জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা নয়, ঐতিহ্য মেনে দেবীতলার রথে চড়েন রাধা-গোবিন্দ। ৭৫ বছরের প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে রায়গঞ্জ দেবীনগরের দেবীতলার রথযাত্রায় রথে চড়েন রাধা, গোবিন্দের বিগ্রহ। এই প্রাচীন ঐতিহ্য বাহী রথ নিয়ে রায়গঞ্জ দেবীনগরের দেবীতলার বাসিন্দাদের মধ্যে প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। রঙ করে কাঠের রথকে সাজিয়ে তোলার কাজ শুধু হয়েছে বিগত দুই দিন ধরে। মেরামতিও হয়েছে পুরোনো রথটির।
এদিন সকালে দেবীতলার নাটবাড়ির প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা গেল এলাকার বয়স্ক মানুষেরা রথ যে পথে ঘুরবে, সেই পথ পরিস্কারের ভাবনায় কাজ করছেন। জমে ওঠা আগাছা কাটতে চলছে চিন্তা ভাবনা। তারাই জানালেন, নিতাই গৌর সংঘের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত এই রথযাত্রায় রথে চড়েন রাধা, গোবিন্দের বিগ্রহ। স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এটাই আমাদের পূর্ব বাংলার পাবনা জেলার মানুষদের বয়ে নিয়ে আসা ঐতিহ্য।
আরও পড়ুন – একদিনের উড়িষ্যা সফরে গেলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ
দেবীতলার বাসিন্দা শ্যামাপদ সাহা বলেন, এই রথযাত্রা ভারতের স্বাধীনতার বহু আগের। কমপক্ষে ৭৫ বছরের পুরোনো। প্রতিবছর এখানে রথের নিয়ম মেনে সোজা রথ ও উল্টোরথ অনুষ্ঠিত হয়। বর্তমানে যে কাঠের রথটির চাকা ঘুরছে, সেটিও ৪০ বছরের পুরোনো। কিন্তু অর্থের অভাবে সামান্য মেরামতি করে সেটার চাকা ঘোরানো হবে। নাটমন্দির তৈরি করতে প্রচুর অর্থ খরচ হয়ে যাওয়ায়, এবার আর নতুন রথ তৈরি করা সম্ভব হয়নি।
নাটমন্দিরের পাশেই বা্রি লক্ষী নারায়ন প্রামানিকের। তিনি বলেন, জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রা নয়, এখানে রথের সওয়ারি হন রাধা ও গোবিন্দ। এই রাধা, গোবিন্দের বিগ্রহ বাংলাদেশের পাবনা জেলা থেকে আনা হয়েছিল। রীতি মেনে এখানে রথে পান, কলা প্রসাদ দেন ভক্তরা। নটকা, জিলিপি কিনে নিয়ে যান বহু মানুষ। সবমিলিয়ে রথে প্রায় হাজার দুয়েক লোকের সমাগম হয় এখানে। এবারেও রথের চাকা গড়াবে। করোনা আবহ দূরে সরিয়ে রেখে বহু মানুষ মেতে উঠবে রাধা, গোবিন্দের চরণে।
স্থানীয় নিতাই গৌর সংঘের সভাপতি গৌর গোপাল সাহা বলেন, এই রথযাত্রা বহু পুরোনো। এখানে রথের দিন ও উল্টো রথের দিন মেলা বসে। মন্দির কমিটির ৫৪ শতক জায়গায় নাটমন্দিরকে কেন্দ্র করে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এই রথের বৈশিষ্ট্য হল, এখানে রাধা গোবিন্দ রথে চড়েন। বীরনগরের বাসিন্দা সুধীর চন্দ্র চক্রবর্তীর বাড়িতে সারা বছর বিগ্রহ থাকলেও রথের আগে তাদেরকে নিয়ে আসা হয়। স্থানীয় বাসিন্দার আবেগ দিয়ে এই রথযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।
বহু প্রাচীন এই রথযাত্রা ভারতের স্বাধীনতার বহু আগের। কমপক্ষে ৭৫ বছরের পুরোনো বলে দাবি স্থানীয়দের। প্রতিবছর এখানে রথের দিন মেলায় উপস্থিত হন হাজার হাজার পূর্নার্থী। কিন্তু যেভাবে তাপমাত্রা বাড়ছে, তাতে রথের দিন আকাশ কেমন থাকে, কতটা বৃষ্টি হয়, সেই আশঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।