বারাসাত – বিকেল বেলায় বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে বেরিয়েছিল এক কিশোরী। দু’জনের হাতেই ছিল স্মার্টফোন। রাস্তার ধারে বসে তারা মোবাইলে স্ক্রল করছিল। ঠিক তখনই পুলিস পরিচয় দিয়ে হাজির হয় তিনজন যুবক। কেড়ে নেয় মোবাইল ফোন। তারপর কিছুটা দূরে টেনে যাওয়া হয় কিশোরীকে। বন্ধুর সামনেই পরপর তিনজন তাকে গণধর্ষণ করে।ঘটনার ২ বছর ৯ মাসের মাথায় নিউটাউনের ইকোপার্ক থানা এলাকার এই ঘটনায় সোমবার তিনজন যুবকের আমৃত্যু কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল বারাসত জেলা আদালত। বিশেষ পকসো আদালতের বিচারক সুস্মিতা মুখোপাধ্যায় এই সাজা ঘোষণা করেছেন। সেই সঙ্গে প্রত্যেকের ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও এক বছরের জেল।
জানা গিয়েছে, সাজাপ্রাপ্তদের নাম শাহজাহান আলি (বুদো), রকিবউদ্দিন মণ্ডল (সুরাজ) ও জামিরুল আলি (বাবু)। ঘটনাটি ঘটেছিল ২০২২ সালের ১৮ জুলাই। নিউটাউনের ইকোপার্ক থানার অন্তর্গত সিলিকন ভ্যালির কাছে একটি সিমেন্ট কারখানা সংলগ্ন এলাকায়। ওই কিশোরী ও তার বন্ধুর সামনে গিয়ে আচমকাই তিন যুবক বলে, আমরা পুলিস। শুনে ভয় পেয়ে যায় তারা। প্রথমেই তাদের হাত থেকে দু’টি মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়। তারপর কিশোরীর হাত ধরে টেনে রাস্তার পাশে একটি ঝোপের আড়ালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ওই তিনজন মিলে কিশোরীকে ধর্ষণ করে। কিশোরীর বন্ধুকে ঘটনাস্থলেই আটকে রাখা হয়।
গণধর্ষণের পর কিশোরী ও তার বন্ধু কাঁদতে কাঁদতে ওই এলাকা থেকে দৌড়ে পালায়। তারা একটি সাইকেলে করে এসেছিল। ওই তিন অপরাধী দু’টি মোবাইল ও সাইকেলটি নিয়ে গিয়েছিল। রাস্তায় ওই কিশোরী এক ব্যক্তির মোবাইল থেকে পুরো বিষয়টি পরিবারকে জানায়। তারপরই পরিবারের সদস্যরা ইকোপার্ক থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে ঘটনার তদন্তে নামে পুলিস। শাহজাহান, রকিবউদ্দিন ও জামিরুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেল হেফাজতে নিয়েই মামলা শুরু হয়। মামলায় মোট ১৭ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এই মামলার বিশেষ সরকারি আইনজীবী সৌভিক বসু ঠাকুর বলেন, গত শনিবার ‘৩৭৬-ডি’ গণধর্ষণের ধারায় বিচারক তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। সোমবার সাজা ঘোষাণা ছিল। তিনজনের আমৃত্যু সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকের যে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা ধার্য করা হয়েছে, তা নির্যাতিতার পরিবারকে দিতে বলা হয়েছে। অনাদায় অতিরিক্ত আরও এক বছর কারাদণ্ড।
