দিল্লিতে প্রথমবার সাফল্য পেয়েই অরবিন্দ কেজরিওয়াল ভেবেছিলেন, আম আদমি পার্টি (আপ) জাতীয় রাজনীতিতেও কংগ্রেসের বদলে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠবে। কেজরিওয়াল নিজে ২০১৪-য় নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে বারাণসীতে প্রার্থী হয়েছিলেন। পুরো ভারতেও শতাধিক আসনে প্রার্থী দিয়েছিল আম আদমি পার্টি। কিন্তু জাতীয় দল হয়ে ওঠার স্বপ্ন চুরমার হয়ে যাওয়ায় কেজরিওয়াল শেষে দিল্লিতেই মন দেন।
আট বছর পর আম আদমি পার্টি দিল্লির পর পাঞ্জাবও দখল করে নেয়ায় বিরোধী শিবির মনে করছে, এবার আপ অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে বিরোধী শিবিরের প্রধানমন্ত্রী পদের মুখ হিসেবে তুলে ধরতে চাইবে। বিশেষত তৃণমূল শিবিরের আশঙ্কা, কেজরিওয়াল এ দৌড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও পেছনে ফেলে দিতে পারেন।
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বিজয়রথ আটকে তৃণমূল দলের নেত্রীকে বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী পদের মুখ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছিল। কিন্তু দিল্লি ও পাঞ্জাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলের নেতা, হিন্দিভাষী, আইআইটি-র ইঞ্জিনিয়ার, প্রাক্তন রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে কেজরিওয়াল মমতাকে পেছনে ফেলে দিতে পারেন।
পাঞ্জাবে আপ-এর কাছে ক্ষমতা হারানোর পাশাপাশি কংগ্রেস উত্তরাখণ্ড, গোয়া, মণিপুরেও বিজেপির সঙ্গে লড়াইয়ে হেওে গেছে। লোকসভা নির্বাচনে প্রায় ২০০টি আসনে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের সরাসরি লড়াই হয়। ২০১৪-র মতো ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনেও কংগ্রেস এর সিংহভাগ আসনে হেরেছিল।
২০১৯-এ ১৮৬টি আসনে কংগ্রেস, বিজেপির মুখোমুখি লড়াই হয়। তাতে কংগ্রেস মাত্র ১৫টি আসন জিতেছিল। রাজ্যওয়ারি বিধানসভা ভোটের ফলও বলছে, আঞ্চলিক দলগুলো বিজেপির সঙ্গে লড়তে পারলেও কংগ্রেস পারছে না।
রাজনৈতিক শিবির মনে করছে, কংগ্রেসের রাজনৈতিক শক্তি দুর্বল হওয়ায় আগামী দিনে আপ, তৃণমূলের মতো দলও যেখানে বিজেপির সঙ্গে কংগ্রেসের লড়াই ছিল, সেখানে পা ফেলবে। আপ ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে, চলতি বছরের শেষে গুজরাত ও হিমাচল প্রদেশে তারা লড়াই করবে। আগামী মাসেই কেজরিওয়াল ও ভগবন্ত মান গুজরাতে গিয়ে ‘তিরঙ্গা যাত্রা’ শুরু করবেন। কংগ্রেস বুঝতে পারছে, আপ আসলে নিজেকে কংগ্রেসের জায়গাতেই বসাতে চাইছে।
বিরোধী দলগুলোর মধ্যে এই পরিসর দখলের লড়াইয়ে বিজেপি মনে করছে, এতে তাদেরই লাভ। তাই আপ-এর পাঞ্জাব জয়েও বিজেপি চিন্তিত নয়। বরং লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস ও আঞ্চলিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে লড়তে থাকলে বিরোধী ভোট ভাগ হবে। এ দলগুলো জোট করলেও বিজেপি প্রধানমন্ত্রী পদের মুখ কে প্রশ্ন তুলে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করবে।
সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অতীতে সব রাজনৈতিক জোটই নির্বাচনের পর তৈরি হয়েছে। তা সে ইউপিএ হোক বা যুক্তফ্রন্ট। ২০২৪-এও ভোটের আগে জোট না হলে, পরে জোটের সম্ভাবনা থাকবে।