উদয়ন গুহ ও একাধিক তৃনমূল নেতাকে খুনের হুমকি, ভাইরাল অডিও ক্লিপ,অভিযুক্ত বিজেপি। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর উদয়ন গুহর উপর আক্রমণের ঘটনা ঘটে। এবার তাকে খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল।উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ ও সিতাইয়ের তৃণমূল বিধায়ক জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া ছাড়াও মন্ত্রী পুত্র সায়ন্তন গুহ কে গুলি করে খুনের হুমকি দেওয়ার অডিও ক্লিপ কে ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ল। এই ঘটনায় তৃণমূলের পক্ষ থেকে অভিযোগের আঙ্গুল তোলা হয়েছে এক বিজেপি কর্মীর বিরুদ্ধে।
একটি অডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী ছাড়াও বিধায়ক জগদীশচন্দ্র বর্মা বসুনিয়া এবং মন্ত্রী পুত্র সায়ন্তন গুহ কেও হুমকি দেওয়া হয়েছে। এনিয়ে অভিযোগের আঙ্গুল বিজেপির বিরুদ্ধে তোলা হলেও পাল্টা বিজেপির পক্ষ থেকে এই ঘটনা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জর্জরিত তৃণমূল এখন সব সময় বিজেপির জুজু দেখছে বলেও পাল্টা অভিযোগ বিজেপি নেতৃত্বের। এদিকে মন্ত্রী, বিধায়ক ও মন্ত্রিপুত্র কে খুনের হুমকির এই ঘটনা নিয়ে দিনহাটা থানায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল।
অবিলম্বে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। বিজেপির দাবি, সবই তৃণমূলের অন্তর্কোন্দল। যার কথা বলা হচ্ছে তিনি আদতে বিজেপি কর্মী নন। এদিকে রবিবার দিনহাটার আমি বাড়িতে তৃণমূলের সভা এবং মিছিলের পর বিজেপির মন্ডল সভাপতির বাড়ি সহ একাধিক বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পুলিশের উপস্থিতিতে সেই ঘটনা ঘটলে পুলিশ বাধা দিলে শাসকদলের কর্মী-সমর্থকদের একটি অংশ পুলিশকে আক্রমণ করে। পুলিশ আক্রান্ত হয় তাদের বিরুদ্ধে স্বপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে।
উদয়ন ঘনিষ্ঠ তেরো জন কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারপরেই ভিডিও ক্লিপে উদয়ন গুহ, মন্ত্রিপুত্র সায়ন্তন ছাড়াও সিতাই কেন্দ্রের বিধায়ক কে খুনের ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও জোর চর্চা শুরু হয়েছে।
ভাইরাল হওয়া ওই অডিও ক্লিপে উল্লেখ রয়েছে, ‘ পরিস্থিতি খুব ভয়াবহ। যারা তৃণমূল আছেন তারা ঘর ছেড়ে পালান। তৃণমূলের ঘর মরবে। অনেকগুলো মরবে। বলে দিস উদয়ন গুহ, তার ছেলে এবং বিধায়ক জগদীশ বাড়ি ছাড়া হবে। যেদিন নমিনেশন জমা হবে সেদিন উদয়ন গুহ ও বসুনিয়ার অবস্থা খুব খারাপ হবে। তৃণমূলের যারা আছে তাদের সাবধানে থাকতে বলিস। রাস্তায় চলাচল বন্ধ করিস।
এদিকে উদয়ন কে হুমকির ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার তৃণমূলের পক্ষ থেকে দিনহাটা থানায় বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। তৃণমূল নেতা দিনহাটা পুরসভার চেয়ারম্যান গৌরীশংকর মাহেশ্বরী, যুব তৃণমূলের পার্থ সাহা, আমির আলম, পার্থ চক্রবর্তী, নৃপেন দেবনাথ, সুদেব কর্মকার প্রমূখদের নেতৃত্বে থানার সামনে বিক্ষোভ দেখানো ছাড়াও প্রতিনিধি দল দিনহাটা থানার আধিকারিকের সাথে দেখা করে অবিলম্বে এই ঘটনার দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবী জানান। এদিন বিক্ষোভ চলাকালীন সেখানে তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা অবিলম্বে ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়। অবিলম্বে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে দলের পক্ষ থেকে দুর্বার আন্দোলনে হুমকি দেওয়া হয়।
তৃণমূল নেতা দিনহাটা পুরসভার চেয়ারম্যান গৌরীশংকর মাহেশ্বরী জানান, আমরা একটা অডিও ক্লিপ পেয়েছি। সেখানে মন্ত্রী উদয়ন গুহ এবং তার ছেলে সায়ন্তনকে কিছু বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতী প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। আমরা সেই অডিও ক্লিপ ও ফোন নম্বর সহ লিখিত অভিযোগ জানালাম। সেই সাথে তাদের নিরাপত্তা বাড়ানো এবং বিজেপি আশ্রিত ওই দুষ্কৃতীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ জানান, বিজেপির যারা দোসর আছে তারা আমাকে অনেকদিন আগেই টার্গেট করেছে খুন করার। এর আগেও আমি আক্রান্ত হয়েছি। এ ধরনের হুমকি দিয়ে আমাকে আটকে রাখতে পারবে না। যারা এ ধরনের হুমকি দিচ্ছে, আক্রমণ করছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তারা কি করে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের কর্মীদের শান্ত রাখা মুশকিল হয়ে যাবে। প্রশাসনকে কঠোর হাতে বিষয়টি দেখতে হবে।
বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি বিধায়ক সুকুমার রায় বলেন,”এই ঘটনা তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জের। রাজ্যের শাসক দলের কঙ্কালসার চেহারা সকলেরই জানা। নিজেদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে ধামাচাপা দিতে বিজেপির ঘরে দোষ চাপিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে তারা।”
দিনহাটা থানার এক পুলিশ আধিকারিক জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।