জঙ্গলে ভূতের আতঙ্ক, নেই বনরক্ষী। জঙ্গলে রয়েছে ভূত এরকমই আতঙ্ক থেকে জঙ্গলে রাতে ক্যাম্পে থাকতে পারেননা একমাত্র বনরক্ষী । আর সেই সুযোগে দেদার চুরি হচ্ছে জঙ্গলের গাছ। জঙ্গলও হারাচ্ছে তার নিজস্ব অস্তিত্ব। এই ঘটনা বাঁকুড়ার উত্তর বন বিভাগের মেজিয়া বনাঞ্চলের মানা জঙ্গলের । এক সময় এই জঙ্গলে শাল, সেগুন, চন্দন সহ বিভিন্ন রকম দামি দামি গাছ ছিল । রাতের অন্ধকারে একের পর এক মূল্যবান গাছ কেটে ফাঁকা করে দিচ্ছে কাঠ মাফিয়ারা। পাচারকারীদের দৌরাত্মে ১৩০ হেক্টর জমির সবুজ প্রায় ধ্বংস হতে চলেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ জঙ্গলে কোনো বনরক্ষী না থাকায় চোরের উৎপাত বেড়েছে। বাঁকুড়ার মেজিয়া ব্লকের একটি ছোট নদী লাগোয়া এলাকায় রয়েছে সংরক্ষিত মানার বনাঞ্চল। সেই বনাঞ্চলই এবার দুস্কৃতি দৌরাত্মে অস্তিত্বের সংকটে। কারণ একটাই – রাতে ভূতের ভয়। স্থানীয়দের কেউ কেউ বলেন রাত হলেই নাকি অশরীরী আত্মারা ঘুরে বেড়ায় এই জঙ্গলে। বিভিন্ন রকম অপার্থিব শব্দও নাকি ভেসে বেড়ায় নিশুতি রাতে। স্থানীয় ও বন দফতর সূত্রে জানা গেছে একসময় এই জঙ্গল রক্ষার জন্য দু’জন ফরেস্ট গার্ড মোতায়েন ছিলেন।
এরমধ্যে একজন অবসর নেন কয়েক মাস আগে। আর এরপরই আরেক ফরেস্ট গার্ডের মনের মধ্যে চেপে বসে ভূতের আতঙ্ক। অবস্থা এমন হয় যে ভূতের আতঙ্কে নিরুপায় হয়ে সংরক্ষিত ওই জঙ্গল ছেড়ে তিনি ডিউটি করতে শুরু করেন মেজিয়া রেঞ্জ অফিসে। অগত্যা সংরক্ষিত সেই জঙ্গল হয়ে পড়ে অরক্ষিত। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই দুস্কৃতি দৌরাত্ম শুরু হয় এই সংরক্ষিত জঙ্গলে। রাতের অন্ধকারে বহু মূল্যবান গাছ কেটে নিয়ে যেতে থাকে দুস্কৃতিরা। ক্রমশ ফাঁকা হতে থাকে মেজিয়া শিল্পাঞ্চলের ফুসফুস। বন দফতরের দাবি তাঁরা মাঝেমধ্যে ওই জঙ্গলে গাছ চুরি রুখতে হানা দেন। মাঝেমধ্যে চোরাই কাঠ উদ্ধারও হয়।
কিন্তু নানা কারনে জঙ্গল রক্ষার স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা করা যায় না। ওই বনকর্মী শ্যামাপদ মান্ডি গাছ চুরি যাওয়ার ঘটনা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, এখানে আমি একা ছিলাম তাই ভূতের একটু আতঙ্ক তো ছিলই। আরো কর্মী নিয়োগ করতে আমি উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে বললেও তারা কোনও ব্যবস্থা করেনি। অপর দিকে মেজিয়ার রেঞ্জ অফিসার দুর্গাদাস হাঁসদা বলেন, রাতে একা কেউই জঙ্গল পাহারা দিতে পারে না। ভুত বলে কোনো কিছুর কথা আমি শুনিনি আর এ নিয়ে কেউ কিছু বলেওনি। কিছুদিন আগে দুস্কৃতিরা কয়েকটি সেগুন গাছ কেটে পাচার করার চেষ্টা করছিল। সেগুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
আর ও পড়ুন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে জমি জবরদখল,তোলাবাজির অভিযোগ
আমি কর্মী বাড়ানোর জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছি। বাঁকুড়া জেলা বিজ্ঞান মঞ্চের মেজিয়া বিজ্ঞান কেন্দ্রের সভাপতি স্বরূপ নারাণ মুখার্জি জানান যে, কাঠ মাফিয়ারাই ভুত সেজে ভয় দেখিয়ে থাকতে পারে। কারণ তারা জানে ভুতের ভয় দেখিয়ে বন কর্মীদের তাড়াতে পারলে বড়ো বড়ো গাছ কেটে পাচার করা সুবিধা হবে। অপর দিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, একবিংশ শতকে দাঁড়িয়েও স্রেফ কুসংস্কারের বলি হয়ে আর কতদিন এভাবে ক্রমশ নিজের অস্তিত্ব হারাতে থাকবে সংরক্ষিত এই বনাঞ্চল? উত্তর যদিও জানা নেই কারো।