চট্টগ্রামের বাতাসে পোড়া গন্ধের আর্তনাদ, নিহত ১৬। রক্ত, লাশ আর পোড়া মাংসের গন্ধে ছেয়ে গেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাতাস। সীতাকুণ্ডে ভাটিয়ারীতে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে আগুন লাগার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের চার কর্মীসহ নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ জনে। এছাড়াও আহত হয়েছে প্রায় চার শতাধিক মানুষ। শনিবার (০৪ জুন) রাত ১১টার দিকে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি রোববার সকাল ৬টার পরেও। উল্টো কেমিক্যালপূর্ণ কনটেইনারে বিস্ফোরণ, পানি স্বল্পতাসহ বিপর্যয়ের মুখে পড়ে মাঝরাতে এক প্রকার অসহায় হয়ে পড়ে ফায়ার সার্ভিস।
বিরতি দিয়ে আবার সকালের দিকে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ধীরে ধীরে আগুনের তীব্রতা কমে এলেও সকাল প্রায় ৭টার দিকেও ডিপোর ভেতর কিছু কিছু কন্টেইনারে আগুন জ্বলতে দেখা যায় ক্রমাগতই। আগুন পুরো নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রামের ইউনিটগুলোর পাশাপাশি নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা থেকেও সর্বমোট ২৫টি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রনে কাজ করে যাচ্ছে। এদিকে দিনের আলো ফোটার সাথে সাথেই আগুনের ভয়াবহতা সামনে আসতে শুরু করেছে। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ডিপো থেকে উদ্ধার হওয়া লাশের সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে ।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আগুনের ঘটনায় লাশের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ জনে। নিহতের তালিকায় নাম লিখিয়েছে চার ফায়ার সার্ভিস কর্মীও। কেমিক্যালপূর্ণ কন্টেইনারের একের পর এক বিস্ফোরণ আর পানি স্বল্পতার কারণে আগুন নেভাতে গিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক হোসেন সিকদার জানানা, রাত প্রায় ১১টার দিক থেকে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের বেগ পেতে হয়েছে প্রচুর। কারণ একের পর এক বোমার মতো কন্টেইনার বিস্ফোরিত হচ্ছিলো। তিনি আরও জানান, আগুন প্রায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিলাম আমরা। কিন্তু হঠাৎ করে ৭-৮ টি কনটেইনারে বিস্ফোরণে হয়ে আবার আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। কন্টেইনারে কেমিক্যাল ছিল।
সেই কারণে এতো বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে আগুনে দগ্ধ ও আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে অনেককে ওয়ার্ড ছাড়াও হাসপাতালের মেঝেতেও চিকিৎসকার্য চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মৃতদের স্বজনদের হাহাকার আর আহতদের আর্তনাদে ক্রমশই ভারী হয়ে উঠেছে চমেকের বাতাস। মেডিকেলে আসা রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মেডিকেল কর্তৃপক্ষকে। এদিকে রাতেই মেডিকেলে আসা আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিতে চট্টগ্রামে অবস্থান সকল সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসকদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান জেলার সিভিল সার্জন ইলিয়াছ চৌধুরী।
আরও পড়ুন – আন্তর্জাতিক প্রতারণা চক্রের পর্দা ফাঁস
তিনি বলেন, ‘আহতদের হাসপাতালে একে একে আনা হচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্স থেকে শুরু করে টেম্পু বা সিএনজিচালিত অটোরিকশাতে করেও হতাহতদের আনা হচ্ছে মেডিকেলে। আহত সংখ্যা শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। আহতদের চিকিৎসায় সকল চিকিৎসককে হাসপাতালে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনারা শুধুমাত্র অ্যাপ্রোন পরেই চলে চট্টগ্রাম মেডিকেলে চলে আসুন।’ ছুটিতে থাকা চট্টগ্রামের সকল চিকিৎসকের ছুটি বাতিলের নির্দেশও দেন সিভিল সার্জন। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান চমেকের সকল ইন্টার্ন চিকিৎসকদেরও কাজে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেন।
চমেকের পাশাপাশি চট্টগ্রামের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালসহ আরও কিছু বেসরকারি ক্লিনিকেও চলছে আহতদের চিকিৎসা। চিকিৎসক-নার্সদের সাথে আহতদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন রেড ক্রিসেন্টসহ অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরাও। এদিকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া আহত অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসায় প্রচুর রক্তের প্রয়োজন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, রেড ক্রিসেন্ট আর পুলিশের পক্ষ থেকে বারবার জানানো হয়। মানবিক ডাকে সাড়া দিয়ে রাতের মধ্যেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে স্বেচ্ছা রক্তদাতারা ছুটে আসেন চট্টগ্রাম মেডিকেলে।