হুগলি – আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই এসআইআর (Statewide Intensive Revision) ইস্যুতে শাসক-বিরোধী দ্বন্দ্ব জোরদার হয়েছে। এই উত্তপ্ত রাজনৈতিক আবহের মধ্যেই হুগলির চুঁচুড়ায় গঙ্গার পাড়ে রূপনগর মাঠ থেকে উদ্ধার হল ভোটার তালিকা। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা এলাকায়।
বুধবার বিকেলে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে নদীর পাড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ভোটার তালিকার কাগজগুলি দেখতে পান। কে বা কারা ওই ভোটার তালিকা সেখানে ফেলে গেছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ঘটনাস্থল হুগলি জেলা শাসকের দপ্তর থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনিক নিরাপত্তা নিয়েও।
স্থানীয়দের দাবি, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তাঁদের আশঙ্কা, নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা উদ্ধার হওয়া কোনও বড়সড় ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত হতে পারে।
ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। বিজেপি নেতা স্বপন পাল বলেছেন, “ভোটার তালিকাগুলি কোন সালের তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এসআইআর-এর আবহে কেন এমন গুরুত্বপূর্ণ নথি ফেলে দেওয়া হল, তা প্রশাসনের দেখা উচিত।”
অন্যদিকে, শাসক তৃণমূলও পুলিশের তদন্তের দাবিতে সরব হয়েছে। তাদের বক্তব্য, “ভোটার তালিকার মতো সরকারি নথি কীভাবে গঙ্গার ধারে পড়ল, তা স্পষ্টভাবে জানানো হোক। দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
এদিকে, এসআইআর ইস্যু নিয়েও মুখোমুখি দুই রাজনৈতিক দল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, একজনও বৈধ ভোটারের নাম বাদ পড়লে আন্দোলনে নামবে দল। তাঁরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “যদি ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়, তাহলে ১ লাখ মানুষকে নিয়ে দিল্লিতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করা হবে।”
তৃণমূলের তরফে আরও দাবি করা হয়েছে, মাত্র পাঁচ মাসে আট কোটি ভোটারের তথ্য যাচাই করা অসম্ভব। কোন ভোটার তালিকার ভিত্তিতে এই এসআইআর হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তাই এই প্রক্রিয়া আপাতত বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছে দলটি।
তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “ওঁদের (বিজেপি) নেতারাই তো বলছেন, এসআইআরে নাম বাদ গেলে মতুয়ারা বিজেপিকে ছেড়ে কথা বলবে না। আগে নিজেদের ঘর সামলাক বিজেপি, তারপর অন্যের দিকে আঙুল তুলুক।”
তিনি আরও দাবি করেন, “এসআইআর হোক বা না হোক, ২৫০-র বেশি আসন নিয়ে চতুর্থবার মুখ্যমন্ত্রী হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এটা এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা।”
এই ঘটনার পর প্রশাসনিক মহলে শুরু হয়েছে তৎপরতা। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ভোটার তালিকাগুলি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় তদন্ত শুরু হয়েছে।
নির্বাচনের আগে এই ঘটনায় ভোটার তথ্য সুরক্ষা ও স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ভোটের আগে এই ধরনের ঘটনা রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
হুগলির গঙ্গার পাড়ের ঘটনাটি শুধু স্থানীয় নয়, বরং রাজ্যজুড়ে রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। একদিকে বিরোধীদের অভিযোগ প্রশাসনিক গাফিলতির, অন্যদিকে শাসক শিবির বলছে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে।
এখন নজর প্রশাসনের দিকে—কে বা কারা এই গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথি ফেলে গেল, এবং এর পেছনে উদ্দেশ্য কী, তার উত্তরই হয়তো নির্ধারণ করবে আগামী রাজনৈতিক বিতর্কের দিকনির্দেশ।
