাস্থ্য পরিষেবার সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস (DGHS) সমস্ত রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে চিঠি দিয়ে কঠোর নির্দেশ জারি করেছে— ওষুধ উৎপাদনের নিয়ম ৭৪(সি) ও ৭৮(সি)(ii) মেনে চলা বাধ্যতামূলক। নির্দেশে বলা হয়েছে, প্রতিটি ব্যাচ বাজারে ছাড়ার আগে কঠোর পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে এবং কারখানা পরিদর্শনের সময় মাননিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পাশাপাশি, কাঁচামাল শুধুমাত্র অনুমোদিত বিক্রেতাদের কাছ থেকেই সংগ্রহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার দায়ে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদ ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ নিয়েছেন। ছিন্দওয়ারা ও জবলপুরের দুই ড্রাগ ইন্সপেক্টরকে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোলারকে বদলি করা হয়েছে। এছাড়া, ওই সিরাপ প্রেসক্রাইব করার অভিযোগে স্থানীয় শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ প্রবীণ সোনিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁর ক্লিনিকও সিল করে দেওয়া হয়েছে। যদিও ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (IMA) জানিয়েছে, ডাঃ সোনি দোষী নন; প্রকৃত দায় ওষুধ কোম্পানি ও রাষ্ট্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার ব্যর্থতার।
এই ঘটনার পর কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, ছ’টি রাজ্যে রিস্ক-বেসড পরিদর্শন শুরু হয়েছে। ১৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়, যার মধ্যে ৯টি মানসম্মত হলেও ১টি ব্যাচে ত্রুটি ধরা পড়েছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্য নিজস্ব পদক্ষেপ নিচ্ছে—
রাজস্থানে ঘরে ঘরে সমীক্ষা, সচেতনতা অভিযান ও বিশেষ কমিটি গঠন হয়েছে। শিশু ও গর্ভবতী নারীর জন্য ক্ষতিকর সিরাপে সতর্কতা লেবেল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশে বিপজ্জনক ব্যাচ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
মহারাষ্ট্রে ‘SR-13’ ব্যাচের বিক্রি ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
দেশজুড়ে এই ঘটনায় ক্ষোভ ও শোকের ঢেউ। বহু পরিবার শোকে মুহ্যমান। তবে কেন্দ্রের আশ্বাস— ভবিষ্যতে এমন বিপর্যয় রুখতে ওষুধ পরীক্ষার প্রক্রিয়ায় নজরদারি আরও জোরদার করা হবে। ভারতের ওষুধ নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে পুনরায় শক্তিশালী করতে ইতিমধ্যেই পদক্ষেপ শুরু করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
