জলপাইগুড়ি – জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটা ব্লকে অবশেষে খানিকটা স্বস্তি ফিরেছে। গত ২৭শে আগস্ট স্কুল পড়ুয়াকে আক্রমণ করে হত্যার মর্মান্তিক ঘটনার পর বন দপ্তরের পাতা খাঁচায় ধরা পড়েছে একটি চিতাবাঘ। তবে স্থানীয়দের মনে আতঙ্ক এখনও পুরোপুরি কাটেনি।
মঙ্গলবার সকালে আংরাভাষা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের কলাবাড়ি চা বাগানের ১৭ নম্বর সেকশনে পাতা খাঁচায় চিতাবাঘটি ধরা পড়ে। এই খাঁচাটি কয়েকদিন আগে বন দপ্তরের পক্ষ থেকে বসানো হয়েছিল চিতাবাঘ ধরার জন্য। সকালে স্থানীয় যুবকরা ছাগল আনতে এসে দেখতে পান খাঁচার ভেতরে বাঘটি আটকে রয়েছে।
যুবকেরা দ্রুত বন দপ্তরে খবর দেন। বনকর্মীরা এসে চিতাবাঘটিকে খাঁচাসহ উদ্ধার করে নিয়ে যান। বন দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাঘটিকে নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তর করা হয়েছে এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।
গত কয়েক মাস ধরে ডুয়ার্সের কলাবাড়ি, উত্তর শালবাড়ি, মঙ্গলকাটা এবং তোতাপাড়া এলাকায় চিতাবাঘের হামলায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। প্রায়ই চা বাগানের শ্রমিকরা পাতা তুলতে গিয়ে আক্রমণের শিকার হচ্ছেন।
এই সময়ের মধ্যে দুটি শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় আরও ভয় ছড়িয়েছে। চলন্ত বাইকের ওপর চিতাবাঘের আক্রমণের ঘটনাও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বাড়িয়েছে। বন দপ্তরের তরফে একাধিকবার সতর্কতা জারি করা হলেও ভয় কাটেনি।
গ্রামবাসীদের দাবি, এই অঞ্চলে চিতাবাঘের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। একটি চিতাবাঘ ধরা পড়লেও বাকি বাঘগুলির আতঙ্ক এখনও রয়ে গেছে। তাঁরা চান দ্রুত আরও চিতাবাঘ ধরা হোক।
চা বাগানের শ্রমিকরা জানিয়েছেন, প্রতিদিন সকালে পাতা তুলতে যাওয়ার সময় তাঁদের ভয় কাজ করে। অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন কারণ জীবিকার জন্য চা বাগানে যাওয়া ছাড়া তাঁদের উপায় নেই।
বন দপ্তর জানিয়েছে, তারা আপাতত ওই এলাকার খাঁচা সরাচ্ছে না। বরং নজরদারি আরও জোরদার করা হয়েছে, যাতে অন্য কোনো চিতাবাঘ লুকিয়ে থাকলে তার খোঁজ দ্রুত পাওয়া যায়।
এছাড়াও এলাকায় অতিরিক্ত বনকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। বন দপ্তরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও গ্রামবাসীদের সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। চা বাগান ও আশেপাশের এলাকায় মাইকিং করে মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে।
এদিকে, শিশুদের স্কুল যাতায়াত নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। অনেক অভিভাবক তাঁদের সন্তানদের একা স্কুলে পাঠাতে চাইছেন না। স্কুল কর্তৃপক্ষও নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানোর কথা ভাবছে।
চা বাগানের শ্রমিক ইউনিয়নও বন দপ্তর ও প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার দাবি জানিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, চিতাবাঘ ধরার ক্ষেত্রে এখনো পর্যাপ্ত উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
স্থানীয়রা মনে করছেন, বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়ার কারণে চিতাবাঘ জনবসতিতে প্রবেশ করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্যের অভাবও এই প্রবেশের অন্যতম কারণ।
বন দপ্তর জানিয়েছে, চিতাবাঘের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য ড্রোন ব্যবহারের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে দ্রুত চিতাবাঘের অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
যদিও একটি চিতাবাঘ ধরা পড়েছে, পরিস্থিতি এখনও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়নি। গ্রামবাসীরা চান দ্রুত সব চিতাবাঘকে আটক করে এলাকায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। বন দপ্তর আশ্বাস দিয়েছে যে তারা অবিরাম তৎপর থাকবে এবং প্রয়োজনে আরও খাঁচা বসানো হবে।
