Deprecated: version_compare(): Passing null to parameter #2 ($version2) of type string is deprecated in /home/u517603494/domains/shinetv.in/public_html/wp-content/plugins/elementor/core/experiments/manager.php on line 170
চারশো পঞ্চাশ বছরের বাঁকুড়ার 'হট্ নগর কালী' আজো ঐতিহ্য আজো অব্যাহত

চারশো পঞ্চাশ বছরের বাঁকুড়ার ‘হট্ নগর কালী’ আজো ঐতিহ্য আজো অব্যাহত

চারশো পঞ্চাশ বছরের বাঁকুড়ার ‘হট্ নগর কালী’ আজো ঐতিহ্য আজো অব্যাহত

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

চারশো পঞ্চাশ বছরের বাঁকুড়ার ‘হট্ নগর কালী’ আজো ঐতিহ্য আজো অব্যাহত। বাঁকুড়া জেলার ‘কালীক্ষেত্র’ হিসেবে পরিচিত বাঁকুড়ার প্রাচীণ পৌর শহর সোনামুখী। এখানে অসংখ্য কালী পুজো অনুষ্ঠিত হয়। তার মধ্যে অন্যতম ‘হট্ নগর কালী’। সারা বছর এখানে নিত্য পুজো হলেও কার্তিকেয় অমাবস্যায় তিথি মেনে বিশেষ বাৎসরিক পুজো হয়।

 

সোনামুখীর অন্যান্য প্রাচীণ পুজো গুলির মতো হট্ নগর কালীকে নিয়েও অনেক লোককথা প্রচলিত আছে। সবচেয়ে জনপ্রিয় লোক কথা হলো, সাড়ে চারশো বছর আগে সোনামুখী ছিল জঙ্গলাকীর্ণ। আর তাছাড়া সেই সময়কালে বিনিময় প্রথা চালু ছিল। সোনামুখীর তারিণী সূত্রধর নামে এক বৃদ্ধা প্রতিদিন জঙ্গল পথ পেরিয়ে পায়ে হেঁটে মাথায় ঝুড়িতে করে বড়জোড়ার নিরশা গ্রামে চিঁড়ে বিক্রি করতে যেতেন। সেই চিঁড়ে বিক্রি করে পাওয়া ধান নিয়ে তিনি আবারো পায়ে হেঁটেই সোনামুখী ফিরে আসতেন।

 

যাওয়া-আসার পথে পড়তো একটি খাল। বৃদ্ধা তারিণী সূত্রধর বাড়ি ফেরার পথে সেই খালের পাশে খানিক বিশ্রাম নিয়ে সঙ্গে থাকা চিঁড়ে মুড়ি খেতেন। সেখানে প্রায় দিনই লাল পাড় শাড়ি পরা একটি ছোট্ট শ্যামাঙ্গী মেয়ে তার সাথে সোনামুখী আসার জন্য বায়না করতো। বৃদ্ধা প্রতিদিনই কিছু না কিছু বলে ঐ ছোট্ট কন্যা শিশুটিকে বিরত রাখতেন। শেষে এক দিন সে জেদ ধরে বসলো। বৃদ্ধার সাথে সে সোনামুখী যাবেই যাবে। তখন নিরুপায় তারিণী সূত্রধর তাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে সম্মত হলেন। কিছু দূর যাওয়ার পর ঐ ছোট্ট মেয়েটি বলে আমি আর হাঁটতে পারছিনা।

 

আমাকে কোলে নাও। কিন্তু মাথায় আর কোলে ধানের ঝুড়ি আর বস্তা থাকায় বৃদ্ধা তার অসহায়তার কথা বললে, ঐ শ্যামাঙ্গী এক রত্তি মেয়ে তার মাথার ঝুড়িতেই চাপার কথা বলে। নিরুপায় তারিণী সূত্রধর তাই করেন। পরে তিনি বাড়ি ফিরে দেখেন ঐ মেয়ে তো নেই। তার বদলে রয়েছে দু’টি পাথর। ভয় পেয়ে তিনি সেই পাথর দু’টিকে তুলসীতলায় রেখে দেন। সেদিন রাত্রেই বৃদ্ধা তারিণী সূত্রধর স্বপ্নাদেশ পান, সেই শ্যামাঙ্গী ছোট্ট মেয়েটি তাকে মা কালী রূপে পাড়ার আকড় গাছের নিচে পূজোর আদেশ দেন। ভয় পেয়ে পর দিন সকালে ঐ বৃদ্ধা লালবাজার এলাকার মানুষকে সব কথা জানান। সেই সময় ছোঁয়া-ছুঁয়ি আর জাতপাতের ঘটনা এতটাই তীব্র ছিল পুরোহিত পুজো করতে অস্বীকার করেন।

 

গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন পুরোহিত। পরে তিনিও স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজো করতে রাজী হন। স্বপ্নাদেশে স্থানীয় জমিদার গিন্নী কাদম্বরী দেবী মন্দির নির্মাণের জন্য এক খণ্ড জমি ও পুজো পরিচালনার জন্য কিছু জমি দেন। তখন থেকেই এই পুজো এলাকার মানুষ পরিচালনা করছেন। বর্তমানে সুদৃশ্য মন্দির তৈরী হয়েছে। কিন্তু প্রাচীণ সেই প্রথা মেনে আজও সূত্রধররাই কেবল ঘট আনার অধিকারী। এই ঘট সারা বছর মন্দিরে রেখে পুজো করা হয়। পরে বছর বাৎসরিক পুজোর সময় সেই ঘট বিসর্জন দিয়ে নতুন ঘট আনা হয়।

 

‘হট্ নগর কালী’র নামকরণ নিয়ে এলাকায় দ্বিমত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, ‘হট্ যোগে’ কোন এক যোগী এখানেই সিদ্ধিলাভ করেন। তাই এরুপ নামকরণ। আবার কেউ কেউ বলেন, মা কালী হঠাৎ নগরে এসেছিলেন। তাই হট্ নগর কালী নামকরণ হয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মা কালীর নির্দেশে যে আঁকড় গাছের নিচে পাথর দু’টি রাখা হয়েছিল সেই গাছ আজও আছে। আশ্চর্য্যের বিষয় সেই গাছে কোন কাঁটা নেই। এমনকি গাছের আদি মূলের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। আর পাথর দু’টি আজও সেই আঁকড় গাছের নিচে রেখে পুজার্চণা করা হয়।

 

তবে আশ্চর্য্যের বিষয় পাথর দু’টি ঋতুভেদে রং পরিবর্তন হয়। এমনটাই দাবী স্থানীয়দের। বর্তমানে নতুন সুসজ্জিত মন্দির তৈরী করে পুজো হয়। এই মন্দির নির্মাণেও অভিনবত্ত্ব রয়েছে। মূল মন্দিরের সামনে রাখা রয়েছে, তারিণী সূত্রধরের মাথায় ধানের ঝুড়িতে চেপে মা আসছেন তার মূর্তি। অন্য দিকে সিদ্ধপুরুষ হট্ যোগীর মূর্তি। সবার উপরে শিব। এছাড়াও মূল মন্দিরের কুড়ি-পঁচিশ ফুট উপরে রয়েছে একটি পদ্মফুল। যা অনেক দূর থেকে স্পষ্ট দেখা যায়।

আরও পড়ুন – থিম ও সাবেকিয়ানার মেল বন্ধনে নজর কাড়বে ডুয়ার্সের নেতাজী সংঘ

বর্তমানে প্রাচীণ পরম্পরা মেনে মেনে সূত্রধর পরিবারের সদস্য বিপত্তারণ সূত্রধরের ছেলে সুকুমার সূত্রধর যেমন মূর্তি তৈরী করেন, তেমনি বিনোদ ভট্টাচার্য্যের উত্তর পুরুষ গণেশ ভট্টাচার্য্য ও গোপাল ভট্টাচার্য্য এই পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন। পুজো কমিটির সম্পাদক দেবমাল্য হালদার বলেন, হট্ নগর কালীর পুজো উপলক্ষ্যে এলাকা উৎসবের চেহারা নেয়। হট্ নগর কালীকে এখানে গ্রাম্য দেবী হিসেবেই পুজো করা হয়ে থাকে। এবছর সাত লাখ টাকার বাজেট রয়েছে। নানান অনুষ্ঠানের পাশাপাশি প্রথা মেনে ভ্রাতৃদ্বিতীয়ার আগের দিন এখানে কয়েক হাজার মানুষকে খিচুড়ি খাওয়ানো হয় বলেও তিনি জানান।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top