চরম আর্থিক প্রতিকূলতাকে দূরে সরিয়ে রাজ্যে উজ্জ্বল শিলিগুড়ির ছাত্রী রিতা হালদার

চরম আর্থিক প্রতিকূলতাকে দূরে সরিয়ে রাজ্যে উজ্জ্বল শিলিগুড়ির ছাত্রী রিতা হালদার

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

চরম আর্থিক প্রতিকূলতাকে দূরে সরিয়ে রাজ্যে উজ্জ্বল শিলিগুড়ির ছাত্রী রিতা হালদার। রাজ্যে সপ্তম স্থানাধিকারি রিতা শহরতলী থেকে দূরে ছোটা ফাঁপড়ি এলাকায় বসবাসের পরও শহরকে রাজ্যের সেরার তালিকায় পৌছে দিয়েছে। মা গীতা হালদার পরিচারিকার কাজ করেন। বাবা বীরেন হালদার গ্রাম থেকে শহরের পথে ঘুরে ফেরি করে দিনভর মাছ বিক্রি করেন।

 

দিন আনি দিন খাই পরিবারের মেয়ে রিতার উচ্চমাধ্যমিকে ৫০০এর মধ্যে প্রাপ্ত নাম্বার ৪৯২। শিলিগুড়ির বুদ্ধ ভারতী স্কুলের কলা বিভাগের এই ছাত্রী আবশ্যিক বিষয় বাংলা ৯৮ ও ইংরেজীতে ৯৪। এছাড়া ভূগোল ৯৮, ইতিহাস ৯৭, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ১০০ পেয়েছে। ঐচ্ছিক বিষয় পরিবেশবিদ্যায় রিতার প্রাপ্ত নাম্বার ৯৯। রিতার মা পরিচারিকা কাজে সকালে বেড়িয়ে পড়েন তাই বাবার জন্য রান্না ও সংসারের যাবতীয় কাজ সেরেই স্কুল ও পড়াশুনো সামাল দিতে হয় রিতাকে।

আরও পড়ুন – প্রকাশিত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের প্রথম দশে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ৯ জন ছাত্র ছাত্রী

মেধাবী ছাত্রীর জানায় প্রথম দিকে এত দূর থেকে স্কুলে যেতে সমস্যা হতো। পরে নবম শ্রেণীতে সবুজ সাথীর সাইকেল মেলায় সুবিধে হয়েছে। বাড়ি থেকে সাইকেল নিয়ে রোজ ৫কিমি পেড়িয়ে স্কুলে পৌছত সে। পরীক্ষার দিন গুলোও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আগামীতে ইংরেজী অনার্স নিয়ে পড়াশুনো করতে চায় মেধাবী ছাত্রী। তার কথায় বাবার জন্য রান্না ও বাড়ির সব কাজের পাশাপাশি মায়ের সঙ্গে পরিচারিকার কাজ করতে যেতে হয়েছে এমনও দিন গিয়েছে। তবে সেসবের আচঁ তার পড়াশুনোর ওপর কখনই পড়তে দেয়নি প্রত্যয়ী ছাত্রী। সে বলে বাড়ির কাজ করতে হতো তাই ভোরবেলা উঠেই পড়োশুনো সেরে নিত।স্কুলেরই ইতিহাস ইংরেজি এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তিনজন শিক্ষিক ছিলেন সকলেই বিনা বেতনে পড়াতো তাকে।

 

তবে মা বাবা ও দাদাকে নিয়ে আর্থিক অনটনে দিন কাটানো পরিবারের মেধাবী এই ছাত্রী চাকুরীমুখী পড়াশুনো করে শিক্ষিকা, অথবা নার্স হয়ে সংসারের হাল ধরতে চায়। শিক্ষিকা হয়ে আর্থিকভাবে দূর্বল ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে চায় ছাত্রী। টিভি ক্যামেরার ঝলকানিতে দরিদ্র পরিবারের দু কামরার ঘর আলোকিত হয়ে উঠলেও বাবার কাছে তখনও অজানা মেয়ের দূর্দান্ত ফলাফল। কারন বাবা মাছ বিক্রি করতে সকালেই বেড়িয়ে পড়েছেন তাই মেয়ের ফলাফল জানা হয়নি। তবে মা গীতা হালদার জানান মেয়ের স্বপ্ন পূরণ করতে চাই। কিন্তু টানাটানির সংসারে একা হাতে আমার পক্ষে মেয়েকে আগামীতে পড়াশুনো করানো সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন – প্রকাশিত উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের প্রথম দশে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার ৯ জন ছাত্র ছাত্রী

স্বামীর দিন প্রতি আয় ২০০-২৫০ টাকা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দুটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে মাস শেষে হাতে আসে ৭০০০টাকা। তবে কন্যাশ্রীর এককালীন টাকা ও বার্ষিক অনুদানে মেয়ের পড়াশুনোর খরচ চলেছে। দিদি (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) বহু কিছু করেছে দিদির ওপর ভরসা রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর দিকে তাকিয়েই মেয়ের স্বপ্নপূরনের আশার আলো দেখছেন পরিচারিকা মা। এদিকে মাধ্যমিকের পর তৃণমূল নেতা মদন ভট্টাচার্য গৌতম দেব আর্থিকভাবে সহায়তা করে।

 

এদিন ফল ঘোষণার পর শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব মেধাবী ছাত্রীর বাড়ি গিয়ে তার এগিয়ে যাওয়ার পথে সবরকমের সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন। শিলিগুড়ি শিক্ষা জেলার তরফে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছাবার্তা তুলে দেওয়া হয় ছাত্রীর হাতে। বুদ্ধ ভারতী স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান-ও পড়াশুনোয় খুবই ভালো। তবে আমাদের স্কুলটা পিছিয়ে পড়া স্কুলের তালিকায় থেকে এসেছে বরাবর। ৮১জন এবারে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল স্কুল থেকে। রিতা গোটা স্কুল ও রাজ্যের গর্ব।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top