কেঁদুয়াবুড়ি‌ই পূজিত হয়ে আসছেন দেবী দুর্গার রূপে

কেঁদুয়াবুড়ি‌ই পূজিত হয়ে আসছেন দেবী দুর্গার রূপে

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

কেঁদুয়াবুড়ি‌ই পূজিত হয়ে আসছেন দেবী দুর্গার রূপে। দশভুজার চিরাচরিত দেবীর মূর্তির দেখা মেলে না এখানে। অরণ্য শহরে ঝাড়গ্রামে বছরের পর বছর ধরে মা কেঁদুয়াবুড়ি‌ই পূজিত হয়ে আসছেন দেবী দুর্গার রূপে। আপামর গ্রামবাসী ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত মেতে ওঠেন এই পূজায়। এমন রূপেই দেবীকে পেতে অভ্যস্ত ঝাড়গ্রামের মানুষজন। ঝাড়গ্রাম থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে বেলিয়াবেড়া থানার অন্তর্গত বালিপাল গ্রামে অবস্থিত মা কেঁদুয়াবুড়ির থান। চারিদিকে সুবুজ গাছ পালায় ঢাকা মনোরম পরিবেশে মা কেঁদুয়াবুড়ির মন্দির। মন্দিরের গর্ভ কুণ্ডের চারপাশে হাতি, ঘোড়া দেখতে পাওয়া যায়।

 

গোপীবল্লভপুর ২ ব্লকের বালিপাল, বাঘাগ্যাড়া, রামচন্দ্রপুর, আসনবনি সহ আশেপাশের প্রায় ৩৫টি গ্রামের মানুষেরা মা কেঁদুয়াবুড়ি-কে এখনও দুর্গা রূপেই পুজো করে আসছেন। এই পূজার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাস ও নানা জনশ্রুতি। সোড়শ শতকে গোপিবল্লোবপুরের এই এলাকাটি চিয়ারা পরগনার অধীনে ছিল। আনুমানিক পাঁচশো বছর আগে পুরীর ক্ষত্রিয় রাজকুমার বলিপালদেব রাজ্যচুত হয়ে ভাগ্যক্রমে এই এলাকায় এসে পৌঁছান।

 

এই রাজ্যে তখন কেন্দ গাছে ভরা জঙ্গল। ক্ষুদাত রাজকুমার তখন একটি নিমগাছের তলায় বসে বিশ্রাম নেন। তখন এক উপজাতি কিশোরীর রূপ ধরে দেবী মা রাজকুমার বলিপালদেবকে কেঁদ ফল খেতে দেন। এবং পরে স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেন, ওই নিম গাছের নিচে কুন্ডে দেবী অধিষ্ঠিতা। দেবী পুজো চান। তবে দেবী শর্তও দেন, যে কোনো মন্দিরে নয় উন্মুক্ত আকাশের নিচে তিনি পুজো চান। তিনি আরও বলেন, পুজো শুধুমাত্র নিম্নবর্নের বাগদিরাই করবেন। তারপর দেবী মায়ের কৃপায় পরাক্রমি রাজা হন বলিপালদেব। তাঁর নাম থেকেই এই গ্রামের নাম হয় বালিপাল। আর কেঁদ গাছের জঙ্গল থেকেই দেবীর নাম হয় মা কেঁদুয়াবুড়ি।

 

এবং সেই সময়কাল থেকেই মা একই রকমভাবে পূজিতা হয়ে আসছেন। অন্যান্য পূজোর থেকে অনেকটাই আলাদা এই পুজোর রীতিনীতি। এখানে পুজিতে হওয়া দেবী রক্তের স্বাদ পেতে চান এমনটাই মনে করেন গ্রামের বাসিন্দারা। তাই এখনও নিয়ম মেনে পূজারী হাত চিরে রক্ত দিয়েই মায়ের পুজো সম্পূর্ণ করেন। এই পুজোকে ঘিরে গ্রামবাসীরা অন্যরকম উন্মাদনা অনুভব করেন। আর সেই কারণেই এখনও এলাকায় গৃহস্তের বাড়িতে বা পুজো মণ্ডপগুলিতে আগে মা কেঁদুয়াবুড়িকে পুজো দিয়ে তারপর মণ্ডপে পুজো শুরু হয়। এলাকায় যতগুলি সার্বজনীন বা পারিবারিক পূজা হয়, প্রত্যেকেই মা কেঁদুয়াবুড়ির উদ্দেশ্যে ভেট পাঠিয়ে তবেই পুজো শুরু করেন।

 

এলাকার বাগদি সম্প্রদায়ের মানুষের মূল পূজো এটি হলেও এই পূজার আনন্দে মেতে উঠে আপামর জনসাধারণ। দুর্গাপূজার সময় এইমন্দিরে বিশেষ ভাবে মা কেঁদুয়াবুড়ি-কে দুর্গা রূপে পূজিত করা হয়। এখনও সেই বাগদি সম্প্রদায় পৌরাণিক আচার বিধি মেনে পুজো করে চলেছেন। প্রায় ৩৫টা গ্রামের মানুষেরা, এই মন্দিরে পূজা দিতে আসেন। গ্রামবাসীদের ধর্মীয় বিশ্বাস মা কেন্দুয়া বুড়ি অত্যন্ত জাগ্রত একজন দেবী, তার কাছে আবদার করে বিফল হয়েছেন এমন উদাহরণ আজ পর্যন্ত নেই। তাঁরা নিজেদের মনের কথা মায়ের কাছে স্মরণ করেন। এলাকার বাসিন্দা স্বদেশ বাগ জানালেন, এলাকায় কেন্দুয়াদেবী অত্যন্তত জাগ্রত একটি নাম।

আরও পড়ুন – মহালয়ায় তর্পণে ভিড় ফরাক্কার গান্ধি ঘাটে

বর্তমানে বাগদি সম্প্রদায়ের মানুষের মূল আরাধ্যদেবী হলেও সাধারণ মানুষের কাছে এই পুজোকে ঘিরে উন্মাদনা রয়েছে। সারা বছর নিত্য পূজা হলেও বছরের এই সময় অর্থাৎ দূর্গা পূজার সময়টিতে দেবী দুর্গা হিসাবে পূজিত হন কেঁদুয়াবুড়ি। যেকোনো শুভ কাজের আগে মায়ের থানে পুজো দেন সকলেই। তাঁরা মায়ের কাছে মানতও করেন। এখনও সেই আচার, নিয়ম মেনে মায়ের থানে প্রতি মঙ্গলবার ও শনিবার পুজো হয়। প্রতিবছর বালিপাল গ্রামবাসীবৃন্দ, মা দুর্গার আচার বিধি মেনে পুজো করে চলেছেন।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top