ঘৃণার কোন উপযোগিতা নেই গনতান্ত্রিক সমাজে, সুপ্রিম কোর্টও চায়না হেটস্পিস

ঘৃণার কোন উপযোগিতা নেই গনতান্ত্রিক সমাজে, সুপ্রিম কোর্টও চায়না হেটস্পিস

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

ঘৃণার কোন উপযোগিতা নেই গনতান্ত্রিক সমাজে, সুপ্রিম কোর্টও চায়না হেটস্পিস। লেখাটা আগেই লিখেছিলাম একজনকে নিয়ে যিনি সেইসময়ে বেশ কিছু আপত্তিকর কথা বলেছিলেন। তিনি কবির সুমন। বিখ‍্যাত গায়ক। জার্মানির মেয়েকে বিয়ে করে জার্মানে ছিলেন বহুদিন। আর এখন তো হারহামেশাই রাজনৈতিক নেতা থেকে মহাজ্ঞানী মহাজনদের মুখেও তীব্র ঘৃণা মেশানো কটূকাটব‍্য শোনা যায়। তবুও সুমন কিছু বললে তার ইমপ‍্যাক্ট হয় আন্তর্জাতিক। ভারতের শীর্ষ আদালত হেটস্পিসের বিরুদ্ধে কড় নির্দেশ দিয়েছেন।

 

২২ এপ্রিল ২০০৯ যখন কবির সুমন আলিপুর জেলা শাসকের অফিসে তৃণমূলের হয়ে নমিনেশন পত্র জমা দিতে গিয়েছিলেন সেদিন খুব অবাক হয়েছিলাম এই ভেবে যে রাজনীতিটা কি ক্রমাগত অপাংক্তেয় ব্যক্তি ও আবর্জনার ডাস্টবিন হয়ে উঠছে ! খারাপ লেগেছিল। এত খারাপ একটি লোককে কেন মমতা ব্যানার্জীর মত সুরাজনিতিক ট্রাস্ট করলেন। তখন তিনি ফায়ার ব্রান্ড বিরোধী নেত্রী। সততার প্রতীক- এই বিজ্ঞাপনে মুখ ঢেকেছিল বাংলা।

 

খারাপ লাগল সেই দল ও দলনেত্রী তাকে জননেতা বানাতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন। মহান ভোটদাতারা তাকে জিতিয়েও দিলেন। হায়রে বাঙালি ! দ্রুতগতিতে সব ভুলতে পারার অতুলনীয় ক্ষমতা রয়েছে এই জাতির ! তৃণমূল সাংসদ মহিলা মৈত্র ‘এক পয়সার সাংবাদিক ‘ বলায় অসহনীয় লেগেছিল। এই পত্রিকা(একদিন) সেদিন ফুলপেজ পোস্ট এডিটোরিয়াল ছেপে প্রতিবাদের ভাষাকে তীক্ষ্ম ও বিস্তারিত করেছিল।

 

আজ আবার অসহনীয় লাগল আর এক তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদের ঘৃণিত উক্তিতে। বাংলার শিল্প সংষ্কৃতির ধারক বাহক হচ্ছেন গায়ক,শিল্পী ও কলাকুশলিরা। তেমন একজন মানুষকে টেলিফোনে এক টিভি সাংবাদিককে তীব্রতর অপমান করতে দেখে বিস্মিত হওয়াই স্বাভাবিক। আরো অবাক হলাম যে, সাংবাদিককে এবং সব বাঙালিকে গালাগাল করায় বুদ্ধীজীবি মহলকে চুপচাপ হয়ে যেতে দেখে।

 

শুধু সাংবাদিকদের একটু আঁতে ঘা লেগেছে এই যা। তাই তারা সুমনের গালাগালির ভয়েস রেকর্ড আদানপ্রদান করছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। কোন কোন রাজনৈতিক দল একটু ধোয়াঁ দিতে চেষ্টা করছে। গালভরা রসগোল্লা খাওয়া যায়, তাবলে গালভরা গালমন্দ খেতে কারো ভাল লাগেনা ! আমারও লাগেনি। তবে অনেকের মত বিস্মিত হইনি। নব সাংবাদিককুল অবাক হয়েছেন।

 

বিধ্বস্ত হয়েছেন। মর্মাহত হয়েছেন এমন বিপরীত পরিস্থিতির শিকার হয়ে। বিপর্যস্ত হয়েছেন অপমানিত বোধ করে। আমি হলে ওর প্রতিটি গালাগালির পাল্টা দিতাম। যদিও গালি দেওয়া আর গালি খাওয়ার মধ্যে পার্থক্য করার মত বোধ মাতালের থাকেনা। নির্বোধের গোবধে আনন্দ বলে একটি প্রবাদ বাক্য আছে যা তুলনীয় এক্ষেত্রে। কবির শব্দের অর্থ মহান নেতা। কবির এক মহান ধর্মীয় নেতা ছিলেন যিনি সহনশীল ধর্মমতের প্রচার করতেন। আর এই কবির সেই কবির নন। আদতে তিনি সু-মনও নন।

 

তিনি অমার্জিত কবির সুমন। আমরাও বলতে পারি ওমুকের ছেলে সুমন। কিন্তু তাতে তো সুমনের মাকে গালাগাল দেওয়া হবে। গালিটা গিয়ে আঘাত করবে একজন মাকে। আমরা মাতৃজাতির অপমান করতে পারিনা। মা আমাদের কাছে ঈশ্বর। তিনি তো কোন দোষ করেননি। তিনি দশমাস দশদিন পেটে ধারণ করেছেন। সেই মাকে গালি দেওয়া কখনোই নয়।

 

হারামজাদা বললেও সেই মায়ের চরিত্র নিয়ে টানাটানি। সুমনের মা মাসী জ্ঞান না থাকতে পারে। ও মাতৃজাতিকে ‘সেক্স অবজেক্ট’ ভাবতে পারে, আমরা পারিনা। তাই বহুভোগ্য এই ধর্মের ষাড়টিকে কোন নিম্নরূচির শব্দ দিয়ে সম্বোধন করে লাভ নেই। শব্দটির মান মর্যাদা ক্ষুন্ন হবে। ওর নিম্নরূচীর সঙ্গে তুলনা করার মত শব্দ ডিকশনারীতে কম পড়ে যাবে। কবির সুমনের সম্পর্কে প্রথম হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গেছিল এই লেখক। তখন আজকাল পত্রিকায় কাজ করতাম। সুমনকে নিয়ে পত্রিকার ধারাবাহিক লেখাগুলোর কথা এখনো মননে স্মৃতিতে অতি উজ্জ্বল।

আরও পড়ুন – শীত পড়তেই হরিশচন্দ্রপুরে আবারও শেয়ালের হামলা,জখম ৫

বাংলাদেশের গায়িকা সাবিনা ইয়সমিনকে বিয়ে করার খবর জানতে পেরে জার্মানির থেকে ভারতে এসেছিলেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী মারিয়া’। তিনি কলকাতায় এসে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের সিআইডির কাছে। শেষে আলিপুর আদালতে মামলা হয়। মিডিয়ায় আমার স্কুপ ছিল এটি। পরে সব মিডিয়ার ঝাঁপিয়ে পড়া ছিল একটি বড় ব্যাপার। সে এক হৈচৈ করা খবর চলল মাসের পর মাস ধরে। তবে সুমন প্রগতিশীল মানুষ। অসাম্প্রদায়িকতার ছাপ আছে তার জীবনে। হিন্দু হয়েও বিয়ে করেছেন জার্মানির মেয়েকে।

 

জানিনা খ্রীস্টান হয়েছিলেন কিনা। পরে আবার বিয়ে বাংলাদেশের গায়িকা সাবিনা ইয়াসমিনকে। যদিও বিয়ের জন‍্য ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। মমতা ব‍্যানার্জীকে সমর্থন করেন মনেপ্রাণে। তাই সুমনদের নিজেকে বদলানোর প্রয়োজন পড়েনা। আমাদের ধারণা ঘৃণিতের ঘৃণাভরা উক্তির উত্তর ঘৃণা দিয়ে দেওয়া অরূচিকর। কোন ঘৃণার উপযোগিতা গনতান্ত্রিক সমাজে তত্বগতভাবে নেই। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে পুরোপুরি আছে। ।।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top