নদিয়া – কৃষ্ণনগর-কাণ্ডের পর কেটে গিয়েছে বেশ কয়েকটা দিন। ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে খুনের মূল অভিযুক্ত দেশরাজ সিংকে। তবে ঈশিতা মল্লিক হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র এখনও উদ্ধার হয়নি। দেশরাজকে হেফাজতে নিয়েই অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা করছে পুলিশ। আজ শনিবার দেশরাজ সিংকে কৃষ্ণনগর জেলা আদালতে পেশ করা হয়। দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারক অভিযুক্তের সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। পুলিশের দাবি, দেশরাজকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। বিশেষত খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র কোথায় লুকোনো আছে, সেই তথ্য পেতেই তাঁকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
ঘটনার পর দেশরাজকে খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল পুলিশকে। তদন্তকারীদের অনুমান, দেশরাজের বাবা রঘুবেন্দ্র প্রতাপ সিং তাঁকে পালাতে সাহায্য করেছিলেন। সেই কারণে কৃষ্ণনগর পুলিশের একটি বিশেষ টিম উত্তরপ্রদেশেও পাঠানো হয়। কিন্তু রঘুবেন্দ্রকে গ্রেপ্তার করতে এখনও সক্ষম হয়নি পুলিশ। অভিযোগ উঠেছে, তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকলেও বিএসএফ তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে না। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, আদালতের নির্দেশ না আসা পর্যন্ত রঘুবেন্দ্র প্রতাপ সিংয়ের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, শনিবার অভিযুক্ত দেশরাজ সিংকে কৃষ্ণনগর জেলা আদালতের অতিরিক্ত জেলা মুখ্য বিচার বিভাগীয় আদালতে পেশ করা হয়। সরকার পক্ষের আইনজীবী তদন্তের প্রয়োজনে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানান। তবে দেশরাজের আইনজীবী এই আবেদনের বিরোধিতা করেন। দীর্ঘ শুনানির পর অতিরিক্ত মুখ্য দায়রা বিচারক অশোক হালদার সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
দেশরাজকে আদালত থেকে পুলিশ ভ্যানে করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এদিন আদালত চত্বরে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছিল যাতে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। পুলিশ ভ্যানে ওঠার সময় দেশরাজের হাতে সাদা প্লাস্টিকের একটি প্যাকেট দেখা যায়। অনুমান করা হচ্ছে, ওই প্যাকেটে সম্ভবত জামাকাপড় ছিল। তবে বারবার প্রশ্ন করা হলেও দেশরাজ কোনও উত্তর দেননি। তাঁর মুখে অনুশোচনার লেশমাত্র ছিল না; পুরো সময়ই তিনি নির্লিপ্ত ছিলেন।
দেশরাজের আইনজীবী অরূপ রতন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, “পুলিশ মক্কেলকে হেফাজতে নিয়েছে। আগামী ১৩ তারিখ ফের তাঁকে আদালতে পেশ করা হবে।” অন্যদিকে সরকার পক্ষের আইনজীবী বীরেশ্বর মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা ১৪ দিনের হেফাজত চেয়েছিলাম, কিন্তু মাননীয় বিচারক ৭ দিনের হেফাজত মঞ্জুর করেছেন।” কৃষ্ণনগর জেলা পুলিশের ডিএসপি শিল্পী পাল জানিয়েছেন, “তদন্তে দেশরাজকে জিজ্ঞাসাবাদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তাঁকে হেফাজতে পেয়েছি। জিজ্ঞাসাবাদের পর খুনের ঘটনায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে আসবে।”
পুলিশ সূত্রে খবর, দেশরাজের জিজ্ঞাসাবাদের মূল লক্ষ্য খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রের হদিস পাওয়া। তদন্তের গতি এখন দেশরাজের বয়ানের উপরই নির্ভর করছে।
