চোখের জলে মিশে গেল দুই বাংলার মানুষ

চোখের জলে মিশে গেল দুই বাংলার মানুষ

Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
WhatsApp
Print
Telegram

চোখের জলে মিশে গেল দুই বাংলার মানুষ। বুকের ভেতরে রয়েছে চাপা কান্না।দেশভাগের সময় তৈরি হওয়া দু’দেশের সীমারেখা বাড়িয়ে দিয়েছে দূরত্ব। তাই আজও তারা ছেড়ে থাকতে পারে না একে অপরকে। তাই বছরের এই সময়ে কাঁটাতার ঘেঁষে মহামিলন মেলায় উপস্থিত হন ভারত, বাংলাদেশের বহু মানুষ। এতে শিশু, কিশোর, যুবক, যুবতীর পাশাপাশি প্রিয়জনের টানে ছুটে আসে বহু বয়স্ক বৃদ্ধ, বৃদ্ধা।সবাই কার্যত চোখের জলে মিশে গিয়েছে।মিলনের দৃশ্য দেখে কে ভারতীয়,আর কে বাংলাদেশী,সেগুলি কিছুই বোঝা যাবে না।

 

প্রসঙ্গত,উত্তর দিনাজপুর জেলার একটা বড় অংশ ঘেঁষে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাজনে এই সীমানা রেখার অবস্থান ঠিক হয়। তখনই বহু মানুষ ও তাদের প্রিয়জনের মধ্যে বিচ্ছেদ তৈরি হয়।কেউ থাকেন এই দেশে,কেউ বা প্রতিবেশী দেশে।কিন্তু নাড়ীর টান বলে কথা, প্রতি বছর নিয়ম করে দুপাড়ে বসবাসকারী আত্মীয়রা ছুটে চলে আসে কাঁটাতারের বেড়ার পাশে। ওপারের আত্মীয়দের পরিচয় বাংলাদেশী। এপারের বাসিন্দাদের পরিচয় ভারতীয়। অথচ তারা একে অপরের সাথে আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ।

 

সীমান্ত লাগোয়া বীরগ্রামের বাসিন্দা জয় বমন বলেন, বছর ২০ আগে এই মিহামিলন মেলা শুরুহয়। এরপর প্রতি বছর এই মেলা আয়োজিত হলেও করোনা আবহে বিগত ২ বছর এই মেলার অনুমতি দেয়নি সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনী। এবছর প্রথম দিকে সরকারি অনুমতি না পাওয়ায় কিছুটা অস্বস্তি তৈরি হলেও শেষ বিকেলে অনুমতি পেতেই কাঁটাতারের বেড়া ঘেঁষে মিলিত হন কয়েক লক্ষ মানুষ। স্থানীয়দের কাছে এই মেলা শুধু মহামিলন মেলাই নয়, আত্মীয় পরিজনদের চোখের সামনে পেয়েও জড়িয়ে ধরতে না পেরে শুরু হয় কান্নাকাটি।

আরও পড়ুন – সুন্দরবন পরিদর্শন নিয়ে প্রচার চায়নি তৃণমূল 

তাই একে কান্দাকান্দির মেলাও বলে। মেলায় আসা বৃদ্ধা মামুদা বিবি বলেন, ওপারে আমার ৬ ভাইয়ের বাস। বিয়ে হয়ে এপারে এলেও মন রয়েছে ওপারের ভাইদের কাছে। কতদিন বাঁচব জানি না, তাই দেখা করতে এসেছি। কিশোর অতুল বর্মন এসেছে শিলিগুড়ি থেকে। বাবা মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সে বলে, ওপার বাংলায় দাদু বাড়ি রয়েছে। তাদের কখনও চোখে দেখিনি। আজ দাদু বাড়ির আত্মীয় দের দেখতে এসেছি। রায়গঞ্জ থেকে এসেছেন প্রবীণ প্রফুল্ল সরকার। তিনি বলেন, সকাল ৯টা নাগাদ এখানে এসেছি। এখন দুপুর ১২টা বাজে। বিএসএফ ক্যাম্প থেকে অনুমতি না পাওয়ায় এখনও সীমান্তে যেতে পারিনি।

 

এদিন সীমান্ত লাগোয়া গ্রাম গুলোতে সকাল থেকে ভিড় জমাতে শুরু করেন কয়েক লক্ষ মানুষ। তৈরি হয় তীব্র যানজট। পথে, ঘাটে, জমিতে বসে থাকতে দেখা যায় বহু মানুষকে। রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার সুপার মহম্মদ সানা আখতার জানান, এদিন রায়গঞ্জ ও হেমতাবাদের সীমান্ত এলাকায় শান্তিপূর্ণ ভাবেই মহামিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এদিনের মেলায় এপার থেকে ওপারে গেল আপেল, কম্বল, বিস্কুট, হাতে বানানো নাড়ু, জামা, কাপড় প্রভৃতি। তেমনি ওপার থেকেও এল ইলিশ, নগদ অর্থ সহ নানান উপহার। ২ বছরের ব্যবধানে আত্মীয়রা একে অপরকে দেখতে পেয়ে যেমন খুশিতে মেতে উঠল, তেমনি দিনশেষে আবার বিচ্ছেদের বেদনা বুকে তারা ফিরে চলল নিজের ঘরে। পিছনে পড়ে রইলো এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস।

RECOMMENDED FOR YOU.....

Scroll to Top