গ্রাম বাংলায় কাস্তের চাহিদা কমছে চাষীদের মধ্যে। দেওনেট হ’ক যত ধারালো কাস্তেটা ধার দিও বন্ধু” যুদ্ধবাজ সভ্যতার বিরুদ্ধে শ্রমজীবী মানুষদের একত্রিত করতে এই বার্তা দিয়েছিলেন কবি দিনেশ দাস। বর্তমান সময়ে অতটা বৃহত্তর না হলেও কিছুটা অন্য আঙ্গিকে কবির এই কথা আজও প্রাসঙ্গিক।জেট গতিতে চলা অত্যাধুনিক যন্ত্রের যুগেও মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহার হয় কাস্তের। বিশেষ করে এই সময়টাই, কারণ বাংলার মাঠ জুড়ে এখন সোনালি ফসলের শামিয়ানা, আর এই সময় কাস্তেতে শান দেওয়াটা তো অবশ্যই জরুরি।
আর সেই ছবি দেখা দেখা যাচ্ছে বঙ্গের বিভিন্ন কামারশাল গুলিতে। পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশপুর ব্লকের পালটা গড় এলাকাযর কামারশাল গুলিতেও তেমনই ব্যস্ততার ছবি ধরা পড়ছে। কামারশাল অর্থাৎ যেখানে কাস্তে সহ লোহার অন্য জিনিস পত্রে শান দেওয়া বা ধার দেওয়া হয়। প্রথমে পুরনো কাস্তে কে পুড়িয়ে নেওয়া হয়, তারপর হাতুড়ি দিয়ে ঠুকে ঠুকে একদিকের কিনারাকে কিছুটা পাতলা করা হয়, এরপর কাস্তের ছোট ছোট খাজ কাটা অংশগুলিকে ধারালো করা হয়। যাতে তা দিয়ে ভালো ভাবে ধান কাটা সম্ভব হয়।
আর ওই খাজ কাটা ছোট ছোট অংশগুলিকে একত্রে বলা হয়ে থাকে কাস্তের পুরি, তবে পুরি শব্দটি আঞ্চলিকভাবে ব্যবহৃত, কাস্তেকে ধারালো করার জন্য ব্যবহার করা হয় হয় রেঁদা, আর রেঁদা দিয়ে তৈরি হয় কাস্তের পুরি। বর্তমানের সময়ে পরিশ্রম ও সময় কমাতে ব্যবহৃত হচ্ছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির। তেমনই ধান কাটতে ব্যবহৃত হচ্ছে অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি ধান কাটা মেশিনের। তবে সকল যন্ত্রপাতি এখনও বন্ধ করতে পারিনি কাস্তের ব্যবহার। তাই তো সময় এলেই কাস্তেটা শান দিতে কামার ঘরের দিকে পা বাড়াতেই হয় চাষীদের।
আর ও পড়ুন ৬ ডিসেম্বর ‘মৈত্রী দিবস’ হিসেবে উদযাপন করবে ভারত ও বাংলাদেশ
কোন কোন চাষী বলেন ধানের খড় বা পোয়াল গবাদি পশুদের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু অত্যাধুনিক মেশিনে কাটা ধানের পোয়াল গবাদি পশুদের খাওয়ানো যায় না। তাই গবাদি পশুদের খাদ্য সংরক্ষণ করতে কাস্তে দিয়েই ধান কাটতে হয়।আবার অন্যদিকে কামার শালের কর্মরতরা জানাচ্ছেন কাস্তের চাহিদা থাকলেও উন্নত মানের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য আগের মত কাস্তের চাহিদা সেইরকমভাবে নেই।
কাস্তের ব্যবহার না থাকায় কামারশাল গুলিতে সেই রকম ভাবে কাজ ও লক্ষ্য করা যায় না আগের মতো, তাই দিনের দিন কমেছে কামার শালের সংখ্যাও। এরই মধ্যে কয়েকটা কমারশাল টিকে রয়েছে বঙ্গের আনাচে কানাচে। কোনরকমে কামারশালে কর্মরতরাও টিকে রয়েছি এই কাজের সাথে।