বাজারে যত তুলাইপাঞ্জি চাল বিক্রি হচ্ছে, ততটা উৎপাদনই হয় না, অসাধু চক্রের দাবি চাষি ও গবেষকদের

বাজারে যত তুলাইপাঞ্জি চাল বিক্রি হচ্ছে, ততটা উৎপাদনই হয় না, অসাধু চক্রের দাবি চাষি ও গবেষকদের

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

বাজারে যত তুলাইপাঞ্জি চাল বিক্রি হচ্ছে, ততটা উৎপাদনই হয় না, অসাধু চক্রের দাবি চাষি ও গবেষকদের । রায়গঞ্জ ছাড়িয়ে তুলাইপাঞ্জি চালের সুখ্যাতি ছড়িয়েছে বিশ্বজুড়ে। স্বাদ, গন্ধ ও আকৃতির নিজস্বতা থাকায় এই চালের ভাত খেয়ে তৃপ্ত হয়েছেন বহু মানুষ। কিন্তু আজকাল এর উৎপাদন কমে গেলেও রায়গঞ্জের বাজারে তুলাইপাঞ্জি চাল বিক্রি হচ্ছে দেদারসে। বহু মানুষ কিনছেন এই চাল। কিন্তু তুলাই চাষী এবং গবেষকদের দাবি, এত তুলাইপাঞ্জি চাল উৎপাদনই হয় না এই অঞ্চলে। তাহলে কিভাবে যোগান দেওয়া হচ্ছে এই চাহিদার, প্রশ্ন উঠেছে সর্বত্র। সরকারি আধিকারিকেরাও স্বীকার করে নিয়েছেন তুলাইপাঞ্জি চাল বিক্রি ঘিরে এক অসাধু চক্রের কথা।

 

উত্তর দিনাজপুর জেলার মোহিনীগঞ্জ, ভাটগঞ্জ, ভাটোল, রামপুর, সাহাপুর, বিন্দোলের বিস্তৃত অংশ কুলিক নদীর পাড়ে ভালো মানের তুলাইপাঞ্জি ধান উৎপাদিত হয় বলে জানালেন জেলায় জৈব চাষ আন্দোলনের পথিকৃৎ টিপু মণ্ডল। তিনি বলেন, এই অঞ্চলের মাটি, জলবায়ু তুলাইয়ের মত সুগন্ধি ধানের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। এক বিঘা জমি থেকে ৬ থেকে ৮ কুইন্টাল ধান হয়। এই ধানের চাষ করতে অনেক ধৈর্য্য এবং যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। তাই চাষিভাইয়েরা এর চাষ তেমন একটা করেন না। অথচ চাহিদা থাকায় বাজারে প্রতিবছরই বহুল পরিমাণে তুলাইপাঞ্জি নামে কিছু চাল বিক্রি হচ্ছে।

 

আমাদের ধারনা, ওগুলো তুলাইপাঞ্জি চাল নয়। কারন, এই অঞ্চলে অত বহৎ মাত্রায় এই ধানের উৎপাদনই হয় না।’ বাজারে বিক্রি হওয়া তুলাইপাঞ্জি চাল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ধান বিশেষজ্ঞ অঙ্কন জোয়ারদারও। তিনি বলেন, ‘এই ধানের পরাগমিলন হয় বাতাসের মাধ্যমে। আবহাওয়া অনুকূল না থাকলে এর চাষ হওয়া সম্ভব নয়। ভাদ্র মাসে এর চাষ শুরু হয় এবং অগ্রহায়ণ মাসে এই ধান ঘরে তোলা হয়। কিন্তু সময়ের আগে থেকেই বাজারে বিপুল পরিমাণে তুলাইপাঞ্জি চাল বিক্রি হচ্ছে দেখে সন্দেহ হচ্ছে, এই তুলাইপাঞ্জি কি আদৌ তুলাইপাঞ্জি, নাকি মিশ্রিত।’

 

দীর্ঘদিন ধরে তুলাইপাঞ্জি চালের ভাত খেয়ে অভ্যস্থ রায়গঞ্জের বাসিন্দা অনামিকা বর্মন বলেন, আমরা আগে যে তুলাই পেতাম, এখন তার গুনগত মান হ্রাস পেয়েছে। ভাত তৈরির পর গন্ধও পাইনা। সবমিলিয়ে তুলাই চাল নিয়ে সন্দেহ বাসা বেঁধেছে মন। তাই আজকাল তুলাই ছেড়ে অন্য চালের দিকে মুখ ঘুরিয়েছি।’ চাল বিক্রেতা সুজন দাস বলেন, আমাদের কাছে সারাবছরই ভালো মানের তুলাইপাঞ্জি চালের চাহিদা থাকে। আমরা আমাদের মহাজনদের বলে দিই, ওরাই প্যাকেট করে আমাদেরকে দেয়, আমরা বিক্রি করি।’

 

তবে তুলাইপাঞ্জি চাল নিয়ে অনেক অভিযোগ তিনি পেয়েছেন জানিয়ে দেবীনগর বাজারের এক চাল ব্যবসায়ী বলেন, ভালো তুলাই চাল দিচ্ছি না বলে অনেকেই অভিযোগ করেন, কিন্তু তুলাই বলে আমরা যে চাল পাই, সেই চালই বিক্রি করি।’ তুলাইপাঞ্জি চাল নিয়ে গবেষকদের অভিযোগ গ্রাম গঞ্জের বিভিন্ন ছোট ছোট কারখানায় চাল কাটিং করে, সুগন্ধি মিশিয়ে তুলাই চাল তৈরি করা হচ্ছে।

 

বাড়তি চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে অসাধু চক্রের লোকেরা এই কাজ করছে। তুলাইপাঞ্জি চাল অসাধু চক্রের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন রায়গঞ্জ মহকুমা সহ কৃষি অধিকর্তা (খামার) অজিত সরকার। তিনি বলেন, ‘এখন তো পালিশ চাল আসছে। বাড়তি চাহিদা পূরণ করতে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষকে ঠকিয়ে চলেছে বলে অভিযোগ পেয়েছি।’ এমন অসাধু চক্রের ফলে একসময় তুলাইপাঞ্জি চাল তার নিজস্ব বাজার হারিয়ে ফেলবে বলেই ধারনা বিশেষজ্ঞদের।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top