স্বাস্থ্য – আজকের ব্যস্ত ও প্রযুক্তিনির্ভর জীবনে হেডফোন আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে—বাসে, ট্রেনে, অফিসে এমনকি হাঁটতে হাঁটতেও অনেকেই গান শোনা বা ফোনে কথা বলার জন্য হেডফোন ব্যবহার করেন। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই অভ্যাস ধীরে ধীরে আপনার শরীরের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত এবং দীর্ঘ সময় ধরে হেডফোন ব্যবহারের ফলে শুধু শ্রবণশক্তিই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, আরও নানা রকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
শ্রবণশক্তির অবনতি
ঘন ঘন উচ্চ ভলিউমে হেডফোন ব্যবহারে শ্রবণক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, ৮৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দে দীর্ঘ সময় কান রাখা কানের কোষ ধ্বংস করে দিতে পারে। অনেক তরুণ-তরুণী অল্প বয়সেই ‘নয়েজ-ইনডিউসড হেয়ারিং লস’-এ আক্রান্ত হচ্ছেন।
মস্তিষ্কে বিরূপ প্রভাব
ওয়্যারলেস হেডফোন থেকে নির্গত হতে পারে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ফ্রিকোয়েন্সি (EMF), যা দীর্ঘমেয়াদে মস্তিষ্কের কোষের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেক গবেষক।
কান ও মাথার ব্যথা
অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ হেডফোন পরলে কানে চাপ পড়ে, ফলে হতে পারে কানের ব্যথা, মাথাব্যথা এবং এমনকি কান সংক্রমণও। ইন-ইয়ার হেডফোন ব্যবহারে কানের ভিতরের ত্বকে ঘর্ষণ হয়, যা ইনফেকশনের আশঙ্কা বাড়ায়।
ঘুম ও মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব
ঘুমাতে যাওয়ার আগে হেডফোনে গান শোনা বা ভিডিও দেখা অনেকের অভ্যাস। কিন্তু এতে ঘুমের স্বাভাবিক চক্র ব্যাহত হয়। তাছাড়া দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিন ও হেডফোনে ডুবে থাকা মানসিক চাপ, উদ্বেগ এবং একাকীত্ব বাড়াতে পারে।
৬০/৬০ নিয়ম মানুন: ভলিউম ৬০%-এর বেশি নয়, দিনে সর্বোচ্চ ৬০ মিনিট ব্যবহার।ওভার-দ্য-ইয়ার হেডফোন ইন-ইয়ার হেডফোনের চেয়ে নিরাপদ।
নিয়মিত বিরতি নিন এবং কানের যত্ন নিন।
কানে ব্যথা বা শব্দ শোনার সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, হেডফোন আমাদের জীবনে অনেক সুবিধা দিলেও তার ব্যবহার যেন সীমিত ও সচেতনভাবে হয়। নয়তো, আনন্দময় মুহূর্তের জন্য নেওয়া এই প্রযুক্তিই হতে পারে এক আজীবন যন্ত্রণা।
